মাথা নাড়লো হুগো। কি যে বলো। জীবনে এই প্রথম আসামী ধরার সুযোগ পেয়েছি। সমাজের একটা উপকার করলাম। এ-তো আমার ভাগ্য। তোমাদের মতো সাহসী ছেলে যদি কিছু আমাদের এখানেও থাকতো, অনেক ভালো হতো। ধন্যবাদ বিনিময় চললো কিছুক্ষণ। তারপর চলে গেল জেলে দুজন।
তিন গোয়েন্দা আর সিনর স্টেফানোর মুখে ঘটনার বৃত্তান্ত শুনলেন থানার ইনচার্জ। মেকসিকো সিটি আর অকজাকায় লোকদুটোকে খুঁজছে পুলিশ, একথা শুনে টেলিফোন করলেন দুটো শহরের পুলিশকে। তারপর রিসিভার নামিয়ে রেখে ফিরে এলেন হাসিমুখে।
তোমাদের জন্যে একটা সুখবর আছে, বললেন তিনি। দলের নেতা হুবার্ট রিগোকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে মেকসিকো সিটিতে।
হুবার্ট রিগো! তিক্তকণ্ঠে বললেন স্টেফানো। এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম, ওরা এতো কিছু জানলো কার কাছে। আমার কথা, ছুরিটার কথা। লোকটা আমার গাইউ ছিলো। বহু বছর সঙ্গে থেকেছে।
আরও খবর আছে, অফিসার জানালেন। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে বললেন, মিস্টার সাইমনের পাইলটকে যে কিডন্যাপ করেছিলো, তাকেও ধরা হয়েছে। ওর দলের লোকেরাই আমেরিকান সেজে ছদ্মনামে ফোন করেছিলো পুলিশ আর পেপারকে, সিনর স্টেফানোর মৃত্যুর মিথ্যে সংবাদ দিয়েছিলো।
যাক, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। তবে আরও দুজন বাকি রয়ে গেছে। তিন ভ্যাকুয়ামোর একজন ধরা পড়েছে, হাজতের দিকে দেখালো সে। বাকি রয়েছে…
ধরবো। যাবে কোথায়?
অফিসারের কাছে শুনলো ওরা, পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছে হুবার্ট রিগো। এক কোটিপতি নাকি তাকে লোভ দেখিয়েছিলো, ছুরিটা বের করে দিতে পারলে অনেক টাকা দেবে। চুরি করে কিংবা অন্যভাবে আরও প্রাচীন জিনিস জোগাড় করে ওই লোককে দিয়েছে রিগো। অ্যাজটেকদের জিনিস সংগ্রহের নেশা কোটিপতি লোকটার।
সিনর স্টেফানোকে নিয়ে থানা থেকে বেরোলো তিন গোয়েন্দা। ফিরে এলো হোটেলে। প্রথমেই গোসল সেরে নিলো সবাই। খাওয়া শেষ করলো। তারপর বিশ্রাম নিতে এলো। বিছানায় শুয়ে পড়লেন আরকিওলজিস্ট। কেন তাকে খুঁজতে এসেছে এতোক্ষণে জানানোর সুযোগ পেলো ছেলেরা। সংক্ষেপে সব জানানো হলো তাকে।
মন দিয়ে শুনলেন স্টেফানো। ছেলেরা তাদের কথা শেষ করলে বললেন, এবার তাহলে আমার গল্প শোনো। মাস দুই আগে একদিনের কথা। বিরক্ত করে তুলেছিলো আমাকে রিগো। তাকে বরখাস্ত করলাম। হোটেলের ঘরে বসে ফোনে আলাপ করছি রেডফোর্ডের সঙ্গে, হঠাৎ দেখি জানালা দিয়ে আড়িপেতে আমার কথা শুনছে রিগো। আমার মনে হয় সেদিনই ছুরিটার কথা শুনে ফেলেছিলো সে, চুরি করার মতলব এটেছিলো। প্রায়, হাজার বছরের পুরানো জিনিস ওটা। অনেক টাকার জিনিস।
দম নেয়ার জন্যে তিনি থামলে কিশোর বললো, আপনি মিস্টার রেডফোর্ডকে ধার দিয়েছিলেন ছুরিটা। আপনারা দুজন আর রিগো বাদে কি আর কেউ জানতো এটা?
মনে হয় না। জানার কোনো উপায় ছিলো না। পাওয়ার পর আর কাউকে বলিনি আমি।
মুসা জিজ্ঞেস করলো, ছুরিটা দেখতে কেমন?
খুব সুন্দর। আগ্নেয় শিলায় তৈরি ফলাটা। এখনও অনেক ধার। সোনার তৈরি বাট। তাতে ডানালা সাপের ছবি খোদাই করা। নীলকান্তমণি আর চুনি, পাথর খচিত।
তিন বছর আগে পুরানো অস্ত্র জোগাড় করতে এদেশে এসেছিলো রেডফোর্ড। আমার সংগ্রহ দেখলো। অনুরোধ করতে লাগলো ছুরিটা দেয়ার জন্যে। বিক্রি করতে রাজি হলাম না আমি। বললাম, জিনিসটা আমার দেশের সম্পত্তি। স্টেট মিউজিয়ামে দিয়ে দেবো। অবশেষে অনেক চাপাচাপি করে আমাকে রাজি করালো, কিছুদিনের জন্যে ধার দিতে। আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। পাঁচ বছরের জন্যে ছুরিটা তার সংগ্রহে রাখতে চেয়েছিলো। দিয়ে দিলাম।
ছুরিটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন মিস্টার রেডফোর্ড, কিশোর জিজ্ঞেস করলো। জানেন আপনি?
না। বলেনি। আমিও শোনার দরকার মনে করিনি। বের করতে পারেনি এখনও কেউ?
মনে হয় না।
মুখ কালো করে ফেললেন স্টেফানো। দেয়াই উচিত হয়নি। বের করতে না পারলে… কিন্তু কি করবো? এমন চাপাচাপি শুরু করলো!
ভাববেন না, কিশোর বললো। অন্য কারো হাতে চলে না গিয়ে থাকলে ঠিকই বের করে ফেলবো।
হ্যাঁ, হেসে বললো রবিন। লুকানো জিনিস বের করতে ওস্তাদ আমাদের কিশোর পাশা। ধরে নিতে পারেন, পেয়ে গেছেন। আচ্ছা, আরেকটা কথা এসবের মধ্যে পিকো আলভারো এলো কিভাবে? উইলে তার নামও রয়েছে।
এক মুহূর্ত ভাবলেন আরকিওলজিস্ট। বললেন, জিনিসটার কথা গোপন রেখে একজন সাক্ষি রাখতে চেয়েছিলাম। আমার আর রেডফোর্ডের মাঝে যে একটা চুক্তি হয়েছে একথাই শুধু জানবে তৃতীয় লোকটি, কি জিনিসের ব্যাপারে তা জানানো হবে না। রেডফোর্ডের কিছু হলে আমাকে চিনিয়ে দেয়ার জন্যেও একজনকে দরকার। আলভারোকে সেই তৃতীয় লোক হিসেবে বেছে নিলাম দুজনেই। রেডফোর্ড মারা গেছে শুনে, সত্যি, খুব কষ্ট লাগছে, দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্টেফানো। আমার সঙ্গে বেঈমানী করেনি। গোপন রেখেছে ছুরির কথা। তোমাদের সঙ্গে রকি বীচে যাবো আমি। ছুরিটা আনার জন্যে। ওটা খোঁজার ব্যাপারেও তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবো।
খুব ভালো হয় তাহলে, কিশোর বললো। মিস্টার রেডফোর্ডের বাড়িতে ছবির যেসব স্লাইড পেয়েছে ওরা, জানালো সিনর স্টেফানোক। একটা ছবি ভোলা হয়েছে একটা বাগানে।
বুঝতে পেরেছি। মেকসিকো সিটির বাইরে, একটা কটেজ ভাড়া নিয়েছিলো। রেডফোর্ড। ওখানে তোলা হয়েছে।