অচেনা কণ্ঠস্বর। তোমাকে আর সিনর স্টেফানোকে ছাড়া হবে না কিছুতেই। তবে অ্যাজটেক ড্যাগারটা কোথায় আছে যদি বলো, তাহলে ছেড়ে দিতেও পারি।
জালের নিচে চাপা থেকে শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে কিশোরের। নড়াচড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে লক্ষ্য করলো, আরেকজন মানুষ রয়েছে তার পাশে। নিশ্চয় সিনর স্টেফানো। এতোক্ষণ বুঝতে পারেনি কেন, যে তিনি আছেন? হয়তো তাঁর মুখেও কাপড় গোঁজা। বেঁধে রাখা হয়েছে। যাতে নড়তেও না পারেন, কথা বলতে না পারেন।
জেলে দুজনকে নিয়ে হ্রদের পাড়ে পৌঁছেছে ততোক্ষণে রবিন আর মুসা। লঞ্চটা আগের জায়গাতেই রয়েছে। সারেঙকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, কিশোর এদিকেই এসেছে। দেখেছেন? যে মানুষটাকে খুঁজতে এসেছি তাকে নিয়ে সেই লোক তিনজনও এসেছে। বোটটোট যেতে দেখেছেন নাকি?
না, অবাক মনে হলো সারেঙকে। দেখিনি তো!
মুসার দিকে তাকালো রবিন। তারপর জেলে দুজনের দিকে। হুগো আর নিটো। বললো, মিথ্যে কথা বলেছে লোকটা। নিশ্চয় আটকে ফেলেছে। কিশোরকে। ওই কুঁড়েতেই রয়েছে এখনও। সরানোর সময় পায়নি। জলদি চলুন।
ঘুরে প্রায় দৌড়াতে শুরু করলো সে। আগের পথ বেয়ে উঠতে লাগলো। পেছনে অন্য তিনজন।
কুঁড়েটায় পৌঁছতে বেশিক্ষণ লাগলো না। তাদেকে হুড়মুড় করে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে তাকালো ঘরের দুজন লোক।
কিশোর কোথায়? কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলো রবিন।
মানে? কি বলছো? বললো একজন।
ততোক্ষণে ঘরের আবছা অন্ধকার চোখে সয়ে এসেছে রবিন আর মুসার। লোকটাকে চিনে ফেললো, চেহারাটা ভালোমতো দেখতেই। এই সেই নকল পুলিশ অফিসার, গাড়িতে উঠে ওদেরকে যে কিডন্যাপ করে নিতে চেয়েছিলো।
জাল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠলো কিশোর। না পেরে দাপাতে শুরু করলো মেঝেতে। লাথি মারতে শুরু করলো।
ওই তো! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। ওই যে!
দরজার দিকে দৌড় দিলো দুই কিডন্যাপার। ঝট করে এক পা বাড়িয়ে দিলো মুসা। পায়ে লেগে আছাড় খেয়ে পড়লো একজন। আরেকজনকে আটকে ফেললো হুগো আর নিটো।
রবিন জাল সরাতে শুরু করে দিয়েছে। টেনে টেনে তুলে ছুঁড়ে ফেলছে একপাশে। বেরিয়ে পড়লো দুজন মানুষ। একজন কিশোর, আরেকজন সিনর স্টেফানো। মুক্ত করলো ওদেরকে।
বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে আরকিওলজিস্টকে। বিড়বিড় করে বললেন, থ্যাংক ইউ!
এতো কাহিল হয়ে পড়েছেন তিনি, উঠে দাঁড়ানোরই শক্তি পাচ্ছেন না। তাকে প্রায় বয়ে আনতে হলো বাইরে।
হয়েছে, ছেড়ে দাও, স্টেফানো বললেন। আমার অসুবিধে হচ্ছে না। কাল রাতে তোমাদের কথা আর মিস্টার সাইমনের কথা আলোচনা করতে এনেছি লোকগুলোকে। দারুণ গোয়েন্দা তোমরা। হাল তো ছাড়োইনি, পিছু নিয়ে ঠিক চলে এসেছে এখানে।
ঠিকই বলেছেন! বললো হুগো। কয়েকটা ছেলে যেরকম সাহস দেখালো…এদের জন্যেই শয়তানটাকে ধরতে পারলাম। বলে দুই অপরাধীর একজনের বুকে খোঁচা মারলো। এটার বাড়ি আমাদের এলাকায়। শয়তানী করতে করতে শেযে কিডন্যাপার হতেও বাধলো না! রবিনের দিকে তাকালো। কি করবো দুটোকে?
প্যাকুয়ারে পুলিশের কাছে নিয়ে যাবো, অনুরোধের সুরে বললো রবিন। আপনারা কি আমাদের সঙ্গে যেতে পারবেন? এদুটোকে নিতে সুবিধে হতো।
নিশ্চয় যাবো, জবাব দিলো নিটো।
পিছমোড়া করে হাত বেঁধে টেনে নেয়া হলো দুই বন্দিকে। হাঁ করে দৃশ্যটা দেখতে লাগলো গায়ের লোক। লঞ্চে তোলা হলো দুজনকে। সারেংও অবাক হয়েছে। বললো, ধরতে পারলে তাহলে!
হ্যাঁ, পেরেছি, মুসা বললো।
গাল ফুলিয়ে বসে রইলো দুই বন্দি। কোনো কথারই জবাব দিলো না। প্রশ্ন করা বাদ দিলো ওদেরকে কিশোর। কিভাবে ধরা পড়েছেন, গল্পটা বললেন সিনর স্টেফানো। পর্বতের ওপর একটা ধ্বংসস্তূপ আছে। ওটাতে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যাবে ভেবে খুঁড়তে গিয়েছিলেন। পুরানো একটা মন্দিরও আছে ওখানে।
মন্দিরের ভেতর আমাকে আটক করলো ওরা, বললেন তিনি। ধরে নিয়ে গেল কুঁড়েটায়, যেটাতে প্রথম আমাকে পেয়েছিলে তোমরা। অনেক প্রশ্ন করলো। জোর করতে লাগলো। বার বার জিজ্ঞেস করলো ছুরিটার কথা। বলিনি। তারপর খেতে চলে গেল। এই সময় এলে তোমরা তোমাদেরকেও বাধলো ওরা। ছুটলে কিভাবে?
মুসা এসে খুলে দিয়েছে, মুসাকে দেখালো রবিন। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার তৃতীয় সদস্য। মুসা আমান।
হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো মুসা। হাতটা ধরে জোরে ঝাঁকিয়ে দিলেন আরকিওলজিস্ট। পরের ঘটনা বলতে লাগলেন। টেনেহিঁচড়ে তাকে একটা গাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুললো কিডন্যাপাররা। তারপর নিয়ে এলো প্যাজকুয়ারোতে। এই লোকটা, নকল পুলিশ অফিসারকে দেখালেন তিনি। আমাকে অনেক হমকি দিয়েছে। প্রশ্নের জবাব না দিলে নাকি টর্চার করে মেরে ফেলবে। কিছুতেই মুখ খুলিনি আমি।
তীব্র ঘৃণা ফুটলো লোকটার চোখে। থুহ করে থুথু ফেললো আরকিওলজিস্টের পায়ের কাছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ভেবো না পার পেয়ে গেছো! আমার দলের লোকেরা এখনও মুক্ত রয়েছে। কিছু একটা করবেই ওরা।
আর করবে কচু, বুড়ো আঙুল দেখালো কিশোর। তোমাদেরকে পাবে তো। ঠিকই কথা বের করে নেবে পুলিশ। ঘাড় ধরে টেনে আনবে তোমার দোস্তদের। শয়তানী করা বের করে দেবে।
প্যাজকুমারোতে পৌঁছে সোজা থানায় চলে এলো ওরা। সঙ্গে সঙ্গে হাজতে ঢোকানো হলো দুই আসামীকে। হুগো আর নিটো কিশোরদেরকে বললো, ওরা দ্বীপে ফিরে যেতে চায়। তাদের কাজের জন্যে অনেক ধন্যবাদ দিলো কিশোর, পারিশ্রমিক দিতে চাইলো।