রাস্তার ধারের দোকানগুলোতে ঢুকে লোকের সঙ্গে কথা বললো। স্টেফানোর হবি দেখিয়ে তাঁকে দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করলো। কেউ দেখেনি। নিরাশ হয়ে হোটেলে ফিরে এলো গোয়েন্দারা। সেদিন আর কিছু করার নেই। সকাল সকাল খেয়েদেয়ে শুতে গেল।
ভুল করলাম না তো? রবিনের প্রশ্ন। হয়তো এখানে আনাই হয়নি তাঁকে।
প্রজাপতি জালের কথা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছি না আমি, কিশোর বললো। কাল সকালে হ্রদের পাড়ে চলে যাবো। জেলেদেরকে জিজ্ঞেস করবো। দেখি, কিছু বলতে পারে কিনা।
এতে কাজ হলো। তিনজন লোক জানালো, ছবির মানুষটাকে দেখেছে। যে তিনজনের সঙ্গে দেখেছে, তাদেরকেও চেনে ওরা। খারাপ লোক। জাতে জেলে কিন্তু মাছ ধরার চেয়ে, অন্যায় কাজেই বেশি আগ্রহ ওদের। একটা লঞ্চে করে চলে গেছে জ্যানিৎজিও দ্বীপের দিকে। তীরে দাঁড়িয়েই দেখা যায় দ্বীপটা পাহাড়ও রয়েছে একটা ছোটখাটো। বিশাল এক মূর্তি গড়া হয়েছে পাহাড়ের মাথায়, একজন পাদ্রীর। তার নাম মোরোজ। ১৮১০ সালে একটা বিদ্রোহী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ওখানে যাওয়ার জন্যে বোট ভাড়া পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলো কিশোর। ছোট একটা বন্দর দেখিয়ে দেয়া হলো তাকে। ওখান থেকে ছোটখাটো এক লঞ্চই ভাড়া করে ফেললো সে। দ্বীপে রওনা হলো।
তিনজনেই অবাক হয়ে দেখতে লাগলো জেলেদের মাছ ধরা। বিচিত্র জাল ঝপাৎ করে ফেলছে পানিতে। যেন ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে দানবীয় প্রজাপতির ডানা। যখন টেনে তোলা হচ্ছে, তাতে লাফালাফি করছে সার্ডিন মাছের মতো একধরনের মাছ। প্রচুর ধরা পড়ছে।
লঞ্চের সারেং ওদেরকে জানালো, সে জাতে জেলে। মাছ, ধরে বিক্রি করে পয়সা জমিয়ে এই লঞ্চ কিনেছে।
এতো ছোট মাছ দিয়ে কি হয়? রবিন জানতে চাইলো।
খায়। শুকিয়ে শুটকি করে মেকসিকো সিটিতে পাঠানো হয়। প্যাজকুয়ারো হ্রদের মাছের দারুণ চাহিদা। খুব স্বাদ। অনেক দামে বিকোয়।
দ্বীপের কাছাকাছি চলে এসেছে বোট। পানির কিনারে সারি দিয়ে বাঁধা আস্ত গাছের কাণ্ড কুঁদে তৈরি একধরনের ডিঙি, অনেকটা বাংলাদেশের তালের নৌকার মতো। ওগুলো জেলেদের সম্পত্তি। এই ডিঙিতে করেই মাছ ধরতে বেরোয় প্যাজকুয়ারোর জেলেরা।
সৈকতে মানুষের অভাব নেই। জাল ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শুকানোর জন্যে। ছেঁড়া জায়গাগুলো মেরামতে ব্যস্ত মেয়েরা।
তীরে ভিড়লো বোট। পাইলটকে অপেক্ষা করতে বলে নামলো তিন গোয়েন্দা। প্রথম যে মহিলাকে ছবিটা দেখালো কিশোর, সে-ই বলে দিতে পারলো সিনর স্টেফানোকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাহাড়ের দিকে দেখিয়ে দিলে সে। ঢাল বেয়ে উঠে গেছে একটা পাথরের তৈরি রাস্তা। দুপাশে বাড়িঘর দোকানপাট। প্রতিটি বাড়ির সামনেই খুঁটি পুঁতে তার ওপর লম্বা করে সরু গাছের কাণ্ড ফেলে রাখা হয়েছে। জাল ঝুলিয়ে রখার জন্যে।
আবার ছবিটা দেখালো কিশোর। কয়েকজন লোককে। ওরাও পাহাড়ে দিকে নির্দেশ করলো।
মনে হয়, চলার গতি বাড়িয়ে দিলো রবিন, এইবার আর বিফল হবে না।
দাড়াও! বাধা দিলো কিশোর। পুলিশ দেখছি না এখানে। বিপদে পড়ে যেতে পারি, এভাবে গেলে। ব্যাটাদের ল্যাসোর ক্ষমতা তো দেখেছি। জোয়ান দেখে দুতিনজন লোক নিয়ে যাওয়া দরকার।
কাকে নেবে? মুসার প্রশ্ন।
আশেপাশে তাকালো কিশোর। জাল নিয়ে কাজ করছে কয়েকজন জেলে। দুজনকে খুব পছন্দ হলো তার। জোয়ান, বলিষ্ঠ শরীর। ফুলে ফুলে উঠছে হাতের পেশী। তাদেরকে গিয়ে সবকথা বুঝিয়ে বললো সে।
অবাক হলো লোকগুলো। একজন বললো, আমাদের দ্বীপে কিডন্যাপার! শেষ পর্যন্ত শয়তানগুলো কিডন্যাপিং করলো! চলো, আমি যাবো, ওই লোকটার নাম হুগো।
উঠে দাঁড়ালো আরেকজন, আমিও, তার নাম নিটো।
পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করলো দলটা। পথের পাশের প্রতিটি বাড়ি, দোকান খুঁজতে খুঁজতে চললো। পাহাড়ের ওপরে যেতে দেখা গেছে। কিডন্যাপারদের, কিন্তু কোন বাড়িতে তা দেখেনি কেউ। অনেক ওপরে উঠে বয়ে মোড় নিয়েছে পথটা। কিশোর বললো, একসাথে না থেকে ভাগাভাগি হয়ে খোঁজা দরকার। তাতে অনেক তাড়াতাড়ি আর সহজ হবে।
রাস্তার শেষ বাড়িটার দিকে এগিয়ে চললো সে। সমস্ত দরজা খোলা। নাহ, এখানে থাকবে না, ভাবলো সে।
তবু, না দেখে যাওয়া ঠিক হবে না। কয়েকটা দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিলো কিশোর। আর মাত্র একটা দরজা। সেটার সামনে সবে এসে দাঁড়িয়েছে, হ্যাঁচকা টানে তাকে ভেতরে টেনে নিলো কয়েকটা হাত বাধা দেয়ার সুযোগই পেলো না। এমনকি সাহায্যের জন্য যে চিৎকার করবে, তারও উপায় রাখলো না। মুখে গুজে দেয়া হলো ময়লা কাপড়। একটা জাল দিয়ে জড়িয়ে ফেলা হলো। ঠেলে ফেললো ঘরের কোণে। আরও কিছু জাল ফেলে চাপা দেয়া হলো তাকে।
এতো সহজে ধরা পড়ে গেল বলে নিজের ওপরই রাগ হতে লাগলো কিশোরের। কয়েক মিনিট সব কিছু চুপচাপ রইলো, তারপর একটা লোককে বলতে শুনলো, তোমার জন্যে কি করতে পারি?
এই লোককে দেখেছেন? রবিনের কণ্ঠ। নিশ্চয় ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছে।
এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর লোকটা জবাব দিলো, হ্যাঁ, দেখেছি। তিনজন লোকের সঙ্গে গেছে। হ্রদের দিকে। সাথে একটা ছেলেও ছিলো, মনে হয় আমেরিকা থেকে এসেছে।
থ্যাংক ইউ। যাই, দেখি, ওদিকেই খুঁজি।
নীরব হয়ে গেল আবার বাইরে। অসহায় হয়ে পড়ে থেকে কিশোর ভাবছে, সাহায্যের আশা শেষ। চলে গেছে রবিন।
১৭
আবার ভাঙলো নীরবতা। তবে এবার কথা বললো কিশোরকে যারা ধরেছ তাদের একজন। খুব চালাক মনে করেছিলে নিজেকে। কেমন বুঝলে মজাটা?