একটা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। হাত তুলে দেখালো, দেখ, কি সুন্দর!
রূপার তৈরি একটা প্রমাণ সাইজের মানুষের মূর্তি। একজন ইনডিয়ান। হাতের একটা বটুয়া থেকে শস্যের বীজ ছিটানোর ভঙ্গি।
হ্যানিবাল কারনেসের খোঁজ করলে হয় না? মুসা বললো, হয়তো সিনর স্টেফানোর ব্যাপারে আরও কিছু জানা যেতে পারে। ছাত্র ছিলো যখন তার।
ঠিক বলেছো! তুড়ি বাজালো কিশোর। দাড়াও, আগে খেয়ে নিই। খেয়েদেয়ে বিল দেয়ার সময় ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
কারনেস? ম্যানেজার বললো, একটু আগেই তো দেখে এলাম। কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে ছবি আঁকছে। কয়েকটা দোকান পরেই তার দোকান। ডান পাশে ঘুরে সোজা চলে যাও।
দোকানের সামনে বেড়া দেয়া একটা উঠান। সেখানে বসে ছবি আঁকছে কয়েকজন চিত্রকর। তাদের মধ্যে রয়েছে লাল দাড়িওয়ালা একজন লোক। উজ্জ্বল নীল স্মক পরনে। সেই কারনেস।
ছেলেরা তার পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই মুখ তুলে হাসলো। হ্যাঁ, আমিই হ্যাঁনিবাল কারনেস। আলভারো তোমাদের কথা বলেছে। আমেরিকা থেকে এসেছো। সিনর স্টেফানোর খোঁজে। চমৎকার জায়গা আমেরিকা। অনেকদিন থেকেছি। আঁকার অনেক দৃশ্য আছে ওখানে।
অন্যান্যদের সঙ্গে কারনেসও বসে ছবি আঁকছে। ক্যানভাসে দেখা গেল একটা স্কেচ, ছোট একটা ছেলে একটা খচ্চরের গলায় দড়ি ধরে টানছে।
সেদিকে তাকিয়ে কিশোর জিজ্ঞেস করলো, কি ধরনের ছবি বেশি আঁকেন আপনি?
সব ধরনেরই। তবে মানুষের প্রতিকৃতি আঁকতেই বেশি ভালো লাগে আমার, হাসলো সে। তোমরা যাকে খুঁজতে এসেছো, সেই সিনর স্টেফানোরও ছবি আমি এঁকেছি। দেখবে? এসো।
তিন গোয়েন্দাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে এলো কারনেস। চলে এলো পেছনের একটা ঘরে। তার স্টুডিওতে।
সুন্দর একটা লাইফ-সাইজ ছবি। দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছে কারনেস। নিখুঁত করে একেছে তার ওস্তাদ এমিল ডা স্টেফানোর ছবি।
প্রশংসা করলো কিশোর। স্টেফানোর সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগলো। অনেক তথ্য জানালো কারনেস, যেগুলো তিন গোয়েন্দার কাছে নতুন।
সিনর স্টেফানো খুব ভালো লোক, কারনেস বললো। শান্ত স্বভাবের। কারো সাতেপাচে যান না। নিজের কাজ নিয়ে থাকেন। অ্যাজটেক যোদ্ধার রক্ত বইছে শরীরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকর্মীরা তো তার নামই দিয়ে ফেলেছে অ্যাজটেক যোদ্ধা।
শুনেছি, রবিন বললো, একেকজন আরকিওলজিস্টের একেক জিনিসের প্রতি শখ। যদিও প্রাচীন সব ধরনের জিনিস খুঁড়ে বের করতেই সমান আগ্রহী তারা। সিনর স্টেফাননার শখটা কি, বলতে পারেন?
ঠিক এই প্রশ্নটাই করতে যাচ্ছিলো কিশোর, চুপ হয়ে গেল, করে ফেলেছে রবিন।
তুমি ঠিকই বলেছো, মাথা ঝাঁকালো কারনেস। একেকজনের একেক শখ। সিনর স্টেফানোর ছিলো পুরানো অন্ত্রের। বিশেষ করে অ্যাজটেকদের। অনেক অস্ত্র যোগাড় করেছেন তিনি। শত শত বছরের পুরানো। স্টেট মিউজিয়ামকে দিয়ে দিয়েছেন।
এই তথ্যটা জেনে খুব উত্তেজিত হলো তিন গোয়েন্দা।
পুরানো অস্ত্র হাতে, তার একটা ছবিও এঁকেছি আমি, কারনেস জানালো। এসো, এদিকে, আরেকটা ছবি দেখালো সে। শেষ হয়নি ছবিটা। বাকি আছে। তিন বছর আগে একেছি এটা। শেষ করে ফেলতে পারতাম, করিনি। সিনর স্টেফানো অনুরোধ করেছেন, আরও দুটো বছর যেন অন্তত অপেক্ষা করি। শেষ করে এটা স্টেট মিউজিয়ামে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছে আছে আমার।
এতদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন কেন? মুসার প্রশ্ন।
কি জানি, বলতে পারবো না। নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। অকারণ ফালতু কথা বলার মানুষ তিনি নন।
আরও কাছে গিয়ে গভীর মনোযোগে ছবিটা দেখতে লাগলো কিশোর। ঝলমলে অ্যাজটেক পোশাক পরে রয়েছেন স্টেফানো। হাতে একটা বড় ছুরি। সোনা দিয়ে তৈরি বাঁটটায় পালকওয়ালা সাপের ছবি খোদাই করা রয়েছে। নীলকান্তমণি বসানো।
ভাবনা চলেছে তার মাথায়। তিন বছর আগে আঁকা হয়েছে ছবিটা, আরও দুবছর অপেক্ষা করার কথা। তার মানে পাঁচ বছর। অ্যাজটেক যোদ্ধার সম্পত্তি ফেরত দেয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় চেয়েছিলেন মিস্টার রেডফোর্ড। স্টেফানোও সময় চেয়েছেন কারনেসের কাছে। দুটোর মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে?
সিনর স্টেফানোর পাওয়া অস্ত্রগুলো কখনও দেখেছেন? আচমকা প্রশ্ন করলো কিশোর।
না। তিনি সেসব কাউকে দেখাতেন না। জানাতেনই না। মিউজিয়ামে পাঠানোর পর সবাই জানতো। আগে প্রকাশ না করার কারণ বোধহয় চোর ডাকাতের ভয়। তবে একটা জিনিস আমি দেখে ফেলেছিলাম।
কী?
ছুরি। ওই যে, ছবিতে যেটা এঁকেছি।
আর কোনো সন্দেহ রইলো না কিশোরের। উইলে অ্যাজটেক যোদ্ধা বলে কাকে বোঝাতে চেয়েছেন মিস্টার রেডফোর্ড, এবং তার জিনিসটা কি। যোদ্ধা হলেন এমিল ডা স্টেফানো, আর সম্পত্তি হলো ওই ছরি।
অনেক মূল্যবান তথ্য জানতে পেরেছে। আর কিছু জানার নেই। আরও কিছু ছবি দেখে, বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। ট্যাক্সকো থেকে বেরিয়ে সোজা রওনা হলো লেক প্যাজকুয়ারোর পথে। আগের রাতে আলভারোকে যা যা বলেছে, ছেলেদেরকেও ঠিক একই কথা বললো কারনেস, সিনর স্টেফানোকে কখন কি অবস্থায় দেখা গেছে।
বিকেল বেলা হ্রদের পাড়ে পৌঁছলো ওরা। ছোট একটা গ্রাম প্যাজকুয়াররা। একটামাত্র সরু রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে ওখানকার যতো সব বাণিজ্যিক ভবনগুলো। একটা হোটেল আছে। তাতে উঠলো তিন গোয়েন্দা। গোসল-টোসল সেরে বেরিয়ে পড়লো সিনর স্টেফানোর খোঁজে।