সমস্ত কথা তাকে জানালো কিশোর আর রবিন।
তার মানে তীরে এসে তরী ডুবলো! মুসা বললো। ধরেও রাখতে পারলে না। আর কি পাওয়া যাবে সিনর স্টেফানোকে? নিশ্চয় এমন জায়গায় লুকিয়ে ফেলবে, যেখান থেকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন হবে। কারণ, তোমরা দেখে ফেলেছ। মুক্তি পাবেই। সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে বলবে পুলিশকে, এরকমই ভাববে ওরা। অনেক দূরে কোথাও নিয়ে যাবে সিনর স্টেফানোকে, বুঝলে। যেখানে আমরা কিংবা পুলিশ, কেউই খুঁজে পাবে না।
আমারও সেরকমই মনে হচ্ছে! চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর। মারাত্মক বিপদে পড়েছেন সিনর স্টেফাননা। টর্চার করে হোক, যেভাবেই হোক, তার মুখ থেকে কথা আদায়ের চেষ্টা করবে লোকগুলো। তারপর আর না-ও ছাড়তে পারে। হয়তো খুন করে গুমই করে ফেলবে।
১৬
হোটেলে ফিরে এলো তিন গোয়েন্দা। আসার পথেই থানায় নেমে পুলিশকে। জানিয়ে এসেছে সব কথা।
অপেক্ষা করছে ওরা। পুলিশ বলেছে, কোনো খোঁজ পেলেই জানাবে। অনেক রাত হলো। কিন্তু ফোন আর আসে না। বসে বসে আলোচনা করছে তিনজনে, অনুমান করার চেষ্টা করছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে সিনর স্টেফানোকে। কিছুই বুঝতে পারছে না। কোনো সূত্র ছাড়া বুঝবেই বা কিভাবে?
ঘুমোতে যেতে তৈরি হলো তিনজনে। এই সময় এলো ফোন। রিসিভারটা কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরে ম্যানেজার বললো, তোমাকে চাইছে।
প্রায় থাবা দিয়ে রিসিভারটা নিয়ে কানে ঠেকালো কিশোর। হালো!
কিশোর? আমি, পুলিশ নয়। আমি, পিন্টো আলভারো।
ও, আপনি! কি খবর?
তোমাদেরকে বলেছিলাম না, খোঁজখবর করবো। করেছি। আমার পরিচিত সমস্ত জায়গায় ফোন করেছি। যেখানে যেখানে স্টেফানো যেতেন, আমাকে নিয়ে, সব জায়গায়। এইমাত্র ট্যাক্সকো থেকে হ্যানিবাল কারনেস জানালো, তাকে নাকি দেখেছে। তিনজন লোকের সঙ্গে গাড়িতে। খাবার কিনতে থেমেছিলো গাড়িটা। কারনেসের মনে হয়েছে, পুরানো কোনো ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে চলেছেন আরকিওলজিস্ট। সেজন্যেই তোক নিয়েছেন সাথে।
কোনদিকে গেছে! দুরুদুরু করছে কিশোরের বুক।
উত্তর-পশ্চিমে। ঠিক কোথায়, বলতে পারলো না। জিজ্ঞেস করতে পারেনি কারনেস।
এই হ্যানিবাল কারনেসটি কে?
ট্যাক্সকোর একটা সুভনিরের দোকানের মালিক। আর্টিস্ট-কাম-আরকিওলজিস্ট। ডা স্টেফানোর ছাত্র।
ও। আর কিছু বলতে পারলো? গাড়িটা কি গাড়ি? লোকগুলো কেমন?
গাড়িটা কালো রঙের সেডান। লোকগুলো মেকসিকান, জেলে বলেই মনে হয়েছে কারনেসের। নানারকমের কাজ করে ওই অঞ্চলের জেলেরা মাছ ধরে, গরু পোষে, ভালো টাকা পেলে শ্রমিকের কাজ করে। বিশেষ করে মাটি খোঁড়ার কাজ। অনেক টাকা দেয় তো আরকিওলজিস্টরা।
ডা স্টেফানোর সঙ্গে যে দেখা হয়েছে, সংক্ষেপে সেকথা জানালো কিশোর। শুনে খুব চিন্তিত হলো আলভারো। বললো, পুলিশ খুঁজছে খুঁজুক, সে আরও খোঁজ নেবে।
তাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিলো কিশোর। দুই সহকারীকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো। ম্যাপ খুলে বসলো।
ট্যাক্সকো বের করলো। উত্তর-পশ্চিম দিকে আঙুল এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ বলে উঠলো, বুঝেছি! লেক প্যাজকুয়ারোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে!
কি করে বুঝলে? একই সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো রবিন আর কিশোর।
ওটাই ওদের জন্যে একমাত্র নিরাপদ জায়গা। এখানকার পুলিশ অতদূরে খুঁজতে যাবে না। তাছাড়া, কয়েকটা সূত্র আছে আমাদের হাতে। রবিন, মনে আছে, কথা বলার সময় খালি মাছ মাছ করছিলো লোকগুলো? আলভারোও বললো, কারনেসের নাকি জেলের মতো মনে হয়েছিলো লোকগুলোকে। আর সব চেয়ে বড় সূত্রটা হলো প্রজাপতি জাল। বলেছে, প্রজাপতি জাল দিয়ে না ধরে ধরেছি ল্যাসো দিয়ে। লেক প্যাজকুয়ারোই একমাত্র জায়গা পৃথিবীতে, যেখানে ওই জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। তারমানে লোকগুলো ওখানকারই অধিবাসী। কাউকে লুকানোর জন্যে নিজের অঞ্চলকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করবে ওরা। গেছেও সেদিকেই। আর কোনো সন্দেহ নেই, টেবিলে চাপড় মারলো কিশোর। ওই হ্রদেই সিনর স্টেফানোকে নিয়ে গেছে ওরা।
পুলিশকে জানানো দরকার, মুসা বললো।
না! এটাই আমাদের শেষ সুযোগ, বিফল হতে চাই না। পুলিশ দেখলে হুঁশিয়ার হয়ে যেতে পারে ব্যাটারা। জায়গায় জায়গায় ওদের চর থাকতে পারে। খবর পেলেই আবার সিনর স্টেফানোকে সরিয়ে ফেলবে। ওরা এখনও জানে না আমরা আন্দাজ করে ফেলেছি। কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে। গোপনে।
তার মানে লেক প্যাজকুয়াররাতে যাচ্ছি আমরা?
হ্যাঁ। কাল সকালে উঠেই।
পরদিন সকালে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লো তিন গোয়েন্দা। ট্যাক্সকোতে পৌঁছলো দুপুরবেলা। লাঞ্চের সময় হয়েছে। গাছে ছাওয়া বড় একটা চর মতো জায়গায় গাড়ি রাখলো। মেকসিকানরা এরকম জায়গাকে বলে ক্যালো। চারপাশ ঘিরে রয়েছে পর্বত। বাড়িঘর রয়েছে ঢালের ওপর। অসংখ্য পাথরের রাস্তা উঠে গেছে এদিক ওদিক। চত্বরের একধারে সুন্দর একটা পাথরের গির্জা দেখা গেল। অনেক পুরানো। বাকি তিনধারে রয়েছে চমৎকার সব দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট।
হেঁটে একটা রেস্টুরেন্টের দিকে এগোলো তিন গোয়েন্দা। বেশির ভাগ দোকানেই দেখলো রূপার তৈরি জিনিসপত্রের আধিক্য।
ট্যাক্সকো রূপার জন্যে বিখ্যাত, বিদ্যে ঝাড়লো চলমান জ্ঞানকোষ, রবিন। অনেক রূপার খনি আছে এখানে। ফলে রূপার জিনিস বানানোর কারিগরও আছে।