চেনেন? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
আন্দাজ করতে পারছি। শিওর হতে হলে আরও কিছু দেখা দরকার, অচেতন লোকটার জ্যাকেটের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলেন উকিল। নাম-ঠিকানা লেখা কাগজটা পড়ে বললেন, যা ভেবেছিলাম। এর নাম উইলিয়াম বারোজ। মিস্টার রেডফোর্ডের খালাতো ভাই। উইলে এর নামও রয়েছে।
উত্তরাধিকারী! বিড়বিড় করলো কিশোর। উঁকিলের দিকে তাকিয়ে বললো, নিশ্চয় কিছু খুঁজতে এসেছিলো। জরুরী কিছু।
নিচে টেলিফোন আছে। সেকথা রবিনকে জানালেন ফাউলার। অ্যামবুলেন্সের জন্যে টেলিফোন করতে বললেন। অ্যামবুলেন্স আসুক। আমাদের অপেক্ষা করাই ভালো।
লোকটার ওপর নজর রেখে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। কিশোর খুঁজতে শুরু করলো। ড্রয়ার, বাক্স, আলমারি, সব জায়গায়। বের করার চেষ্টা করছে লোকটা কি নিতে এসেছিলো।
দেরাজের মধ্যেও খুঁজতে গিয়েছিলো, বললো সে। হয়তো ঠিকমতো বসেনি। টান লেগে উল্টে পড়েছে গায়ের ওপর।
তাই হবে। চুরি করে ঢুকেছে। আমাকে না নিয়ে এবাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই কারো। ভাবছি, ঢুকলো কিভাবে?
দেরাজের ড্রয়ার পুরানো কাপড় আর বইতে বোঝাই। নাহ্, তেমন কিছু তো দেখছি না, নিরাশ হয়ে মাথা নাড়লো কিশোর। অ্যাজটেক যোদ্ধার সূত্র পাবো। আশা করেছিলাম।
রবিন ফিরে এসে জানালো অ্যামবুলেন্স আসছে। আবার ফিরে গেল নিচে, অ্যামবুলেন্স এলে তাদেরকে পথ দেখিয়ে আনার জুন্যে।
বেশিক্ষণ লাগলো না। একটু পরেই একজন ডাক্তার আর দুজন স্ট্রেচার বাহককে নিয়ে এলো রবিন। বারোজকে পরীক্ষা করলেন ডাক্তার। বললেন, অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
লোকটাকে স্ট্রেচারে ভোলা হলো। বাহকদের সঙ্গে চললেন ডাক্তার, উকিল, আর দুই গোয়েন্দা।
অ্যামবুলেন্স চলে যেতেই কিশোর বললো, আবার সে চিলেকোঠায় ফিরে যেতে চায়। খোঁজার কাজটা শেষ করে ফেলবে।
কেন, কিছু চোখে পড়েছে নাকি? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
মনে হয়। কয়েক বাক্স পিকচার স্লাইড পড়ে থাকতে দেখেছি। বোধহয় ওগুলোর জন্যেই গিয়েছিলো বারোজ। আর তাহলে ধরেই নেয়া যায়, সূত্র রয়েছে ওই ছবির মাঝেই।
দাঁড়িয়ে আছো কেন? জলদি চলো!
২
তুমি ভাবছো, ফাউলার বললেন। এর মধ্যে অ্যাজটেক যোদ্ধার ছবিটবি আছে?
চিলেকোঠার দরজায় পৌঁছে গেল ওরা। কিশোর বললো, হ্যাঁ। হয় লোকটার। নয়তো জিনিসটার।
স্লাইডগুলো কোথায় বসে দেখবে? কিশোর বললো, নিচে গিয়ে দেখাই ভালো। চিলেকোঠায় বসে দেখতে অসুবিধে। কথাটা পছন্দ হলো ফাউলারের। বললেন, সেই ভালো। চলো। স্লাইড দেখতে তো প্রোজেক্টর আর পর্দা লাগে। আছে যে তুমি জানলে কি করে?
সহজ। স্লাইড যখন আছে, প্রোজেক্টর আর পর্দাও আছে। এ-তো জানা কথা। তবে আমি দেখেছি নিচতলার ঘরগুলো খোঁজার সময়। চলুন।
চলো। তিনজনে মিলে বাক্সগুলো নিচে নামিয়ে আনলো। তারপর প্রোজেক্টর আর পর্দা বয়ে নিয়ে এলো লিভিং রুমে। বাক্সের ওপর বিভিন্ন দেশের নাম লেখা রয়েছে। গ্রীস, ইটালি, মিশর, আর ভারত লেখা বাক্সগুলো সরিয়ে রাখলো কিশোর। অ্যাজটেক যোদ্ধাকে এগুলোতে পাবো না, বললো সে। আমি শিওর। আমরা যাকে খুঁজছি তাকে পাবো মেকসিকোয়।
পর্দাটা টেনে নামিয়ে দিয়ে এলো রবিন। প্রোজেক্টর রেডি করে তাতে স্লাইড ঢোকালো কিশোর। একটা বাক্সের ওপরে কিছু লেখা নেই, সেটা থেকেই নিয়েছে প্রথম ছবিটা। দেখলো। তারপর একের পর এক ছবি ঢোকাতে থাকলো।
কিছু ছবি দেখে মনে হলো, সেগুলো রকি পর্বত থেকে তোলা হয়েছে। তারপর এলো হাওয়াই, ক্যানাডা আর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গার দৃশ্য।
মেকসিকোতে ভোলা একটা ছবিও চোখে পড়েনি এখনও, তবু বিমোহিত হয়ে দেখছে কিশোর রবিন। খুবই ভালো লাগছে ওদের। অজানা অচেনা দুর্গম সব জায়গার ছবি। কিছু কিছু তো বিস্ময়কর। কোন দিক দিয়ে যে একটা ঘণ্টা পেরিয়ে গেল টেরই পেলো না ওরা। ফাউলারও মুগ্ধ হয়ে দেখছেন। হঠাৎ কি মনে হতে হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, আরিব্বাবা, অনেক দেরি হয়ে গেছে! আর বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না আমি। অফিসে যেতে হবে।
প্রোজেক্টরের দায়িত্ব নিয়েছে এখন রবিন। একের পর এক স্লাইড তুলে দিচ্ছে কিশোর, সেগুলো মেশিনে ঢোকাচ্ছে সে। ছবি দেখতে বেশিক্ষণ আর সময় নিচ্ছে না ওরা। দ্রুত দেখছে। তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে।
দাঁড়াও, দাঁড়াও! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন ফাউলার। মেক্সিকো! ওই বিল্ডিংটা মেকসিকো সিটিতে, ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়!
গিয়েছিলেন নাকি ওখানে?
হ্যাঁ।
ছবিটা ভালো করে দেখে সরিয়ে দিলো রবিন। আরেকটা ছবি দেখে ফাউলার জানালেন, ওটা পিরামিড অভ দি সান। মেকসিকো সিটির বাইরে বিশাল এক প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ।
রবিন, ধরে রাখ ছবিটা, কিশোর বললো। এটাই অ্যাজটেক। কোনো সূত্র আছে কিনা দেখ।
অনেকক্ষণ দেখেও কিছুই বের করা গেল না ছবিটা থেকে। ছবিতে কয়েকজন লোক রয়েছে। কারোর চেহারাই স্পষ্ট নয়, চেনা যায় না।
বোতাম টিপে দিলো আবার রবিন। চলতে শুরু করলো আবার প্রোজেক্টর। কয়েকটা ছবিতে নানা রকম ক্যাকটাস দেখা গেল, ক্যান্ডেল ক্যাকটাসও রয়েছে তার মধ্যে। একটা হ্রদ দেখা গেল। মাছ ধরছে জেলেরা। জালগুলো অদ্ভুত।
ওটা লেক প্যাজকুয়ারো, ফাউলার জানালেন। আর ওই জালগুলোকে বলে প্রজাপতি জাল। দুনিয়ায় একমাত্র ওই হ্রদেই ওরকম জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়, আবার ঘড়ি দেখলেন তিনি। আর তো বসতে পারছি না আমি। এবার যেতে হয়। বাকি ছবিগুলো দেখার জন্যে আবার নাহয় একসময় ফিরে আসা যাবে।