উত্তেজনা চাপতে কষ্ট হলো তিন গোয়েন্দার। কিশোর বললো, সে আলভারোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। হোটেলের নাম বললো, রুম নম্বর দিলো, টেলিফোন নম্বর দিলো। কিছু জানতে পারলে যেন দেরি না করে তাদেরকে জানানো হয়। জানাবে কথা দিলো আলভারো। আন্তরিক হ্যান্ডশেক করলো তার সঙ্গে তিন গোয়েন্দা।
হোটেলে ফিরেই আগে মিস্টার সাইমনকে ফোন করলো কিশোর। তদন্তের অগ্রগতির কথা জানালো ডিটেকটিভকে।
ওদের কাজের অনেক প্রশংসা করলেন তিনি। কিভাবে ডা স্টেফানোকে খুঁজে বের করা যেতে পারে, কয়েকটা পরামর্শ দিলেন। একটা খুব মনে ধরলো কিশোরের। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া। বলতে হবে, খুব জরুরী একটা ব্যাপারে কথা বলার জন্যে আরকিওলজিস্ট এমিল ডা স্টেফানোকে খোঁজা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন পড়ে থাকলে তিনি যেন অবিলম্বে সাড়া দেন এই অনুরোধ করা হবে।
গোসল আর খাওয়া শেষ করেই আবার বেরিয়ে পড়লো তিন গোয়েন্দা। অকজাকা থেকে যে কটা দৈনিক বেরোয়, সব কটার অফিসে গিয়ে বিজ্ঞাপনের জন্যে ফিস জমা দিয়ে এলো। সবাই বলে দিলো, সকালের খবরেই বেরোবে বিজ্ঞাপনটা।
পরদিন সকালে হোটেলের ঘরে বসে নাস্তা সেরে নিচে নামলো তিন গোয়েন্দা। নিউজ স্ট্যাওে এসে প্রথম কাগজটা হাতে নিয়েই চমকে উঠলো কিশোর। হেডলাইন করা হয়েছেঃ পাহাড় থেকে পড়ে বিখ্যাত আরকিওলজিস্ট এমিল ডা স্টেফানোর মৃত্যু!
১৫
ধাক্কাটা সামলে নিয়ে খবরটা পড়তে শুরু করলো তিন গোয়েন্দা।
পুরোটা পড়ার পর বোঝা গেল, মারা গেছেন তিনি, এটা অনুমান করা হচ্ছে। একেবারে নিশ্চিত নয় কেউ। পার্বত্য এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলো তিনজন আমেরিকান টুরিস্ট-নীল হ্যাঁমার, রবার্ট জনসন, আর ডেভিড মিলার। এমিল স্টেফানোকে ওখানে দেখেছে তারা।
পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন আরকিওলজিস্ট। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান। দৌড়ে যায় তিন টুরিস্ট। কিন্তু যেখানে স্টেফানোর দেহ পড়ে থাকার কথা সেখানে পৌঁছে কিছুই দেখতে পায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফিরে এসেছে তিনজনে।
এসেই হ্যামার ফোন করেছে পুলিশকে। জনসন করেছে পত্রিকা অফিসকে। একটা উদ্ধারকারী দল ছুটে গেছে সঙ্গে সঙ্গে। অরকিওলজিস্টের লাশ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গিরিখাতে আছড়ে পড়েছেন স্টেফানো, সেখান থেকে নদীতে গড়িয়ে পড়েছে তার লাশ। ভেসে চলে গেছে।
দুবার করে খবরটা পড়লো ওরা। অবশেষে মুসা বললো, সর্বনাশ হয়েছে। আমাদের রহস্যের কিনারা বুঝি আর হলো না!
আমি বিশ্বাস করাতে পারছি না, কিশোর বললো।
পত্রিকা কি আর মিথ্যে খবর ছাপবে? রবিনের প্রশ্ন।
ওদের রিপোর্টার নিজে গিয়ে তো আর খবর আনেনি। অন্যের কথা শুনে লিখেছে।
তোমার কি মনে হয়? মুসা জিজ্ঞেস করলো, স্টেফানো মারা যাননি?
হয়তো গেছেন। তবে পা পিছলে পড়েছেন, একথা বিশ্বাস হচ্ছে না। হয়তো ঠেলে ফেলে দেয়া হয়েছে। অ্যাজটেক যোদ্ধার সম্পত্তি পুরোপুরি গোপন করে ফেলার জন্যে। আর আরেকটা প্রশ্ন। ডা স্টেফানো ঘোরাঘুরি করেন ধ্বংসস্তূপগুলোতে। পর্বতের ওপরে তিনি যাবেন কি করতে?
প্রশ্নটা রবিন আর মুসা দুজনকেই ভাবিয়ে তুললো।
তাহলে কি যাননি? রবিনের প্রশ্ন।
জবাব দিলো না কিশোর। গভীর ভাবনায় ডুবে গেছে। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কয়েকবার। বিড়বিড় করে বললো, ব্যাটারা ভুয়াও হতে পারে। চলো, ফোন করি।
কোথায়? মুসা অবাক।
মেকসিকান টুরিস্ট ডিপার্টমেন্টে। জানবো, ওই নামের তিনজন আমেরিকান টুরিস্ট সত্যিই এসেছে কিনা।
ঠিক বলেছো! রবিন বললো। চলো।
ফোন করলো কিশোর। ফোন ধরেছে যে লোকটা, সে কথা দিলো, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাবে। ফোনের কাছে অপেক্ষা করতে বললো কিশোরকে।
অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো তিনজনে। এতোই উত্তেজিত হয়ে আছে, আলোচনা পর্যন্ত করতে পারছে না। শেষে আর থাকতে না পেরে বলেই ফেললো মুসা, দূর, এতো দেরি কেন…
ঠিক এই সময় বাজলো ফোন।
ওপাশের কথা শুনলো কিশোর। ধীরে ধীরে বিমল হাসি ছড়িয়ে পড়লো মুখে। রিসিভার রেখে দিয়ে বন্ধুদেরকে বললো, যা ভেবেছিলাম। ওই নামে কোনো আমেরিকানই মেকসিকোতে ঢোকেনি গত কয়েক দিনে। মনে হচ্ছে মারা যাননি ডা স্টেফানো। কিডন্যাপ করা হয়েছে। মৃত্যুর খবর ছড়ানো হয়েছে আমাদেরকে ফেরানোর জন্যে। আর কোনো কারণ নেই। লোকগুলো ভেবেছে, এখবর পেলে আমেরিকায় ফিরে যাবো আমরা। এটা সেই দলের কাজ, যারা আমাদের এবং অ্যাজটেক যোদ্ধার সম্পত্তির পিছে লেগেছে।
এখন তাহলে কি করবে? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
ডা স্টেফানোকে খুঁজতে বেরোবো।
কোথায়?
অবশ্যই সেই পার্বত্য এলাকায়। আমি শিওর, ওখানেই কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে।
কোন এলাকায় মারা গেছেন স্টেফানো, ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। ম্যাপ নিয়ে বসলো কিশোর। জায়গাটা চিহ্নিত করলো। তারপর বেরিয়ে পড়ল দুই সহকারীকে নিয়ে।
জায়গাটা অকজাকার উত্তর-পুবে। সরু একটা আঁকাবাঁকা পথে এসে পড়লো ওদের গাড়ি। ধীরে ধীরে উঠে চললো পর্বতের ওপরে। অনেক উচু একটা চুড়া চোখে পড়ছে। মেঘের মধ্যে ঢুকে গেছে। ঢালের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্থানীয় অধিবাসীদের কুঁড়ে।
গাছপালার ফাঁক দিয়ে নিচে দেখা যায় নদী। সিনয় স্টেফানো ওটাতে পড়েই ভেসে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পর্বতের গোড়ায় বড় বড় গাছের জঙ্গল, কিন্তু যতোই ওপরে উঠছে ঢাল, কমে গেছে বড় গাছ। তার জায়গায় ঠাই করে নিয়েছে ঝোঁপঝাড় আর লতা। তবে পাথর আছে সর্বত্রই। বড়, ছোট, মাঝারি সব রকমের, সব আকারের।