মেকসিকান লোকটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, কিশোর, আপনি সিনর পিন্টো আলভারো?
হ্যাঁ। কেন?
আমেরিকা থেকে এসেছি আমরা; আপনার খোঁজে। কয়েকটা প্রশ্ন আছে।
একটা পাথরের ওপর বসে পড়লো আলভারো। তিন গোয়েন্দাকেও পাথর দেখিয়ে বসতে বললো। জানতে চাইলো, কি প্রশ্ন?
চেস্টার রেডফোর্ড নামে একজন কোটিপতি আমেরিকানকে চেনেন? লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে রকি বীচে বাড়ি।
চিনি। আমার এক বন্ধুর বন্ধু।
আপনার বন্ধুর নাম ডা স্টেফানো?
বিস্ময় ফুটলো মেকসিকান মানুষটির চোখে। হ্যাঁ। তুমি কি করে জানলে?
প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, আলভারো আর স্টেফানো কি শুধুই বন্ধু, না বিজনেস পার্টনার।
হেসে জবাব দিলো আলভারো, দুটোই বলতে পারো। আজকাল আর খুব একটা দেখা হয় না তার সঙ্গে। তবে কয়েক বছর আগে একসঙ্গে খুঁড়েছি আমরা। তারপর কি জানি কি হলো। আমাকে বাদ দিয়ে একাই খুঁড়তে লাগলো।
এখন কোথায় আছে জানেন? রবিন জানতে চাইলো।
মাথা নাড়লো আলভারো। জানি না। তবে বেশি জরুরী হলে খুঁজে বের করতে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারি। মিস্টার রেডফোর্ডের কথা কি যেন বললে?
পকেট থেকে ছবির খামটা বের করলো কিশোর। দেখালো। সঙ্গে সঙ্গে স্টেফানোকে চিনতে পারলো আলভারো। সাথের অন্য লোকটাকেও।
কিশোর বললো, উইলে পিন্টো আলভারো নামটা লিখে গেছেন মিস্টার রেডফোর্ড। আমার মনে হয় আপনিই সেই লোক।
উইলে আমার কথা লিখেছেন! বিশ্বাস করতে পারছে না আলভারো।
ব্যাপারটা আমাদেরকেও অবাক করেছে। আমরা গোয়েন্দা। আমাদের কথাও লিখেছেন তিনি। অনুরোধ করেছেন, যেন অ্যাজটেক যোদ্ধার সত্যিকার উত্তরাধিকারীকে খুঁজে বের করে তার সম্পত্তি তাকে ফিরিয়ে দিই। কোনো একটা জিনিসের কথা বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।
এতোই অবাক হয়েছে আলভারো, কথা বলতে পারলো না পুরো তিরিশ সেকেন্ড। তারপর বললো, তাহলে তোমরা ডিটেকটিভ?
নিজেদের পরিচয় দিলো কিশোর। কার কি নাম, বললো।
হুঁ, আলভারো বললো। কয়েকটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে আসছে এখন। খোঁড়াখুড়ির সময় আগে কুকুর সঙ্গে নিতাম না। কয়েক দিন ধরে নিচ্ছি। কারণ গত দুই হপ্তায় কয়েকবার রহস্যজনক ভাবে হামলা হয়েছে আমার ওপর। কয়েকজন লোক, যাদেরকে আগে কোনোদিন দেখিনি, আমাকে ধরে হুমকি দিয়েছে। অ্যাজটেক যোদ্ধার জিনিস কোথায় আছে না বললে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে।
চট করে আবার একে অন্যের দিকে তাকালো তিন গোয়েন্দা।
ওরা কি বলছে বুঝতে পারিনি তখন, বলছে আলভারো। বার বার বলেছি, আমি কিছু জানি না। ভুল লোককে ধরেছে। মনে হয় ওরা আমার কথা বিশ্বাস করেছে। আর আসছে না। তা এই জিনিসটা কি, তোমরা কিছু বলতে পারবে?
পুরানো অস্ত্রশস্ত্র হতে পারে, মুসা বললো।
কিংবা প্রাচীন কোনো অ্যাজটেক মূর্তি, বললো রবিন।
আসলে, কিশোর বললো। কিছুই জানি না আমরা। জানার চেষ্টা করছি।
পিন্টো আলভারোকে বিশ্বাস করা যায়, মনে হলো তার। একবার দ্বিধা করে রেডফোর্ডের উইলের কথাটা বলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ শোনার পর হঠাৎ হাত তুললো আলভারো। বললো, ডা স্টেফানো একটা জিনিস পেয়েছিলো। মিউজিয়ামকে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগে মিস্টার রেডফোর্ডকে ধার দিতে বাধ্য হলো, এমন করেই চেপে ধরেছিলো তাকে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জিনিসটা আবার স্টেফানোকে ফেবত দেবে কথা দিয়েছিলো আমেরিকান লোকটা। দুজনে আলোচনা করে ঠিক করেছে, জিনিসটা পাওয়ার কথা চেপে রাখবে, যতোদিন না মিউজিয়ামকে দেয়া হয়।
তবে জিনিসটা কি, কথা শেষ করলো আলভারো। আমি বলতে পারবো না।
সেই নির্দিষ্ট সময়টা নিশ্চয় অনেক দীর্ঘ ছিলো, কিশোর বললো। ওই সময়ের মধ্যে মারাও যেতে পারে দুজনের যে কোনো একজন। এবং তা-ই হয়েছে। মিস্টার রেডফোর্ড মারা গেছেন।
আর মজার ব্যাপার হলো, মধ্যস্থতা করার জন্যে রাখা হয়েছিলো আমাকে। জিনিস দেয়ার জন্যে কেউ খোঁজ করতে এলে যাতে চিনিয়ে দিতে পারি ডা স্টেফানোকে, অ্যাজটেক যোদ্ধার সত্যিকার উত্তরাধিকারী বলে। তবে জিনিসটা যে কি, কিছু জানানো হয়নি আমাকেও। তুমি কিছু আন্দাজ করতে পারছো?
যেহেতু, জবাব দিলো কিশোর। অ্যাজটেক যোদ্ধা বলা হয়েছে, প্রাচীন মূর্তিটুর্তি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মূর্তি কালেকশন করতেন না মিস্টার রেডফোর্ড, সেরকম কোনো আভাস পাইনি। পেয়েছি অস্ত্রের ব্যাপারে। পুরানো অস্ত্র জোগাড় করাটা নাকি তার নেশা ছিলো। স্টেফাননা ওরকম কোনো অস্ত্রের আভাস আপনাকে দিয়েছেন কখনও?
না, চুপ করে কি ভাবলো আলভারো। তারপর বললো, মিস্টার রেডফোর্ডের উইলের কথা জেনে গেছে লোকগুলো, যারা আমার ওপর চড়াও হয়েছিলো। তার মানে জিনিসটার কথাও জানে ওরা। কি করে জানলো?
সেটা আমিও বুঝতে পারছি না, জোরে নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। উইলের কথাটা গোপন রাখা হয়েছে। শুধু আমরা কয়েকজন জানি।
ভ্রূকুটি করলো আলভারো। এসব ব্যাপারে জড়াতে আমার ভালো লাগে না। কিন্তু কি আর করবো, কথা যখন দিয়েছি… দেখি খোঁজখবর করে। ডা স্টেফানো এখন কোথায় খুঁড়ছে বের করতে পারি কিনা।
থ্যাংকস।…আচ্ছা, অনেক আগে নাকি একজন মহান অ্যাজটেক নেতা ছিলেন, নাম মাক্সিল ডা স্টেফানো?
হ্যাঁ। কেন জিজ্ঞেস করেছো বুঝতে পেরেছি। ঠিকই অনুমান করেছো তুমি। আজকের আরকিওলজিস্ট এমিল ডা স্টেফানো সেই স্টেফানোরই বংশধর।