না, সেজন্যে আসিনি, এগিয়ে এলো কিশোর। আসলে, অ্যাজটেক যোদ্ধার ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্ন করতে এসেছি।
তা বাবা, আমি তো সেটা ভালো বলতে পারবো না। আমি সামান্য দোকানদার। আরকিওলজিস্ট নই। বলতে পারবে আরকিওলজিস্টরা। সব চেয়ে ভালো হয়, মিউজিয়ামে চলে যাও, কিউরেটরের সঙ্গে দেখা করো…
করবো। আচ্ছা, খুব মাল বিক্রি হয় আপনার দোকানে, তাই না?
মোটামুটি।
কি ধরনের জিনিস বেশি চলে?
এই ছুরি, পিস্তল, এসব। অস্ত্র।
মূর্তি?
খুব বেশি না। তবে কাল একটা আজব ব্যাপার ঘটেছে। প্রায় দেড় ডজন অ্যাজটেক যোদ্ধার মূর্তি কিনে নিয়ে গেছে একজন। মনে হলো, আরও থাকলে আরও কিনতো। পাগল! অথচ ওই মূর্তি খুব একটা বিক্রি হয় না এখানে।
সুযোগ পেয়ে গেল কিশোর। জিজ্ঞেস করলো, লোকটা কেমন? ওরকম একজনকে চিনি আমরা, মূর্তি কেনার পাগল, শেষ কথাটা মিথ্যে বললো সে। কথা আদায়ের জন্যে। তবে জবাব শুনে বুঝলো, একেবারে মিথ্যে বলেনি। লোকটা ওদের পরিচিতই। অন্তত দেখেছে, ওকে। ল্যারি কংকলিনকে যে লোক কিডন্যাপ করেছিলো, ভুয়া পুলিশ অফিসার সেজে যে ওদের ট্যাক্সিতে চড়েছিলো, তার সঙ্গে মূর্তি কিনেছে যে লোক, তার চেহারার বর্ণনা হুবহু মিলে গেল।
অ্যানটিক আর সুভনির নিয়ে আরও কয়েকটা কথা বলার পর আচমকা প্রশ্ন করে বসলো কিশোর, আচ্ছা, পিন্টো আলভারো নামে কাউকে চেনেন আপনি? আপনার বাড়ি তো এখানে। নামটা শুনেছেন?
ওরকম নামে তো কতো লোকই আছে এখানে।
তা আছে। তবে একজন বিশেষ লোককে খুঁজছি আমরা, পকেট থেকে ছবি বের করে দেখালো কিশোর।
চশমা লাগিয়ে ভালো করে ছবিটা দেখলেন মালিক। ধীরে ধীরে মাথা দোলালেন। বোধহয় চিনি। কয়েকবার দেখেছি একে। আমার দোকানেও ঢুকেছে। টুলে ট্রীর কাছে থাকে। ওখান থেকে মিটলা খুব কাছে তো, গিয়ে খুঁড়তে সুবিধে হয় বোধহয় মেকসিকান ধ্বংসস্তুপের একজন বিশেষজ্ঞ এই লোক।
টুলে ট্রী কী এবং কোথায় জিজ্ঞেস করলো কিশোর। শুনে ধক করে উঠলো বুক। বুঝলো, পেয়ে গেছে। এই লোককেই খুঁজছে। মনে পড়লো, স্লাইডের বিশাল গাছটার কথা।
মিটলা হলো একটা ধ্বংসস্তূপ, মালিকের কাছে জানতে পারলো কিশোর। ওই দোকানে ম্যাপও আছে। ওখানকার একটা ভালো ম্যাপ কিনে নিয়ে, ভদ্রলোককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে এলো হোটেলে।
ডা স্টেফানোর কথা জিজ্ঞেস করেছে দোকানদারকে, কিছু বলতে পারেননি তিনি। তবে তাতে কিছু এসে যায় না, বুঝতে পারছে কিশোর। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি করে আলভারোকে বের করতে পারলেই বেরিয়ে আসবেন ডা স্টেফানো। কোনো সন্দেহ নেই আর এখন তার।
১৩
হোটেলে ফিরে ম্যাপ নিয়ে বসলো কিশোর। আর গাইডবুক পড়তে লাগলো রবিন। মুসা বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।
মিটলা ধ্বংসস্তুপে যাওয়ার পথেই পড়ে টুলে ট্রী। ম্যাপ থেকে মুখ তুলে কিশোর বললো, দরকার হলে একেবারে মিটলাতেই চলে যাবো। মনে আছে, একটা ছবিতে ছিলো, বিশাল এক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক লোক?
সিনর স্টেফানোকেও ওখানেই পাবে ভাবছো? মুসার প্রশ্ন। টুলেট্রীতে?
পেতেও পারি। কিংবা মিটলাতে। টুলে ট্রী থেকে মিটলা বেশি দূরে নয়।
গাইডবুক থেকে মুখ তুলে রবিন বললো, জানো, গাছটা তিন হাজার বছরের পুরানো! আমেরিকান কন্টিনেন্টের সম্ভবত সব চেয়ে পুরানো গাছ ওটা।
কি গাছ? মুসা জিজ্ঞেস করলো। সাইপ্রেস। সবুজ সাইপ্রেস।
এতো বছর বেঁচে আছে! খাইছে! ইস, আমি যদি এতোদিন বাঁচতাম! কতো কিছু দেখতে পারতাম, খেতে পারতাম!
তার কথায় হেসে ফেললো কিশোর। তোমার খালি খাওয়ার কথা। এক কাজ করলেই পারতে। গাছ হয়ে গেলেই হতো। মাটির ওপর শেকড় গেড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে, আর খালি রস টানতে মাটি থেকে…
নাহ, গাছ হয়ে লাভ নেই। বেঁচে থাকে বটে। নড়তে চড়তে পারে না, পাখিরা বাসা বাঁধে, পায়খানা করে। লোকে মড়াৎ করে ডাল ভেঙে ফেলে, পাতা ছেড়ে। না, বাপু, মানুষ হয়ে বাঁচতে পারলেই খুশি হতাম আমি…
ভূত হলে? হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো রবিন।
ভেবে দেখলো মুসা। তা হতাম। মানুষ হওয়ার চেয়ে অনেক ভালো। কেউ দেখতে পেতো না আমাকে। যা ইচ্ছে করতে পারতাম। যেখানে খুশি যেতে পারতাম। আর খাওয়া! সে তো যখন যা খুশি! যে রেস্টুরেন্টে যা পাওয়া যায়, যা খেতে ইচ্ছে করতো…নারে ভাই, ভূতই হওয়া উচিত ছিলো।
বেরোনোর সময় ম্যানেজার জানতে চাইলো, আবার কোথায় যাচ্ছে ওরা। এতে তাড়াতাড়ি বেরোচ্ছে দেখে কৌতূহল হয়েছে লোকটার। জানালো কিশোর।
টুলেট্রীর দিকে গাড়ি চালালো মুসা। ম্যাপ দেখে রাস্তা বাতলে দিতে থাকলো কিশোর। শহর ছাড়িয়ে আরও কয়েক মাইল আসার পর মস্ত গাছটার দেখা মিললো। মুসা বললো, এই যে, সাইপ্রেস গাছের দাদার দাদা।
পেছন থেকে রবিন মন্তব্য করলো, শুধু দাদার দাদা না, তারও অনেক বেশি।
গাছটাকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে একটা পার্ক। দর্শনীয় জিনিস। টুরিস্টরা আসে। গাড়ি থেকে নেমে হাঁ করে গাছটার দিকে তাকিয়ে রইলো তিন গোয়েন্দা। বিশ্বাসই করতে ইচ্ছে করছে না, তিন হাজার বছর ধরে বেঁচে রয়েছে ওই গাছ। পৃথিবীর কতো পরিবর্তনের নীরব সাক্ষি। ওই গাছের বিশালত্ব আর বয়েসের কাছে নিজেদেরকে বড় ক্ষুদ্র মনে হতে লাগলো ওদের।
আশ্চর্য! বিড়বিড় করলো রবিন।