পাথরটাকে গাড়ির বুটে রেখে দিয়ে এলো ওরা। মুসাকে যেখানে বাড়ি মারা হয়েছিলো, সেজায়গাটায় এসে দেখতে লাগলো কিছু পাওয়া যায় কিনা। গাইড বুক বলছে, কিশোর বললো। এটা সাত নম্বর কবর। অনেক মূল্যবান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে এখানে। স্টেট মিউজিয়ামে রাখা আছে ওগুলো।
আরও অনেক খোঁজাখুঁজি করলো ওরা। যে ঘরটায় মুসাকে ফেলে রাখা হয়েছিলো, সেটাতেও খুঁজলো। কিছু পাওয়া গেল না।
আর থাকার প্রয়োজন মনে করলো না কিশোর। তাছাড়া পাথরটাকে ভালোমতো পরীক্ষা করে দেখার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে সে। হতো না, যদি ওটাতে অ্যাজটেক যোদ্ধার ছবি আঁকা না থাকতো।
হোটেলে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না, ওদেরকে চোর ভেবে বসতে পারে। সোজা অজাকার মিউজিয়ামে চলে এলো ওরা। কিউরেটরের সঙ্গে দেখা করলো।
পাথরটা অফিসে এনে ম্যাগনিফাইং গ্লাস আর আরও নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন কিউরেটর। অবশেষে মুখ তুললেন, ভালো। খুব ভালো। তবে সাংঘাতিক কিছু না। এরকম জিনিস পাওয়া যায়।
কোনোই বিশেষত্ব নেই? নিরাশই হয়েছে কিশোর।
আছে, ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কিউরেটর বললেন। কোণের কাছে খরগোশের ছবি আর কয়েকটা বৃত্ত আঁকা আছে দেখ। এটা একটা অ্যাজটেক ক্যালেন্ডার। খরগোশ দিয়ে বছর গুনতো ওরা। একে বলে খরগোশ বছর। আমাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটা পনেরোশো দশ সাল।
কিন্তু এটা বের করলো কে? রবিনের প্রশ্ন। পিরামিডের মাথায় নিশ্চয় আপনাআপনি ওঠেনি?
না, তা তো নয়ই, মাথা নাড়লেন কিউরেটর। হয়তো কোনো কবরের ভেতরে পেয়েছে কেউ।
কিন্তু ওখানে গেল কি করে? কিশোর বললো। পিরামিডের ওপরে?
একথার জবাব দিতে পারলেন না কিউরেটর। তাঁর কাছেও রহস্যময় লাগলো ব্যাপারটা।
মিউজিয়াম থেকে ফেরার পথে বিড় বিড় করে যেন নিজেকেই বোঝালো কিশোর, জবাব একটাই হতে পারে। আমাদেরকে ফাঁকি দিতে চেয়েছে। পেয়েছে কোনো কবরের ভেতর। ভেঙে এনেছে। ফেলে রেখেছে আমাদেরকে বোঝানোর জন্যে, যে এটাই অ্যাজটেক যোদ্ধা। যাতে আমরা এটা নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরে যাই।
কারা?
আর কারা? যারা আমাদের পিছে লেগেছে। যারা মুসাকে বাড়ি মেরেছে। যারা হুমকি দিয়ে নোট লিখেছে। এভাবে ফাঁকি দেয়ার জন্যেই মনটি অ্যালবানে টেনে এনেছে আমাদের।
তোমার কি মনে হচ্ছে, যারা নোট লিখেছে তারা দেশপ্রেমিক তরুণের দল নয়?
না। ওটাও আরেকটা চালাকি। তরুণদের ওপর নজর ফেলতে চেয়েছে। আমাদের এবং পুলিশের। নিজেরা আড়ালে থাকতে চেয়েছে।
১২
খুশিতে প্রায় নাচতে নাচতে হোটেলে ফিরলো মুসা। হাতে একটা মূর্তি। ছোট। জানালো, এক সুভনিরের দোকান থেকে অ্যাজটেক যোদ্ধার মূর্তিটা কিনে এনেছে সে। কিশোরকে দেখিয়ে বললো, এটাই, কি বলো?
না, মাথা নাড়লো কিশোর। এ-হতেই পারে না। সাধারণ মূর্তি। এখনকার কুমোরদের তৈরি…
কিন্তু সেলসম্যান যে বললো, কবর খুঁড়ে পাওয়া!
ফাঁকি দিয়েছে। মিথ্যে কথা বলেছে বিক্রি করার জন্যে। আসল জিনিস হলে ওটা দোকানে যেতো না, মিউজিয়ামে থাকতো।
চোরাই মালও তো হতে পারে?
উঁহু। তাহলে অতো খোলাখুলি বেচতে পারতো না। পুলিশের ভয় তো আছেই। সব চেয়ে বেশি ভয় তরুণ দেশপ্রেমিকদের।
তা বটে! হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছো। নইলে একরকমের এতো মূর্তি আসতে দোকানে…
মানে?
লোকটা বললো, আরও অনেকগুলো মূর্তি নাকি ছিলো। এটার মতোই। অ্যাজটেক যোদ্ধা। কাল একটা লোক সব কিনে নিয়ে গেছে। এটা পড়ে ছিলো বাক্সের তলায়, কাল পাওয়া যায়নি। আজ বাক্সের খড়টড় ফেলতে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।
কাল পেলে এটাও কিনে নিয়ে যেতো? রবিনের প্রশ্ন।
তাই তো মনে হয়, জবাব দিলো মুসা।
কে কিনেছে জিজ্ঞেস করেছো? কিশোর জিজ্ঞেস করলো। এতো আগ্রহ কেন অ্যাজটেক যোদ্ধার মূর্তির ওপরে?
না তো!
ভুল করেছো। চলো।
কোথায়?
দোকানে। লোকটা কেমন দেখতে, জিজ্ঞেস করবো। আমার বিশ্বাস, এই লোকই আমাদের পেছনে লেগেছে। আমাদের মতোই অ্যাজটেক যোদ্ধাকে খুঁজছে সে-ও।
মনটি অ্যালবানে গিয়ে কি পেয়েছে, খুলে বললো মুসাকে রবিন আর কিশোর। মুসা জানালো, সে-ও মিউজিয়ামে গিয়েছিলো। খোঁজখবর করেছে অ্যাজটেক যোদ্ধার ব্যাপারে। তদন্তের কাজে লাগতে পারে তেমন কিছু জানতে পারেনি।
দোকানে গেলে জানতে পারবো, কিশোর বললো। যোদ্ধার ব্যাপারে না হোক, লোকটার ব্যাপারে পাবোই। চলো।
নানারকম জিনিসে ঠাসা দোকানটা। ছোটখাটো আরেকটা মিউজিয়ামের মতোই লাগে। কাঁচের শো-কেসে সাজানো রয়েছে নানারকম প্রাচীন অস্ত্র, আধুনিক নির্মাতাদের তৈরি। পিস্তল আর ছুরি রয়েছে নানারকম। দেয়ালে ঝোলানো রয়েছে শিরস্ত্রাণ, ধাতব পোশাক আর বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন আকৃতির তলোয়ার, ভোজালি।
ডাক শুনে পেছনের ছোট একটা ঘর থেকে বেরোলেন মাঝবয়েসী একজন হাসিখুশি মানুষ। কি চায়, জিজ্ঞেস করলেন।
কাউন্টারের দিকে নির্দেশ করে মুসা জানতে চাইলো, ওই লোকটা কোথায়?
কে? ও, হুগো? খেতে গেছে। আমি এই দোকানের মালিক। বলো, কি চাই?
না, কিছু চাই না। খানিক আগে একটা পুতুল কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। অ্যাজটেক যোদ্ধা। ওটা কি আসল?
হাসলেন দোকানের মালিক। একই সাথে বিরক্তও হলেন। তাই বলেছে বুঝি? এই হুগোটাকে নিয়ে আর পারি না। কতোবার মানা করেছি, মিথ্যা কথা বলে মাল বিক্রির দরকার নেই। শোনে না। তো, আসল নয় জেনে নিরাশ হয়েছো? ফেরত দিতে চাও?