আরকিওলজিস্ট? নাম শুনেছি, মাথা নাড়লেন ক্যাপ্টেন। আর পিন্টো আলভারো অনেক আছে এদেশে। কজনের কথা বলবো? কাছেই থাকে একজন। পিন্টো আলভারো রবার্টো হারমোসা আলবার্টো সানচেজ।
চোখ কপালে তুললো রবিন। একজনের নাম, না তিনজনের?
হাসলেন ক্যাপ্টেন। একজনেরই। ম্যাটাডর।
মানে বুল ফাইটার? ভুরু কোঁচকালো কিশোর।
মাথা ঝাকালেন ডগলাস।
না, তাকে আমাদের দরকার নেই। আমরা যাকে খুঁজছি, ও আর যাই হোক, বুল ফাইটার নয়।
তবে কি আরেকজন আরকিওলজিস্ট?
তা হতে পারে।
আরকিওলজিস্টেরও অভাব নেই এদেশে। মেকসিকান তো আছেই, বাইরে থেকেও প্রচুর আসে। শুনেছি, খুব বড় একজন আরকিওলজিস্ট কাজ করছেন এখন মনটি অ্যালবানে। তিনিই ডা স্টেফানো হতে পারেন, জানি না।
কয়েকটা সেকেন্ড নীরবে ভাবলেন পুলিশ অফিসার। তোমাদেরকে খুব একটা সাহায্য করতে পারছি না। দেখ, তোমরা যদি কিছু বের করতে পারো। তবে নোটটা রেখে দিলাম। অতি দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে একটা প্রমাণ রইলো। আবার যদি কিছু করে ধরতে পারবো। খুব সাবধান। ওরা ডেনজারাস। বুঝেই তো গেছ সেটা।
হোটেলে ফেরার সময় ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলো কিশোর। আসলেই কি দেশপ্রেমিক তরুণেরা হামলা করেছে ওদের ওপর? নাকি অ্যাজটেক যোদ্ধাকে যারা খুঁজছে, তারা?
কাল সকালেই বেরোতে হবে, রবিন বললো। বোঝা গেল একই ভাবনা চলেছে তার মাথায়ও। আর দেরি করা যায় না। মনটি অ্যালবানে গিয়ে তদন্ত করতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি পারা যায় এই রহস্যের সমাধান করে ফেলা উচিত।
হ্যাঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর।
পরদিন সকালে রাক্ষুসে খিদে পেয়ে গেল যেন মুসার। ফল, সিরিয়াল, ডিম, গরুর মাংস ভাজা, আর বড় বড় দুটো পাউরুটি দিয়ে নাস্তা সেরে তৃপ্তির ঢেকুর তুললো। অনেকটা সুস্থ বোধ করছে। তাকে নোটটার কথা জানালো রবিন আর কিশোর। রাতে যে থানায় গিয়েছিলো সেকথাও বললো।
চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, মনটি অ্যালবানে যাচ্ছাে নাকি?
নিশ্চয়, কিশোর বললো।
চলো, আমিও যাবো। ব্যাটারা এলে বাড়ি মারার শোধ না নিয়েছি তো আমার নাম মুসা আমান নয়।
না, তোমার আজ ওখানে যাওয়ার দরকার নেই। শরীর এখনও ঠিক হয়নি। ওখানে ঘোরার অনেক ধকল, সহ্য করতে পারবে না। ঘরে বসে থাকতে ভালো না লাগলে বরং আরেক কাজ করো, শহরে স্টেট মিউজিয়ামে চলে যাও। কিউরেটরের সঙ্গে আলাপ করতে পারো ইচ্ছে হলে। জানার চেষ্টা করবে অ্যাজটেক যোদ্ধা সম্পর্কে। সূত্র পেয়েও যেতে পারো।
তা মন্দ বলোনি। মিউজিয়াম দেখতে ভালোই লাগে আমার।
কাপড় পরে দুই সহকারীকে নিয়ে নিচে নামলো কিশোর। রকি বীচের খবর জানা দরকার। মিস্টার সাইমনকে ফোন করলো। এখানকার সমস্ত খবর জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তিনি কতখানি এগিয়েছেন। ডিটেকটিভ বললেন, প্রায় কিছুই না। জ্যাক আর আমি কয়েকবার করে গিয়েছি রেডফোর্ড এস্টেটে, লাভ হয়নি। জ্যাক ফাইবার তার সহকারী, আরেকজন তুখোড় গোয়েন্দা।
সাইমনের কথা থেকে নতুন একটা খবরই জানতে পারলো কিশোর, তা হলো, যে গাছটায় অ্যাজটেক যোদ্ধার মাথা আঁকা আছে, তাতে আরও একটা ছবি আঁকা রয়েছে। ছোট একটা তীর, জানালেন তিনি। খুব ভালো করে না তাকালে চোখেই পড়ে না। দেখে মনে হলো কোনো কিছু নির্দেশ করতে চেয়েছে। আমি আর জ্যাক অনেক জায়গায় খুঁড়েছি, পাইনি কিছু।
আর কাউকে এস্টেটে রহস্যজনক ভাবে ঢুকতে দেখা গেছে কিনা, কিশোরের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, না। পুলিশ কড়া নজর রাখছে। তারপর কিশোরদেরকে সাবধান থাকতে বলে, গুড লাক জানিয়ে লাইন কেটে দিলেন তিনি।
বেরিয়ে পড়লো তিন গোয়েন্দা। শহরের দিকে চলে গেল মুসা। কিশোর আর রবিন মনটি অ্যালবানের দিকে। হোটেলের নিউজ স্ট্যান্ড থেকে মনটি অ্যালবানের ওপর লেখা একটা পুস্তিকা কিনে নিয়েছে কিশোর।
দিনের আলোয় পুরানো শহরটাকে অনেক বেশি জমকালো মনে হলো রাতের চেয়ে। সত্যি, দেখার মতো। এতো প্রাচীন কালে যখন যান্ত্রিক সুবিধা বলতে গেলে ছিলোই না, তখন কিভাবে এরকম একটা শহর গড়া হয়েছিলো, দেখলে অবাক না হয়ে পারা যায় না।
ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো দুজনে। বিরাট বিরাট মন্দির, স্তম্ভ, প্রাকার, পিরামিড তৈরি করা হয়েছে পাথর দিয়ে। প্রাকারের গায়ে নানারকম চির আঁকা হয়েছে পাথর কুঁদে। পাথরের তৈরি মূর্তিও রয়েছে অনেক। রাতের বেলা যে পিরামিডের ওপরে আলো দেখা গিয়েছিলো, তার নিচে এসে দাঁড়ালো দুজনে। চ্যাপ্টা চূড়ায় উঠে এলো। ওপর থেকে নিচে তাকিয়ে পুরো শহরটা দেখা যায়।
একবার তাকিয়েই সূত্র খুঁজতে শুরু করলো কিশোর। একটা ভাঙা পাথরের টুকরো দৃষ্টি আকর্ষণ করলো তার। আস্ত বড় কোনো পাথর থেকে ভেঙে আনা হয়েছে টুকরোটা, দুই বাই তিন ফুট, চার ইঞ্চিমতো পুরু। একটা কোণ ভাঙা। একটা ছবি খোদাই করা রয়েছে ওটাতে।
অ্যাজটেক যোদ্ধা! উত্তেজনায় স্বাভাবিক স্বর বেরোলো না রবিনের, ফিসফিসিয়ে বললো। আশ্চর্য! এটা এখানে কেন?
হয়তো এটাই নিতে উঠেছিলো লোকটা। তাড়াহুড়োয় বা অন্য কোনো কারণে ফেলে গেছে। হয়তো মূল্যবান কোনো আবিষ্কার।
কি জানি! পাথরটা তোলার চেষ্টা করলো কিশোর। বেজায় ভারি। দুজনের পক্ষে বয়ে নেয়াই মুশকিল। হাত থেকে ফেলে দিলে ভেঙে নষ্ট হতে পারে। খুব সাবধানে জিরিয়ে জিরিয়ে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো ওরা। নিরাপদেই নামিয়ে আনলো অবশেষে। আর কেউ নেই তখন। একেবারে নির্জন। বোধহয় দর্শকদের আসার সময় হয়নি এখনও।