বাড়ি মেরেছিলো, না? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
ম-মনে হয়, দুর্বল কণ্ঠে জবাব দিলো মুসা। ঝাড়া দিয়ে যেন ঘোলাটে মগজ পরিষ্কার করতে চাইলো। তোমরা ভালোই আছো মনে হয়। ভালো। লোকদুটোকে দেখলাম, হকিস্টিক হাতে তোমাদেরকে হুঁশিয়ার করেও সারতে পারলাম না। ধা করে মেরে বসলো আমাকে। তারপর সব কালো। আমার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলে, না?
হ্যাঁ, রবিন বললো। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। নিজে মার খেয়ে আমাদের বাঁচিয়েছো।
আরে না, হাত নাড়লো মুসা। অতোটা হীরো নই আমি। চিৎকার না করলেও আমাকে মারতো ওরা। কারণ আমিই ছিলাম সবার পেছনে, আবার টলে উঠলো সে।
তাড়াতাড়ি তাকে ধরে ফেললো কিশোর আর রবিন। একটা পাথরের ওপর বসিয়ে দিলো জিরিয়ে নেয়ার জন্যে। আপাতত হোটেলে ফেরারই সিদ্ধান্ত নিলো। মুসাকে ধরে ধরে নিয়ে এগোলো গাড়ির দিকে। কিশোর আশঙ্কা করছে, লোকগুলো কোথাও লুকিয়ে থেকে ওদের ওপর চোখ রাখছে। সুযোগ পেলেই হয়তো বেরিয়ে এসে আবার হামলা চালাবে।
কিন্তু না, কেউ বেরোলো না। নিরাপদেই গাড়িতে উঠতে পারলো ওরা। ড্রাইভিং সীটে বসলো কিশোর। গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবতে লাগলো, কে লোকগুলো? কোথা থেকে এলো? কেন পিছু লেগেছে ওদের? অ্যাজটেক যোদ্ধাকে যারা খুঁজছে, তাদেরই কেউ? তদন্ত করা থেকে বিরত করতে চাইছে ওদেরকে?
একই ভাবনা চলেছে মুসা আর রবিনের মনেও। মুসা বললো, আমি সব ভজঘট করে দিলাম। কিশোর, পিরামিডের ওপরে কে আলো জ্বেলেছিলো, জেনেছো? শয়তান লোকগুলোই গিয়ে উঠেছিলো ওখানে?
মনে হয় না, কিশোরের দৃষ্টি রাস্তার ওপরে নিবদ্ধ। ওরা নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে চায়। অতো খোলা জায়গায় যাবে না। কাল দিনের বেলা আবার যাবো মনটি অ্যালবানে। দেখি, কোনো জবাব মেলে কিনা।
আর কিছু বললো না মুসা। আহত জায়গাটা ব্যথা করছে। মাথা ঘুরছে অল্প অল্প। আগামী দিন রবিন আর কিশোরের সঙ্গে বেরোতে পারার শক্তি পাবে বলে মনে হলো না তার। তবে রাতের বেলা ভালো একটা ঘুম দিতে পারলে বলা যায়, সুস্থও হয়ে যেতে পারে সকালে।
হোটেলে ঘরে পৌঁছেই বিছানায় গড়িয়ে পড়লো মুসা। কাপড় খোলারও শক্তি নেই!
দাঁড়াও, খুলে দিচ্ছি, কিশোর বললো।
সে আর রবিন মিলে প্রথমে মুসার জ্যাকেট খুলে ঝুলিয়ে রাখলো। তারপর খুললো জুতো আর মোজা। সবশেষে প্যান্ট। চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো মুসা। মাঝে মাঝে নিদ্রাজড়িত কণ্ঠে শুধু বললো, কি করো, কি করো!
শাট খুলতে গিয়ে বুক পকেটে একটা কাগজ পেলো রবিন। জিজ্ঞেস করলো, আই মুসা, এটা কি? এই কাগজটা?
আমি কোনো কাগজ রাখিনি…
ভাঁজ খুলে ফেললো রবিন। পড়ে বিস্ময় ফুটলো চোখে। তাকিয়েই রয়েছে কিশোর। ব্যাপারটা নজর এড়ালো না তার। জিজ্ঞেস করলো, কি?
নীরবে কাগজটা বাড়িয়ে ধরলো রবিন। কিশোরও পড়লোঃ বাড়ি যাও। আমাদের গুপ্তধন ছিনিয়ে নেয়ার কোনো অধিকার তোমাদের নেই। কথা না শুনলে মরবে।
১১
পুলিশকে জানানো দরকার, কিশোর বললো চিন্তিত ভঙ্গিতে। আলোচনা করে দুজনেই একমত হলো। মুসা ঘুমিয়ে পড়েছে, সে এসবের কিছু জানলো না।
হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, রাতে এখন রাস্তায় বেরোনো উচিত হবে কিনা। প্রশ্নটা অবাক করলো লোকটাকে। যেন বুঝতে পারছে না, রাতের বেলা আর দিনের বেলা রাস্তায় বেরোনোর কি তফাৎ থাকতে পারে। চোর-ডাকাতের ভয় আছে কিনা, একথা কিশোর বুঝিয়ে বললে ম্যানেজার। জবাব দিলো, অকজাকার পুলিশ খুবই সতর্ক। এখানে কোনো রকম অঘটন ঘটে না।
তাই নাকি? না বলে পারলো না রবিন। এই তো খানিক আগেই আমার বন্ধুকে পিটিয়ে বেহুশ করে দিলো কয়েকটা ডাকাত। ঘটে না মানে?
আরেক দিকে মুখ ফিরিয়ে ম্যানেজার বললো, তাহলে ওরা বাইরের লোক। এখানকার লোক খারাপ না।
এই লোকের সঙ্গে তর্ক করা বৃথা, বুঝতে পেরে, থানাটা কোথায় জেনে নিয়ে রবিনকে সহ বেরিয়ে এলো কিশোর। তখন ডিউটিতে রয়েছেন ক্যাপ্টেন ডগলাস। মনটি অ্যালবানে যা যা ঘটেছে খুলে বললো তাকে দুজনে।
ভ্রূকুটি করলেন অফিসার। তাই! এখানে অপরাধ খুব কমই ঘটে! আশ্চর্য! কাগজটা এনেছো?
বের করে দিলো রবিন। পড়তে পড়তে ভাঁজ পড়লো ডগলাসের কপালে। মুখ তুলে বললেন, হুঁ, বুঝতে পারছি। একদল তরুণ আছে এই এলাকায়, বেশি দেশপ্রেমিক। তাদের উদ্দেশ্যটা ভালোই, তবে মাঝেসাঝে বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে। আইন বিরোধী কাজ করে বসে।
ওরা কি করে, জানতে চাইলো কিশোর।
ক্যাপ্টেন জানালেন, বাইরে থেকে কেউ এলেই তাদের পেছনে লাগে। তাদের ধারণা, যে-ই আসুক, মেকসিকো থেকে প্রাচীন নিদর্শন সব বের করে নিয়ে যাবে। ঠেকানোর জন্যে উঠে পড়ে লাগে ওরা। বাইরের কেউ কিছু আবিষ্কার করলে কেড়ে নিয়ে গিয়ে মিউজিয়ামে জমা দেয়, হাসলেন তিনি। অকজাকার স্টেট মিউজিয়াম সাংঘাতিক। দেখলে বুঝবে। অনেক অমূল্য সংগ্রহ রয়েছে ওখানে।
বাইরে থেকে কেউ এলেই যে তারা চোর হবে, প্রতিবাদের সুরে বললো রবিন। তা ঠিক নয়।
আমরা সেটা বুঝি, ক্যাপ্টেন বললেন। কিন্তু ওই মাথা গরম ছেলেগুলোকে বোঝানো শক্ত। ফ্যানাটিক।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলো কিশোর, তথ্য বের করে নিতে চাইলে ডগলাসের কাছ থেকে, দুজন লোককে খুঁজতে এসেছি আমরা। ঠিক বেড়াতে আসিনি। সেজন্যেই গিয়েছিলাম মনটি অ্যালবানে। একজনের নাম পিন্টো আলভারো, আরেকজন ডা স্টেফানো তিনি আরকিওলজিস্ট।