দলিলটা মন দিয়ে পড়তে শুরু করলেন সাইমন।
কিশোর জিজ্ঞেস করলো, নাম শুনে তো মনে হচ্ছে স্প্যানিশ, লোকটা কে বলতে পারবেন?
না, জবাব দিলেন উকিল।
অ্যাজটেক যোদ্ধা কে, কি তার সম্পত্তি, এ-ব্যাপারে কিছু জানেন কিনা জিজ্ঞেস করলো রবিন। কিছুই বলতে পারলেন না উকিল।
পুরানো কোনো মূর্তি-টুর্তি হতে পারে, আন্দাজ করলো কিশোর।
কি জানি। মিস্টার রেডফোর্ডের বাড়িতে তেমন কোনো মূর্তি নেই, ফাউলার বললেন।
স্টাফ করা কোনো পাখি বা জন্তু আছে? ডানাওয়ালা সাপ পবিত্র ছিলো অ্যাজটেকদের কাছে।
ওরকম কিছুই পাইনি মিস্টার রেডফোর্ডের বাড়িতে, ফাউলার বললেন। কোনো ছবিও না। এমন কিছু চোখে পড়েনি, অ্যাজটেক যোদ্ধার সঙ্গে যার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক আছে।
জটিল এবং মজার একটা রহস্য। আগ্রহী হলেন সাইমন। বললেন, নিক, কেসটা নিলাম। আমি আর তিন গোয়েন্দা মিলে কাজ করলে সমাধান করে ফেলতে পারবো। সময় লাগবে না।
ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে কিশোর। বেশ কিছুদিন ধরে রহস্য না পেয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ করে এরকম একটা পেয়ে যাবে, ভাবতেও পারেনি। পুলকিত হয়ে উঠেছে। সাইমনকে জিজ্ঞেস করলো, কখন থেকে কাজ শুরু করবো, স্যার?
পারলে এখন থেকেই করো।
তাহলে রবিনকে নিয়ে একবার রেডফোর্ড এস্টেটে যেতে চাই, এখুনি। দেখা দরকার। কোনো সূত্র মিলতে পারে।
উকিল বললেন, তিনি ওদেরকে নিয়ে যেতে রাজি আছেন। সাইমন জানালেন, যেতে পারবেন না। আরেক জায়গায় জরুরী অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। দরকার হলে পরে যাবেন রেডফোর্ড এস্টেটে। তাছাড়া কিশোর যখন যাচ্ছে, তার নিজের আর যাওয়ার তেমন প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছেন না।
সাইমন চলে গেলেন তার কাজে। দুই গোয়েন্দাকে নিয়ে এস্টেটে রওনা হলেন ফাউলার। শহর ছাড়িয়ে চলে এলেন পার্বত্য এলাকায়। একটা পথের পাশে বিরাট এক প্রাইভেট এস্টেট ছিলো, সেটা ভেঙে এখন হাউজিং ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। এরকম করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন রেডফোর্ড। তার রহস্যের সমাধান হলেই এই হাউজিং সোসাইটির মালিক হয়ে বসবে উত্তরাধিকারীরা। অনেক টাকার মালিক। কিশোর আর রবিনকে এসব কথা জানালেন উকিল।
আরো কিছুদূর এগিয়ে মোড় নিলেন ফাউলার। পুরানো পাইনের সারির ভেতর দিয়ে চলে গেছে একটা পথ। সেই পথ ধরে চলে এলেন বিশাল এক বাড়ির সামনে। ভিকটোরিয়ান আমলের বাড়ি। চারপাশ ঘিরে পাতাবাহারে বেড়া গাড়িবারান্দায় গাড়ি রেখে নামলেন উকিল। দুই গোয়েন্দাও নামলো।
চওড়া আর অনেক উঁচু সিড়ি বেয়ে সামনের বারান্দায় উঠে এলো তিন জনে। সদর দরজার হুড়কো খুললেন ফাউলার। ছেলেদেরকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।
ভেতরটা আকর্ষণীয়। চকচকে পালিশ করা মেহগনি কাঠের আসবাবপত্র। বড় বড় জানালায় টকটকে লাল মখমলের পর্দা। ছাতের সামান্য নিচ থেকে শুরু হয়েছে, নেমে এসেছে মেঝের কাছাকাছি-এতো বড় জানালা। অনেক বড় একটা ফায়ারপ্লেসের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে মস্ত এক টেবিল, ঘরের এক কোণে।
ব্যাচেলরদের বাড়ি যা হয় তাই, ফাউলার বললেন। খোঁজ। সূত্র খুঁজতে খুঁজতেই বুঝে যাবে, কিভাবে বাস করতে পছন্দ করতেন মিস্টার রেডফোর্ড। বাড়িঘরের কাজ করার জন্যে অনেক লোক রেখেছিলেন তিনি। তাদের মাঝে মহিলাও ছিলো। তবে কোনো কিছুতেই যাতে কোনো মেয়েলী ছাপ না পড়ে সেদিকে কড়া নজর রাখতেন তিনি। তেমন কিছু করতে গেলেই কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিতেন মহিলা সার্ভেন্টদেরকে।
প্রথমে একতলার ঘরগুলোতে দ্রুত চক্কর দিয়ে এলো কিশোর আর রবিন। আন্দাজ করার চেষ্টা করলো কোনখান থেকে খোঁজা শুরু করলে সুবিধে হয়। টেবিল আর ছোট বড় বেদির ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে অনেক ধরনের মূর্তি– মধ্যযুগীয় রোমান যোদ্ধা, আঠারোশো শতকের ওয়েস্টার্ন বন্দুকবাজ কাউবয়, কুস্তিগীর, ঘোড়সওয়ার সৈনিক, এসব।
কি বুঝলে? জিজ্ঞেস করলেন ফাউলার। হলে অপেক্ষা করছিলেন ছেলেদের জন্যে। নিশ্চয় দেয়ালে ঠুকে ঠুকে দেখেছো, চোরকুঠুরি আছে কিনা…
দড়াম করে কি আছড়ে পড়লো ওপর তলায়। বিকট শব্দ। পুরো বাড়িটা যেন কেঁপে উঠলো।
কি হলো? ভুরু কুঁচকে ফেলেছে কিশোর।
কি জানি! আনমনে মাথা নাড়লেন ফাউলার। চলো তো দেখি!
একেক বারে দুটো করে সিড়ি টপকে দৌড়ে উঠে এলো ওরা দোতলায়। আলাদা হয়ে গিয়ে ঘরগুলোতে খুঁজতে শুরু করলো। কোনো ঘরেই কিছু পড়ার চিহ্ন দেখতে পেলো না।
চিলেকোঠায় ওঠার সিঁড়িঘরের দরজা খুলে ফেললেন ফাউলার। উঠতে শুরু করলেন। পিছে চললো দুই গোয়েন্দা। চিলেকোঠায় ঢুকে থমকে দাড়ালো। অসংখ্য বাক্স আর পুরানো আসবাব স্তূপ হয়ে আছে। তার মধ্যে বড় একটা মেহগনি কাঠের দেরাজ উল্টে পড়েছে। নিচে চাপা পড়েছে একজন মানুষ। বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, পারছে না।
মরে গেল তো! চেঁচিয়ে উঠলো রবিন।
লোকটাকে বের করে আনার জন্যে লাফিয়ে এগোলো কিশোর। তাকে সাহায্য করতে এগোলো রবিন আর ফাউলার। তুলে সোজা করে রাখলো দেরাজটা তারপর তাকালো লোকটার দিকে মাঝবয়েসী একজন লোক রোগা শরীর নরছে না আর এখন। বেহুশ হয়ে গেছে। কপাল কেটে রক্ত ঝরছে। চেহারা ফ্যাকাসে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে বসে নাড়ি দেখলো কিশোর। নাড়ির গতি ক্ষীণ।
অ্যামবুলেন্স ডেকে হাসপাতালে পাঠানো দরকার, ফাউলার বললেন। এখানে কি করতে এসেছিলো?