ল্যারির কথামতো সেই মাঠে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে পুলিশ। যেখানে নামিয়েছিলো, সেখানেই রয়েছে বিমানটা। সেটা নিয়ে আবার রকি বীচে ফিরে যাবে সে। ওড়ার জন্যে অনুমতি দরকার। ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্যে, চীফকে অনুরোধ করা হলো।
ঠিক আছে, বললেন চীফ। টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিলেন।
আরেকবার ফিসফিস করে কিশোরকে বললো ল্যারি, তোমাদেরকে কোনো সাহায্য করতে পারলাম না, সরি।
যা করেছেন, অনেক করেছেন, কিশোর বললো। আপনার কিডন্যাপের ঘটনাটা না ঘটলে পুলিশ এতো আগ্রহ দেখাতো না। বিপদে পড়ে যেতাম আমরা।
পুলিশের গাড়িতে করে চলে গেল ল্যারি। তাকে বিমানটার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। তিন গোয়েন্দা থানা থেকে বেরিয়ে এলো। আলোচনা করে ঠিক করলো, ইউনিভারসিটি অভ মেকসিকোতে যাবে। খোঁজখবর করবে ডা স্টেফানো নামে আরকিওলজির কোনো প্রফেসর আছেন কিনা। শহরের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়টা। ট্যাক্সি নিলো ওরা।
পথে অনেকগুলো বাড়ি চোখে পড়লো। সুন্দর রঙ। কংক্রীটের ওপরেও লাল রঙ করা হয়েছে। চমৎকার লন আর বাগান। উজ্জ্বল রঙের ফুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি গাড়ি পৌঁছলো। অবাক বিস্ময়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলো মুসা, খাইছে! দেখ, দেখ, কি সুন্দর! হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে সে বাড়িটার একধারের মোজাইকের কাজ করা দেয়ালের দিকে। লাইব্রেরিটা রয়েছে ওখানটাতেই।
মোজাইকে আঁকা রয়েছে মস্ত এক দানবীয় মূর্তি। একজন ইনডিয়ানের। মেকসিকোর ইনডিয়ান আর স্প্যানিশ ইতিহাসের কিছুটা আন্দাজ করা যায় বাকি ছবিগুলো দেখলে।
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিঙের কাছে এসে ড্রাইভারকে থামতে বললো, কিশোর। নেমে ভেতরে ঢুকে একজনকে জিজ্ঞেস করলো আরকিওলজি ডিপার্টমেন্টটা কোথায়। ওই ডিপার্টমেন্টের আরেকজন প্রফেসর ডক্টর হ্যাসিয়ানোর কথা বলে তাকে বলা হলো তিনি হয়তো জানতে পারেন।
ভালো মানুষ প্রফেসর হ্যাসিয়ানো। বেশ আন্তরিক। তিনি বললেন, সিনর ডি স্টেফানোকে চেনেন। ছবি দেখে সনাক্ত করলেন। বললেন, অনেক দিন দেখা হয় না। বেশি ঘোরাঘুরি করার স্বভাব। এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না। স্থায়ী কোনো ঠিকানাও নেই, অন্তত আমার জানা নেই।
তাকে খুঁজে বের করার উপায় আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর বললেন, পাওয়া খুব মুশকিল। বেশিরভাগ সময়ই কাটায় প্রাচীন ধ্বংসস্তূপগুলোতে। ইনটারেসটিং অনেক প্রাচীন নিদর্শন মাটি খুঁড়ে বের করেছে। তবে নিজে গিয়ে কখনও সরকারী লোকের কাছে কিংবা মিউজিয়ামকে দিয়ে আসেনি ওসব জিনিস, অন্য সব আরকিওলজিস্টরা যা করে। সব সময় অন্য লোকের হাতে পাঠায়।
কিশোর বললো, ডক্টর স্টেফানোকে তার খুব দরকার। জরুরী কাজে। হেসে বললো, কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে পাওয়াটা খুব কঠিন হবে।
তা হবে। কারণ মেকসিকোতে ধ্বংসস্তুপের অভাব নেই। তার অনেকগুলোই এখনও খোঁড়া হয়নি। কোনটাতে গিয়ে বসে আছে এখন ডক্টর কে জানে।
প্রফেসরকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে কিশোর বললো, ঠিক আছে, যাই। খুঁজে দেখিগে। ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যাবো।
ওদেরকে গুড লাক জানালেন হ্যাঁসিয়ানো। বললেন, স্টেফানোকে পেলে আমার কথা বলো। যেন দেখা করে। কয়েকটা ক্লাস নিতে বলবো। কিছু কিছু বিষয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান তার।
বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। ঘড়ি দেখলো কিশোর। আজ আর কোথাও যাওয়ার সময় নেই। কাল বেরোবো। সবচেয়ে কাছের ধ্বংসস্তূপটা হলো টিওটিহুয়াকান।
ওখানেই বন্ধুর ছবিটা তুলেছেন মিস্টার রেডফোর্ড, তাই না? মুসার প্রশ্ন। অ্যাজটেক যোদ্ধার পোশাক পরিয়ে?
হ্যাঁ।
ফেরার পথে বইয়ের দোকান থেকে একটা ম্যাপ আর একটা চার্ট কিনলো কিশোর। হোটেলে বসে বসে তিনজনে মিলে চার্ট দেখে বের করতে লাগলো, কোন কোন্ ধ্বংসস্তুপে গাড়িতে করে যাওয়া যায়। রেডফোর্ডের তোলা যে ছবিগুলোর প্রিন্ট করে নিয়েছে রবিন, সেগুলোও মন দিয়ে দেখতে লাগলো। যদি কিছু বের করতে পারে!
যেসব জায়গায় গাড়ি যায়, আগে সেখানে যাই, রবিন বললো। না পেলে তারপর অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা ভাববো। কি বলো?
মাথা ঝাঁকালো কিশোর।
টিওটিহুয়াকানের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখালো মুসা। এসব পুরানো ধ্বংসস্তূপ দেখতে খুব ভালো লাগে তার। মানুষের প্রাচীন ইতিহাস জানার প্রচন্ড কৌতূহল। মাঝে মাঝে তো দুঃখই প্রকাশ করে ফেলে, প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীতে জন্মালো না বলে। তাঁর জানা আছে, টিওটিহুয়াকান হলো টোলটেকদের ধর্মমন্দির, যেটা পরে জোর করে দখল করে নেয় অ্যাজটেকরা।
একটা ছবির ওপর আঙুল রেখে বললো সে, এই পিরামিডগুলো খুব উঁচু।
হ্যাঁ, রবিন মাথা ঝাকালো। পিরামিড অভ দি সান।
সূর্যের পিরামিড, কিশোর বললো। অদ্ভুত নাম, না?
নাম যা-ই হোক, হাত নাড়লো মুসা। দয়া করে আমাকে অন্তত ওখানে চড়তে বলো না। পা পিছলালে গেছি। চূড়ায় গিয়ে বসে নেই তো সিনর স্টেফাননা?
কি জানি, হাসলো রবিন। থাকেই যদি, যাবে। আচ্ছা, পাহাড়-টাহাড় তো খুবই বাইতে পারো। ভয় লাগে না। তার মানে উচ্চতা নিয়ে কোনো ফোবিয়া নেই তোমার। পিরামিডে চড়ার ব্যাপারে এতো ভয় কেন?
সত্যি কথা বলবো? বলো।
পিরামিড হলোগে প্রাচীন রাজারাজড়াদের কবর। ওখানে ভূত থাকবেই…
একেবারে রাজকীয় ভূত, কিশোর বললো। হাহ্ হাহ্ হা!