আরেকটা অনুরোধ করবো, স্যার, কিশোর বললো। দুজন লোককে খুঁজে দিতে বলবো, যদি এ-শহরে থাকে। একজনের নাম পিন্টো আলভারো, স্যুটকেস থেকে ছবি বের করে দেখালো। আরেকজনকে চিনি না, শুধু নাম শুনেছি। আরকিওলজিস্ট। সিনর ডা স্টেফানো। ছবিটা কার, বলতে পারবো না। তবে ওই দুজনেরই কোন একজন হতে পারে।
চেষ্টা করবেন, কথা দিলেন চীফ। তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলো ওরা। ট্যাক্সিতে উঠে হোটেলে যাওয়ার নির্দেশ দিলো ড্রাইভারকে।
৭
ঘুমিয়ে পড়েছিলো, টেলিফোনের শব্দে জেগে গেল কিশোর। ফোন এসেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে। চীফ মারকাস। কে, কিশোর পাশা? এখুনি চলে এসো। তোমাদের পাইলট ল্যারি কংকলিনকে পাওয়া গেছে।
তাই! কোথায়?
এখানেই বসে আছে।
আসছি।
মুসা আর রবিনকেও খবরটা জানালো কিশোর। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিতে বললো। মুসা মন্তব্য করলো, বাহ্, দারুণ পুলিশ ফোর্স তো! সাংঘাতিক দক্ষ!
নিচে নেমে একটা ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়লো তিনজনে। থানায় চললো।
ল্যারি! পাইলটকে দেখে আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠলো মুসা।
আন্তরিক হ্যান্ডশেক চললো। তিন গোয়েন্দার সঙ্গে হাত মেলালো ল্যারি। সমস্ত ঘটনাটা শুনতে চাইলো কিশোর।
বিধ্বস্ত লাগছে লম্বা, একহারা লোকটাকে। মুখে চওড়া হাসি। বললো, লোকটা যে কোনদিক দিয়ে উঠলো, দেখিইনি। ঘাড়ের ওপর পিস্তল ঠেসে ধরে বললো, টু শব্দ না করে প্লেন চালাতে। কি আর করবো। অনুমতি নিলাম। তারপর উড়লাম। তবে আমি শিওর ছিলাম, আমাকে খুঁজে বের করবেই তোমরা। কিছুতেই পিছু ছাড়বে না।
আজ সকালে রুমালটা দেখিয়ে একটা কাজের কাজ করেছিলেন, কিশোর বললো। নইলে কিছু বুঝতে পারতাম না।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো ল্যারি। ওরা আমাকে হুমকি দিলো, পালানোর চেষ্টা করলে মরবো। মরতাম কিনা জানি না, তবে বেরোনোর কোনো সুযোগই পাইনি। তাই তোমাদেরকে হুঁশিয়ার করার পয়লা সুযোগ যেটা পেলাম, কাজে লাগালাম।
টেলিফোন বাজলো। তুলে নিয়ে কানে ঠেকালেন চীফ। কথা বলতে লাগলেন। কিশোরের কানের কাছে মুখ সরিয়ে এনে ফিসফিস করে ল্যারি বললো, লোকগুলো অ্যাজটেক যোদ্ধার জিনিসের পেছনে লেগেছে। আমার কাছ থেকে কথা আদায়ের চেষ্টা করেছে। আমি জানি কিনা জিজ্ঞেস করেছে। ওদের কথা থেকে বুঝলাম, জিনিসটা খুবই দামী।
কথা শেষ করে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন চীফ। ল্যারি বলতে থাকলো, যে লোকটা আমাকে কিডন্যাপ করেছে, তার নাম বলতে পারবো না। শহরের বাইরে একটা বাতিল খামারের কাছে মাঠে নামার নির্দেশ দিলো। মুখোশ পরা আরও কয়েকজন লোক অপেক্ষা করছিলো ওখানে। প্লেন থেকে আমাকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে একটা গাড়িতে তুললো। শহরে নিয়ে এলো। একটা বাড়িতে ঢুকিয়ে প্রশ্ন শুরু করলো। ওদের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে আমাকে। তোমাদের কথাও জিজ্ঞেস করেছে। তোমরা মেকসিকোতে আসবে, একথা বলতে আমাকে বাধ্য করেছে ওরা।
তারপর বের করে নিয়ে গিয়ে আবার গাড়িতে তোলা হলো আমাকে। বোধহয় বাড়িতে একা ফেলে যেতে সাহস হচ্ছিলো না। যদি পালাই। এয়ারপোর্টে নিয়ে গেল। বসে রইলো তোমাদের আসার অপেক্ষায়। তোমরা এলে। তখন থেকেই তোমাদের পিছু নিয়েছে। তোমাদেরকেও ধরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। ভাবলাম, সেটা ঠেকাতে হবে। বেপরোয়া হয়ে গিয়েই রুমাল দেখিয়ে ইঙ্গিত করেছিলাম, যাতে হুশিয়ার হয়ে যাও।
খুব ভালো কাজ করেছিলেন, রবিন বললো। তা না করলে লোকটাকে সত্যি সত্যিই পুলিশ অফিসার ভাবতাম আমরা। আটকা পড়তাম।
ওই লোকটাও ওদের দলের একজন, ল্যারি বললো।
আমরা তো বেরিয়ে পালালাম। তারপর কি করলো? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
হলুদ গাড়িটা চলতে শুরু করলো। তোমাদের গাড়িটাকে কিছুদূর আসতে বাধ্য করলো নকল পুলিশ অফিসার। তারপর নেমে আবার আগের গাড়িতে উঠলো। আমাকে নিয়ে গেল ল্যানিলা মার্কেটে। ওখান থেকেই পুলিশ আমাকে উদ্ধার করেছে। ভাগ্যিস, গাড়ির নম্বরটা রাখতে পেরেছিলে।
লোকটাকে আবার দেখলে চিনতে পারবেন?
মনে হয় না। আমাকে বাড়িটাতে ঢোকানোর পর, অন্য ঘরে গিয়ে মুখোশ খুলে ছদ্মবেশ নিয়ে ছিলো সব কজন। এটা আমার ধারণা। তবে ওগুলো ওদের আসল চেহারা হলে চিনতে পারবো। একটু আগে চীফকে বললাম সেকথা।
ও। আচ্ছা, যে লোকটা আপনাকে কিডন্যাপ করলো, তাকে চিনেছেন?
না। ও একবারের জন্যেও মুখোশ খোলেনি। তবে তার কথায় বুঝলাম, মিস্টার রেডফোর্ডের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলো।
লোকটা বেঁটে, কালো চুল। চেহারা আমরাও দেখতে পারিনি। আপনি আর কিছু লক্ষ্য করেছেন?
করেছি। দাঁত। স্বাভাবিক নয়। তেড়াবেঁকা। একটার ওপর আরেকটা উঠে এসেছে।
এই কথাটা ধরলেন চীফ। দাঁতের রঙ কেমন, বলুন তো? লাল? আর সামনের দুটো দাত পোকায় খাওয়া? ফ্যাসফাস করে কথা বলে?
হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন! আপনি জানলেন কি করে?
মাথা দোলালেন মারকাস। বোধহয় চিনতে পেরেছি। ওর নাম গুডু টেরিয়াননা। একটা অপরাধী দলের নেতা। হেন কুকর্ম নেই যা ওরা করে না। জেল খেটেছে কয়েকবার। পুলিশের খাতায় নাম আছে। যে বাড়িটা থেকে আপনাকে উদ্ধার করা হয়েছে মিস্টার কংকলিন, ওটা ওদের বাড়ি নয়। এক বুড়ির। পুলিশ দেখেই বুড়ি ওদেরকে সাবধান করে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, পালানোরও সুযোগ করে দিয়েছে সে-ই। নইলে দুএকটাকে অন্তত ধরতে পারতামই। যাই হোক, বললেন যখন চোখকান সজাগ রাখবো। ধরা না পড়ে যাবে কোথায়।