আস্তে করে হাত বাড়িয়ে প্যাসেঞ্জার সীটের দরজা খুলে দিলো বিস্মিত ড্রাইভার। উঠে বসলো লোকটা। তোমাদেরকে অ্যারেস্ট করা হলো!
কে-কেন! তোতলাতে শুরু করলো ড্রাইভার। আমি বেআইনী কিছু করিনি…
থানায় গেলেই বুঝবে কি করেছো! ধমক দিয়ে বললো লোকটা। চালাও!
ঝট করে পরস্পরের দিকে তাকালো কিশোর আর রবিন। ঢোক গিললো মুসা। ব্যাপারটা কোনো চালবাজি? কংকলিনকে গ্রেপ্তার করবে কেন পুলিশ? বেআইনি ভাবে বিমান নামানোর দায়ে? বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো না কিশোরের। ফিসফিসিয়ে বন্ধুদেরকে বললো, মনে হয় শয়তানী! পালাতে হবে! নামো!
মাথা ঝাঁকালো মুসা। সামনের লোকটা কিছু বোঝার আগেই নিজের ব্যাগের হাতল চেপে ধরে এক ঠেলায় খুলে ফেললো দরজা। ঝাপ দিয়ে পড়লো রাস্তায়। তার পর পরই রবিন, সবার শেষে কিশোর। তিনজনের হাতেই ব্যাগ। নেমে আর একটা মুহূর্ত দেরি করলো না। পেছন ফিরে দিলো দৌড়। চেঁচিয়ে উঠলো ড্রাইভারের পাশে বসা লোকটা।
ফিরেও তাকালে না তিন গোয়েন্দা। ঢুকে পড়লো গাড়ির ভিড়ে। সবই চলমান। প্রায় একসঙ্গে একাধিক হর্ন বেজে উঠলো। ব্রেক কষার পর টায়ারের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ উঠলো। ধাক্কা দেয়া থেকে ছেলেদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে গাড়িগুলো। এঁকেবেঁকে দৌড় দিয়েছে ছেলেরা। যে করেই হোক ওপাশের চত্বরে পিয়ে পৌঁছতে চায়। কিন্তু যানবাহনের জন্যে অসম্ভব মনে হচ্ছে কাজটা।
বুঝলো এভাবে হবে না। শেষে এক বুদ্ধি বের করলো কিশোর। রবিন আর মুসাকে নিয়ে হাত তুলে একসারিতে দাঁড়িয়ে গেল গাড়ির নাকের সামনে। থেমে গেল সামনের কয়েকটা গাড়ি। পেছনেরগুলোও আর এগোতে পারলো না। অবাক হয়েছে চালকেরা। কেউ কেউ গাল দিয়ে উঠলো। যারা কিশোরদেরকে দেখছে, তারা বুঝতে পারলো, রাস্তা পেরোনোর চেষ্টা করছে ওরা। যদিও এভাবে রাস্তা পেরোনো নিয়ম নয়। টীনএজারগুলো সব সময়ই খেপাটে, উল্টোপাল্টা কাজ করে বসে। তাছাড়া এই তিনটেকে মনে হচ্ছে বিদেশী। বোধহয় আমেরিকান। অকাজ তো করবেই।
যাই হোক, সুযোগ পেয়ে একটা মুহূর্ত আর দেরি করলো না কিশোর। ছুটতে শুরু করলো। রবিন আর মুসা তার পেছনে। রাস্তা পেরিয়ে এলো একদৌড়ে।
আবার চলতে শুরু করলো গাড়ির সারি। ল্যারি যে গাড়িটাতে রয়েছে, সেটাকে কোথাও আর দেখা গেল না।
একটা স্যুটকেসের ওপর বসে কপালের ঘাম মুছে বললো মুসা, খাইছে! আরেকটু হলেই চাকার নিচে চলে যেতাম! এমন কাজ আর করতে বলবে না। কখনও!
ঠিক! আরেকটু হলেই মারা পড়েছিলাম! রবিন বললো হাঁপাতে হাঁপাতে।
কিশোরও হাঁপাচ্ছে, এছাড়া আর কিছু করারও ছিলো না। বাদ দাও এখন। বেঁচে তো আছি, হাত নাড়লো সে। আসল কথা বলো। গাড়িটার নাম্বার নিয়েছো?
মাথা নাড়লো মুসা। পারেনি।
আমি নিয়েছি, রবিন জানালো।
আমি শুধু দেখেছি, মুসা বললো। হলুদ রঙের একটা সেডান। বাঁ পাশে পেছনের দরজায় মোটা একটা আঁচড়ের দাগ। কোনো কিছুর সঙ্গে ঘষা লাগিয়েছিলো।
আমিও দেখেছি, কিশোর বললো। যাক, চমৎকার কিছু সূত্র মিললো। গাড়িটা বের করা যাবে। পুলিশকে জানানো দরকার। চলো।
খালি একটা ট্যাক্সি দেখে হাত তুলে ডাকতে যাবে কিশোর, এই সময় একটা গাড়ি এসে থামলো ওদের পাশে। জানালা দিয়ে বেরিয়ে এলো একটা পরিচিত মুখ। সেই ড্রাইভার, যার গাড়িতে বিমান বন্দর থেকে উঠেছিলো ওরা। হাত নেড়ে ডাকলো, এসো।
গাড়ি চালাতে চালাতে লোকটা বললো, কিছুদূর পিস্তল দেখিয়ে নিয়ে গেল আমাকে। তারপর নেমে ওদের গাড়িতে উঠে চলে গেল। হারামজাদা!
তারপর আমাদের খুঁজতে এলেন আপনি? মুসার প্রশ্ন।
হ্যা।
যদি এখানে না পেতেন?
হোটেলে চলে যেতাম। নাম তো জানিই হোটেলের।
লোকটা তাহলে পুলিশ নয়? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
আরে না। আস্ত শয়তান! কিন্তু ব্যাপারটা কি বলো তো? আমাকে নয়, আসলে তোমাদেরকে আটকাতে চেয়েছিলো লোকটা।
সব গোপন না করে কিছু কিছু কথা ড্রাইভারকে জানালো কিশোর। প্লেন, হাইজ্যাক আর কংকলিনকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, বললো। হলুদ গাড়িটাতে যে আমেরিকান লোকটাকে আটকে রাখা হয়েছে সে-ই ল্যারি কংকলিন, একথাও জানালো।
হু! মাথা দোলালো ড্রাইভার। তাহলে তো পুলিশকে জানানো দরকার।
তাই জানাবো। থানায় চলুন।
আমার মনে হয়, মুসা বললো। রুমাল নেড়ে আমাদেরকেই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো ল্যারি। আমাদের নজরে পড়তে চাইছিলো।
কিশোর, রবিন বললো। ব্যাপারটা বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না? একেবারে আমাদের সামনে এসে পড়লো ল্যারি, আর জায়গা পেলো না!
মোটও কাকতালীয় নয়, কিশোর বললো। হয়তো ওকে রেখে আসার সময় পায়নি ব্যাটারা। তাই গাড়িতে নিয়েই ঘুরছে। আমাদের পিছে লেগেছিলো। এয়ারপোর্ট থেকেই অনুসরণ করেছে। এখানে এসে গাড়ি থামিয়ে নকল পুলিশ অফিসারের ছদ্মবেশে আমাদেরকেও কিডন্যাপ করতে চেয়েছে।
হ্যাঁ, এইটা হতে পারে, তুড়ি বাজালো রবিন। তা-ই করেছে। আরেকটা ব্যাপারে শিওর হয়ে গেলাম। এতো কিছু যখন করছে, তার মানে অ্যাজটেক যোদ্ধা সত্যিই খুব দামী।
গেটের কপালে বড় করে লেখা রয়েছে পুলিশিয়া। ভেতরে গাড়ি ঢোকালো ড্রাইভার। পুলিশ চীফ ডা মারকাসের সঙ্গে দেখা করলো তিন গোয়েন্দা। মন দিয়ে ওদের কথা শুনলেন তিনি। রিপোর্ট লিখে নিলেন। তারপর জানালেন, স্টেটসের রিপোর্ট আমরাও পেয়েছি। প্লেনসহ পাইলট ল্যারি কংকলিনকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। প্লেনটা আমাদের এয়ারপোর্টে নামেনি। তোমরা বলছে, ল্যারিকে দেখেছে। তার মানে অন্য কোথাও নেমেছে। ছোট প্লেন তো, নামার জায়গার অভাব হয় না। ঠিক আছে, আর বেশিক্ষণ লাগবে না। গাড়ির নম্বর রেখে কাজই করেছো। ল্যারি কংকলিনের ছবিও আমরা পেয়েছি। এখুনি অ্যালার্ট করে দিচ্ছি মস্ত পয়েন্টগুলোতে। নিশ্চিন্তে হোটেলে চলে যাও।