একসময় মুখ তুলে মুসা বললো, প্লেন হাইজ্যাকের খবরটা বাড়িতে জানাবো ফোন করে?
না না, দরকার নেই, তাড়াতাড়ি হাত নাড়লো কিশোর। শুনলেই যাবে ঘাবড়ে। আমাদের যাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারে। আমরা চলে যাওয়ার পর শুনলে শুনুকগে, তখন আর ফেরাতে পারবে না। চাচী এখন শুনলে একদম যাওয়া বন্ধ।
অনেকক্ষণ হলো মিস্টার সাইমন চলে গেছেন। ফোন করলেন তিনি। কিশোর গিয়ে ধরলো। একটা জরুরী খবর জানালেন। একজন সত্যিকারের অ্যাজটেক যোদ্ধার বংশধরকে খুঁজে বের করেছি। না না, চমকে উঠো না। আমরা যাকে খুঁজছি এ-লোক সেই লোক নয়। অ্যাজটেক তো আর একজন নয় মেকসিকোতে। কিছু তথ্য জানতে পারলাম ওর কাছে। তোমাদের কাজে লাগবে। ও হ্যাঁ, আগে আরেকটা কথা বলে নিই। লোকটা বিমানের মেকানিক। বাহুতে উল্কি দিয়ে অ্যাজটেক যোদ্ধার ছবি আঁকা।
অনেক প্রশ্ন করেছি লোকটাকে। বাড়ি মেকসিকোতে। পিন্টো আলভারো নামে কাউকে চেনে না। তবে টিকা আলভারো নামটা পরিচিত। ট্যাক্সকোর কাছে চমৎকার একটা হ্যাঁসিয়েন্ডার নাম টিকা আলভারো। ওখানে নাকি কয়েক বছর কাজ করেছে সে। ইচ্ছে হলে ওখানে গিয়ে খোঁজখবর করতে পারো।
সত্যিকারের অ্যাজটেক যোদ্ধার ব্যাপারে প্রশ্ন করতে করতে আরেকটা নাম। জানলাম। সিনর ডা স্টেফানো। লোকটাকে দেখেনি সে, নাম শুনেছে।
কোথায় থাকে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
বলতে পারলো না। পুরানো প্রত্নতাত্ত্বিক স্পটগুলোতে নাকি ঘুরে বেড়ান। প্রচুর খোঁড়াখুঁড়ি করেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক? হ্যাঁ।
আরও কয়েকটা কথার পর লাইন কেটে দিলেন ডিটেকটিভ। ফিরে এসে তথ্যগুলো বন্ধুদের জানালো কিশোর।
সিনর ডা স্টেফানো, না? আরকিওলজিস্ট! দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুসা। তারমানে তাকে খুঁজে তুমি বের করবেই। আর তার অর্থ হলো, আমার নিস্তার নেই। পুরানো ওই পিরামিডগুলোর মাথায় আমাকে চড়িয়েই ছাড়বে।
প্লেন ছাড়ার সময় হলো অবশেষে। ছাড়ার পর পরই চমৎকার খাবার দেয়া হলো। অনেক রাত। খাওয়া শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়লো ওরা। ঘুম ভাঙলো পরদিন সকালে। রোববার। স্টুয়ার্ডেস ঘোষণা করলো, বিশ মিনিটের মধ্যেই মেকসিকো সিটিতে ল্যান্ড করবে বিমান। দ্রুত বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো, বিমান বন্দরের ওপরে চক্কর মারছে বিশাল বিমানটা। ল্যান্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নামলো বিমান।
মুসা প্রস্তাব রাখলো, চলো, ট্যাক্সি নিয়ে শহরটা আগে ঘুরে দেখি। এখুনি হোটেলে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।
কাজ চালানোর মতো কিছু শব্দ শিখে এসেছে তিনজনেই। ভাঙা ভাঙা স্প্যানিশে কথা বললো একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের সঙ্গে। হাসলো লোকটা ওদের উচ্চারণ শুনে। দেখেই বুঝে গেছে টুরিস্ট। মেকসিকোতে স্বাগত জানালো। বললো, কোনো অসুবিধে হবে না। দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে তারপর নিয়ে যাবে হোটেলে।
গাড়িতে চড়লো তিন গোয়েন্দা। এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে বেরিয়ে একটা চওড়া রাস্তায় উঠলো ড্রাইভার। দুপাশে পুরানো স্প্যানিশ ধাচের বাড়িঘর, খোলা বাজার। মাঝে মাঝে মাথা তুলে রেখেছে বিরাট উঁচু উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট হাউস।
খুব বেশি পুরানো লাগছে না, মুসার কণ্ঠে হতাশার সুর। যেন আশা করেছিলো, এক লাফে হাজার কিংবা পনেরোশো বছর আগের পৃথিবীতে চলে যেতে পারবে।
তাই নাকি? হাসলো ড্রাইভার। পুরানো এলাকায় যেতে চাও? নিয়ে যাবো।
কিছুক্ষণ এপথ ওপথ ঘুরে, অসংখ্য মোড় নিয়ে মস্ত একটা চত্বরে এসে পৌঁছলো ওরা। ড্রাইভার বেশ গর্বের সঙ্গে জানালো, উত্তর দিকে ওই যে গির্জাটা দেখছো, অনেক পুরানো। ১৬৬৭ সালে মহান অ্যাজটেক মন্দিরের ধ্বংসস্তুপের ওপর তৈরি হয়েছিলো।
বিশাল বাড়িটাকে আগ্রহ নিয়ে দেখতে লাগলো তিন গোয়েন্দা। চতুরের আরেক ধারে লম্বা আরেকটা বাড়ি দেখালো ড্রাইভার। ওটা ন্যাশনাল প্যালেস। তার উল্টো দিকে চত্বরের অন্য একধারে রয়েছে প্যালাসিও মিউনিসিপাল, এবং একটা তোরণ। তোরণের নিচে একসারি ছোট ছোট দোকান।
হ্যাঁ, খুশি হয়ে বললো মুসা। এ-জায়গাটা বেশ পুরানো!
হঠাৎ আরেকটা ট্যাক্সি ওদের গাড়ির পাশ কাটালো। জানালা দিয়ে বেরিয়ে এলো একটা হাত। শাদা একটা রুমাল নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলো যেন তিন গোয়েন্দার।
সংকেত! প্রায় চিৎকার করে উঠলো কিশোর।
৬
জলদি ওই গাড়িটার পাশে নিয়ে যান! ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো কিশোর।
প্যাডালে চেপে বসলো ড্রাইভারের পা। লাফ দিয়ে আগে বাড়লো গাড়ি। শাঁ করে চলে এলো অন্য গাড়িটার পাশে। ভেতরে কে আছে দেখার চেষ্টা করলো তিন গোয়েন্দা।
পলকের জন্যে লোকটাকে চোখে পড়লো কিশোরের। অবাক হয়ে গেছে। ল্যারি কংকলিন! বন্ধুদেরকে বললো সে। অন্য লোকটা মনে হয় মেকসিকান।
এই দুজন বসেছে পেছনের সীটে। সামনের সীটে রয়েছে আরও দুজন। একজন ড্রাইভ করছে। হঠাৎ সামনের গাড়িটা সরে এসে কিশোরদের গাড়ির পথ রুদ্ধ করে দিলো। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষতে বাধ্য হলো ড্রাইভার।
সামনের গাড়িটাও থেমে গেল। এক ঝটকায় খুলে গেল সামনের প্যাসেঞ্জার সীটের দরজা। নেমে এলো ড্রাইভারের পাশে বসা লোকটা। কিশোরদের গাড়ির কাছে এসে ওদের ড্রাইভারের নাকের সামনে একটা ব্যাজ আর একটা আইডেনটিটি তুলে ধরে বললো, পুলিশ! দরজা খোলো!