অস্থির হয়ে পায়চারি করতে লাগলো কিশোর রবিন আর মুসা চুপ করে রয়েছে। তবে ওরাও ভীষণ উত্তেজিত। অবশেষে জানানো হলো ওদেরকে, কোনো সাড়াই দিচ্ছে না বিমানটা থেকে।
হাইজ্যাকই মনে হচ্ছে, এতোক্ষণে বিশ্বাস করলে ডিসপাচার। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটিকে রিপোর্ট করছি।
তাকে বললো কিশোর, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড আর চীফ ইয়ান ফ্লেচারের দেয়া সার্টিফিকেটটা দেখিয়ে গোয়েন্দা পরিচয় দিলো নিজেদের। ফীন্ডে গিয়ে তদন্ত করার অনুমতি চাইলো।
দিয়ে দিলো ডিসপ্যাচার।
তদন্তে নতুন কিছুই বেরোলো না। কয়েকজন মেকানিক ল্যারিকে বিমানে উঠতে দেখেছে। তার সাথে আর কাউকে চড়তে দেখেনি। তবে ফীল্ডে আরেকজন লোকের সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেখেছে।
লোকটা দেখতে কেমন? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
চেহারা ভালোমতো দেখিনি, জবাব দিলো একজন মেকানিক। আসলে দেখার প্রয়োজনই মনে করিনি। তাছাড়া অনেক দূরে ছিলো। যেটুকু দেখেছি তা হলো, বেঁটে, কালো চুল। প্লেন নিয়ে পালাবে জানলে কি আর অবহেলা করতাম! একটা জেট এয়ারলাইনারের দিকে রওনা হয়ে গেল সে। ওটার এঞ্জিনের কাজ করছিলো।
আর কিছু করার নেই এখানে। রবিন বললো, এই লোকটা আমাদের রহস্যের সঙ্গে জড়িত। সেদিন রেডফোর্ড এস্টেটে তাড়া করেছিলাম যাকে, মনে হচ্ছে সে-ই। জোর করে ল্যারিকে দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে প্লেন নিয়ে ভেগেছে।
হতে পারে, কিশোর বললো। টাওয়ারে চলে যাই। দেখি কি হলো?
উদ্বিগ্ন হয়ে আছে ডিসপ্যাচার। ছেলেদের দেখে বললো, কোনো খবরই নেই প্লেনটার। বড় বড় সমস্ত এয়ারপোর্টকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওরাও যোগাযোগ করতে পারছে না।
অনেক কাজ ডিসপ্যাচারের। সাংঘাতিক ব্যস্ত। তার সঙ্গে আলোচনা করার, কোনো অবকাশ নেই। ওয়েটিং রুমে এসে বসলো তিন গোয়েন্দা।
কারণটা কি, কিছু বুঝতে পারছো? রবিনের প্রশ্ন। হাইজ্যাকিং, এবং কিডন্যাপিং!
ল্যারির কোনো ক্ষতি না করলেই হয়, পাইলটকে পছন্দ করে মুসা। তাকে হাতে ধরে অনেক কিছু শিখিয়েছে, বিমান চালনার। খাঁটি ভদ্রলোক। কিন্তু ধরে নিয়ে গেল কেন? আর প্লেনটাই বা হাইজ্যাক করলো কেন?
এর জবাব জানলে, কিশোর বললো। হয়তো ল্যারি আর প্লেনটার খোঁজ বের করে ফেলতে পারতাম!
তো, এখন কি করবো? মেকসিকো যাওয়া বন্ধ?
জোরে মাথা নাড়লো কিশোর। মোটেই না!
মিস্টার সাইমনকে ফোন করার জন্যে উঠে গেল সে। কিন্তু বাড়িতে নেই। ডিটেকটিভ। ধরলো তার ভিয়েতনামী কাজের লোক নিসান জাং কিম। খবর শুনে সে-ও চিন্তিত, হলো। বললো, কয়েক জায়গায় ফোন করে মিস্টার সাইমনকে ধরার চেষ্টা করবে। খবরটা জানাবে। তাকে বলবে, তিনি যেন এয়ারপোর্টে কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আবার এসে আগের জায়গায় বসে পড়লো। দীর্ঘ হয়ে উঠলো অপেক্ষার মুহূর্তগুলো। কথাবার্তা তেমন জমছে না এই উত্তেজনার সময়। খবরের কাগজ পড়ার চেষ্টা করলো। কিছুই মাথায় ঢুকলো না। শব্দগুলোকে মনে হলো অর্থহীন।
শেষে বিরক্ত হয়ে কাগজটা ছুঁড়ে ফেলে, উঠে দাঁড়ালো কিশোর। বললো, ফাউলারকে ফোন করবে। দেখতে চায় তিনি কিছু বলতে পারেন কিনা। কি আর বলবেন তিনি? খবর শুনে চুপ করে রইলেন দীর্ঘ একটা মুহূর্ত।
কিশোর বললো, কি মনে হয় আপনার? রেডফোর্ড এস্টেটে যে লোকটা এসেছিলো, সে-ই একাজ করেছে?
করতেও পারে। কি বলবো, বলো? ওর সম্পর্কেও তো কিছুই জানি না আমরা।
তা ঠিক। আপনারা তো দেখেননি। পুলিশ আঙুলের ছাপ পেলো, জুতোর ছাপ নিলো, তা-ও তো কিছু করতে পারছে না। ঠিক আছে, রাখলাম।
ওয়েইটিং রুমে ফিরে এলো কিশোর। উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মুখ। মিস্টার সাইমন চলে এসেছেন। চোখেমুখে উৎকণ্ঠা, ল্যারির জন্যে। প্লেনটাকে খুঁজে বের করা সহজ হবে না, ধারণা করলেন তিনি। বড় কোনো এয়ারপোর্টে নামতে সাহস করবে না হাইজ্যাকার, বললেন তিনি। পুলিশের ভয়ে। কোনো খামারের মাঠে কিংবা অব্যবহৃত এয়ারফীল্ডে নামার চেষ্টা করবে।
আমার কি মনে হয়, জানো? আরও কেউ অ্যাজটেক যোদ্ধাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্লেনটা হাইজ্যাক করেছে তোমাদেরকে ভয় দেখানোর জন্যে। যাতে তোমরা আর মেকসিকোতে না যাও।
একই কথা রবিনও ভাবছে। রেগে গেল সে। তাই যদি হয়, তাহলে তো আরও বেশি করে যাবো আমরা। একটা হাইজ্যাকারের ভয়ে পিছিয়ে থাকবো?
ঠিক! মুঠো তুলে ঝাঁকালো মুসা। একটা প্লেন নিয়েছে। সব তো আর নিতে পারেনি। টিকেট কেটে চলে যাবো।
হাসলেন সাইমন। আমিও সেকথাই বলতে যাচ্ছিলাম। প্লেন নিয়ে গিয়ে বেশিদিন আটকে রাখতে পারবে না। খুঁজে বের করে ফেলবোই। তার জন্যে তোমাদের পিছিয়ে আসার কারণ নেই। তোমরা চলে যাও।
টিকেটের খোঁজ নিতে রিজারভেশন কাউন্টারে চলে এলো কিশোর। রবিন আর মুসা এলো খানিক পরে। ততোক্ষণে জানা হয়ে গেছে কিশোরের। মাঝরাতে একটা প্লেন ছাড়বে। মেকসিকো সিটিতে যাবে। সেটার টিকেট পাওয়া যাবে।
তাতেই রাজি তিন গোয়েন্দা। মোট কথা, যখনই হোক, যেতে পারলেই খুশি। মিস্টার সাইমনকে জানানো হলো। টাকা বের করে দিলেন তিনি, তিনটে টিকেট কেটে নাও।
প্লেন ছাড়তে অনেক দেরি। ততোক্ষণ বসে থাকতে হবে। এছাড়া আর কিছু করারও নেই। বই পড়ে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো ওরা। এয়ারপোর্টের বুক কাউন্টার থেকে তিনটে পেপারব্যাক বই কিনলো তিনজনে। রবিন কিনলো একটা মিউজিকের ওপর লেখা বই। মুসা কিনলো দেশীবিদেশী খাবারের বই। আর কিশোর কিনলো মেকসিকান ইতিহাসের ওপর লেখা বই। অ্যাজটেক যোদ্ধাদের ব্যাপারে অনেক কিছু লেখা আছে ওতে।