ফ্যাকাসে হয়ে আছে বারোজের চেহারা। মলিন হাসি হাসলো। আপনাদেরকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি। মাপ করে দেবেন। ওই বাড়িতে ঢুকে একটা গাধামি করেছি। বছরখানেক আগে একটা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়েছিলেন আমাকে রেডফোর্ড।
টাকার খুব প্রয়োজন তার, জানালো বারোজ। সেজন্যেই উইলের পাওনাটা তাড়াতাড়ি আদায়ের জন্যে অ্যাজটেক যোদ্ধার খোঁজ করতে গিয়েছিলো। কারণ যোদ্ধাকে বের করে তার সম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেই টাকা জোগাড়ের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। টাকা তো পেলামই না, আক্ষেপ করে বললো সে। ঘটালাম দুর্ঘটনা। এখন আরো বেকায়দা অবস্থা আমার।
অ্যাজটেক যোদ্ধা কে, বা কি, সে-ব্যাপারে কোনো ধারণা আছে কিনা বারোজের জিজ্ঞেস করলেন সাইমন। মাথা নাড়লো অসুস্থ মানুষটা। অনেক দিন আগে একবার রেডফোর্ড বলেছিলেন আমাকে, অ্যাজটেকদের একজন উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে একটা দামী জিনিস পেয়েছেন। তবে সেটা কি, বলেননি। আমার ওই ভাইটা ছিলেন সাংঘাতিক চাপা স্বভাবের। জিনিসটা কি আন্দাজ করতে পারেন? না। বারোজ জানালো, রেডফোর্ড নাকি বলেছেন, জিনিসটা তাঁকে রাখতে দেয়া হয়েছিলো পাঁচ বছরের জন্যে। তারপর আবার ফিরিয়ে দেয়ার কথা। আমার বিশ্বাস, বারোজ বললো। এই জিনিসটার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে উইলে।
তাহলে এমনও তো হতে পারে, ফাউলার বললেন। পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যার জিনিস তাকেই আবার ফেরত পাঠিয়েছেন মিস্টার রেডফোর্ড। উইলে সেকথা লেখার আর সুযোগ পাননি।
মাথা নাড়লো বারোজ। আমার তা মনে হয় না। যদ্দূর মনে পড়ে, বছর তিনেক আগে আমাকে কথাটা বলেছিলেন রেডফোর্ড। আমাকে বিশ্বাস করতেন। অনেক গোপন কথাই বলতেন। বলেছেন, জিনিসটা তিনি যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কি জিনিস, তা বলেননি। আমিও চাপাচাপি করিনি। বাড়িতেও থাকতে পারে ওটা, কিংবা অন্য কোথাও। জানি না।
আর কিছু বলার নেই বারোজের। রাস্তায় নেমে কিশোর প্রস্তাব দিলো আরেকবার রেডফোর্ড এস্টেটে যাওয়ার। মেকসিকোতে যাওয়ার আগে আরও একবার খুঁজে দেখতে চায়। ওদেরকে নিয়ে চললেন ফাউলার।
সব সময় কিছু বিশেষ যন্ত্রপাতি থাকে সাইমনের গাড়ির বুটে। তদন্তের সময় কাজে লাগে। নেমে গিয়ে বুট খুললেন তিনি।
তিনটে গাড়ি নিয়ে এসেছে চারজনে। নিজের গাড়ি থেকে নেমে এলেন ফাউলার। কিশোর আর রবিন নামলো রবিনের ফোক্সওয়াগন থেকে। সাইমনকে যন্ত্রপাতি নামাতে সাহায্য করতে এগোলো।
পোর্টেবল ফ্লোরোস্কোপ আর একটা মেটাল ডিটেকটর বের করা হলো। বাড়ির দেয়াল, মেঝে, হাত, সব জায়গায় খোঁজা হলো যন্ত্রের সাহায্যে। কয়েকবার মিটমিট করে জানান দিলো যন্ত্রের বাতি, জিনিস রয়েছে। তবে সেগুলোর কোনোটারই কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে হলো না।
সারাক্ষণ গোয়েন্দাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকলেন ফাউলার। কিছুই পাওয়া গেল না দেখে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, এভাবে হবে না। সমস্ত রহস্যের চাবিকাঠি রয়েছে, আমার ধারণা, পিন্টো আলভারোর কাছে।
সাইমনও একমত হলেন। মনে পড়লো সেই লোকটার কথা,সন্ধ্যাবেলা যাকে তাড়া করেছিলো কিশোর আর রবিন। তার কোনো খবর আছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন উকিলকে।
না, জবাব দিলেন ফাউলার। বেনিফিশারিদের কেউ হতে পারে ভেবে, উইলে যতজনের নাম লেখা রয়েছে, সবার খোঁজখবর নিয়েছি আমি। কেউ আসেনি ওরা। সবারই অ্যালিবাই রয়েছে, হাসলেন তিনি। গোয়েন্দা হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি অযথা। কিছুই করতে পারলাম না।
ভূল বললে, হেসে বললেন সাইমন। অনেক কিছুই করেছে। এই যে খোঁজাখুঁজিটা করলে, এতে অনেক লাভ হয়েছে। আর এতো দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই তোমার। আমরা তো অভিজ্ঞ গোয়েন্দা। কি করতে পারলাম? এখনও অন্ধকারেই রয়েছি।
সেদিন আর কিছু করার নেই। অফিসে চলে গেলেন ফাউলার। সাইমন চলে গেলেন কাজে। দুই গোয়েন্দা ফিরে এলো ইয়ার্ডে।
পরদিন সকালে মালপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো তিন গোয়েন্দা। ট্যাক্সি নিয়ে চলে এলো বিমান বন্দরে। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিঙের ভেতর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে এলো একটা খোলা অঞ্চলে। ওখানে রাখা হয় ব্যক্তিগত বিমান। অবশ্যই ভাড়া দিতে হয়। মিস্টার সাইমনের বিমানটা দেখতে পেলো ওরা। রানওয়ের শেষ মাথায়।
হঠাৎ চলতে শুরু করলো ওটা। কিন্তু ছেলেদের দিকে এগিয়ে এলো না। বরং রানওয়ে ধরে উল্টোদিকে রওনা হয়েছে। গতি বাড়ছে দ্রুত। দেখতে দেখতে মাটি ছেড়ে শূন্যে উড়াল দিলো।
খাইছে! বলে উঠলো মুসা।
আমাদের রেখেই চলে যাচ্ছে! রবিনও কিছু বুঝতে পারছে না।
আমার তা মনে হয় না! উত্তেজিত শোনালো কিশোরের কণ্ঠ। নিশ্চয় কিছু ঘটেছে! হাইজ্যাক করা হয়েছে প্লেনটা?
৫
হাইজ্যাক! প্লেনটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। কি বলছো তুমি!
রবিনও তাকিয়ে রয়েছে। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে বিমানটা।
ঠিকই বলেছি, বিমানের দিকে আর নজর নেই কিশোরের। ছুটতে শুরু করলো অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিঙের দিকে। কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখুনি।
টাওয়ারের রিপোর্ট শুনে থ হয়ে গেল। ল্যারিই নাকি কন্ট্রোলের কাছে ক্লিয়ারেন্স চেয়েছে। তাড়াতাড়ি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। কেন, কিছু হয়েছে নাকি? জানতে চাইলো ডিসপ্যাচার। সন্দেহের কথা জানালো কিশোর। প্লেনটাকে ফেরানোর চেষ্টা করবে, বললো ডিসপ্যাচার।