ঠিক সময়েই এসেছ, ডেভ বলল।
ওকে নিয়ে এসেছি! হেসে বলল অন্য লোকটা। জন।
জবাবে হাসল না পাইলট। মার্সিডিজটাকে হেঁকে ধরেছে পুলিশ, দেখে। এলাম। ঝোপের ভেতর দিয়ে এদিকে আসছে কয়েকজন।
ঝোপের ভেতর দিয়ে? ভুরু কোঁচকাল ডেভ। এত তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করল কিভাবে?
ওই ছেলেটা, জুন বলল। সব ওর শয়তানী। ইচ্ছে করেই পড়েছে কয়েকবার। চিহ্ন রেখে এসেছে।
হেসে উঠল ডেভ। রাখুক। লাভ হবে না। ওরা আসার আগেই উড়ে যাব আমরা।
অত হাসির কি হল! ধমকে উঠল পাইলট। যাও, নিয়ে এস ছেলেটাকে।
আনছি।
ও কোথায়?
ওই কেবিনে।
হুঁ। জলদি কর।
ক্যানিয়নের পাথরের মত শক্ত মাটির ওপর দিয়ে জুতোর শব্দ তুলে এগোল তিনজনে। তালা খুলল জন। ডেকে বলল, বেরিয়ে এস।
ডেভ! চিৎকার করে উঠল জন। ও নেই!
ডেভও উঁকি দিল ভেতরে। শূন্য কেবিন।
ঘাস খেয়েছ নাকি বসে বসে! কর্কশ কণ্ঠে বলল পাইলট, পালাল কিভাবে?
অসম্ভব! বেরোনোর কোনও পথ নেই!
তাহলে গেল কোথায়? জনের প্রশ্ন।
যেভাবেই হোক বেরিয়েছে! চেঁচিয়ে বলল পাইলট। থাকলে তো থাকতই!
হয়েছে, অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই, কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল ডেভ। পালিয়ে যাবে কোথায়? কেবিন থেকে বেরোলেও ক্যানিয়ন থেকে বোরোতে পারবে না। পথ নেই। একটাই পথ, সেটা দিয়ে গেলে আমাদের সামনে দিয়ে যেতে হত। যায়নি। তারমানে আছে। জন, খোঁজ।
নির্জন ক্যানিয়নে ছড়িয়ে পড়ল তিন কিডন্যাপার।
.
হাঁপাতে হাঁপাতে এসে সরু ক্যানিয়নের মুখে পৌঁছল উদ্ধারকারী দলটা। হেলিকপ্টারটাকে দেখার বিশ মিনিট পর।
ওই তো! হাত তুলল রবিন।
ধীরে ধীরে ঘুরছে হেলিকপ্টারের রোটর। ওদের চোখের সামনেই লাফিয়ে গিয়ে বাবলে উঠে পড়ল পাইলট। শক্তি বাড়তে শুরু করল রোটরের।
জলদি! বলেই দৌড় দিল মুসা।
তার পেছনে ছুটল অন্যেরা। কপ্টারটাকে ধরার জন্যে। কেবিনের পেছন থেকে বেরিয়ে এল দুজন লোক। ওরাও দৌড় দিল কপ্টারের দিকে।
এই থাম, থাম! পুলিশ! চিৎকার করে উঠে ওদের দিকে দৌড় দিলেন শেরিফ।
ততক্ষণে কপ্টারের কাছে পৌঁছে গেছে দুজনে। উঠে পড়ল। উদ্ধারকারীদের অসহায় দৃষ্টির সামনেই আকাশে উঠে পড়ল কপ্টার। ধুলোর ঝড় উঠেছে। বিশাল এক ফড়িঙের মত শূন্যে ঝুলে রইল একটা মুহূর্ত, তারপর আগে বাড়ল। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল ক্যানিয়নের দেয়ালের ওপাশে, দক্ষিণে।
বোকা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে উদ্ধারকারীরা।
গেল…চলে গেল! বিড়বিড় করলেন রাশেদ পাশা।
ওদেরকে যেতে দিলেন আপনারা! রাগে দুঃখে মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা হল। মেরিচাচীর। আমার…আমার ছেলেটাকে নিয়ে গেল!,
সহকারীদের দিকে ফিরে আদেশ দিলেন শেরিফ, গাড়ির কাছে ফিরে যেতে। টেলিফোনে নির্দেশ দেবেন পুলিশের হেলিকপ্টারকে, যাতে পিছু নিতে পারে।
কিশোরকে কিন্তু দেখলাম, না হেলিকপ্টারে, রবিন বলল।
হয়ত কেবিনেই রয়ে গেছে, মুসা বলল। আমাদেরকে দেখেই পালিয়েছে ব্যাটারা। ওকে নেয়ার আর সময় পায়নি।
কেবিনের দিকে ছুটে গেলেন চীফ। ঠেলা দিয়ে খুলে ফেললেন ভেজানো দরজা। পেছনে ঢুকল অন্যেরা। শূন্য ঘর।
খাইছে! নেই তো! গুঙিয়ে উঠল মুসা।
আগেই হয়ত কপ্টারে তোলা হয়েছিল, রবিন বলল। দেরি করে ফেলেছি আমরা।
না, নথি, যেন গায়েবী আওয়াজ হল। বরং সময়মতই এসেছ।
কেবিনের পেছন দিকের দুটো তক্তা উঠে গেল। বেরিয়ে এল কিশোর পাশা। মুখে হাসি।
কিশোওর! প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল সবাই।
হ্যাঁ, কিশোর, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। আর কাউকে আশা করেছিলে নাকি?
০৬.
…বেরোনোর কোনও পথ পেলাম না, পত্রিকার লোকদেরকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলল কিশোর। তাই আর কি করব? ভাবলাম, লুকিয়েই থাকি। তারপর যা হয় হবে। কাজে লাগল ফন্দিটা। ধোঁকা খেল ব্যাটারা। আমিও বেঁচে গেলাম।
বুদ্ধিমান ছেলে, বলল একজন রিপোর্টার।
কিশোর পাশা বুদ্ধিমানই, হেসে বললেন চীফ ইয়ান ফ্লেচার। নইলে কি আর পুলিশকে সাহায্য করতে পারত?
রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলছে, একই সাথে পুলিশের ফাইলও ঘাঁটছে কিশোর। রকি বীচ পুলিশের হাতে অ্যারেস্ট হওয়া অপরাধীদের সমস্ত ছবি রয়েছে
ফাইলে। কিডন্যাপারদের চেহারার লোক আছে নাকি ওখানে দেখছে সে।
কি চায় কিচ্ছু বলেনি? প্রশ্ন করল একজন রিপোটার।
অবান্তর প্রশ্ন, বাধা দিয়ে বললেন চীফ। সেটা পুলিশের ব্যাপার। আপনাদেরকে বলার জন্যে নয়। একটু থেমে বললেন, তবে একটা কথা বলতে পারি, মিস্টার রাশেদ পাশা তেমন বড়লোক নন যে তার ভাতিজাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে মস্ত লাভ হবে কিডন্যাপারদের। অন্তত টাকাপয়সার দিক দিয়ে।
মনে মনে চীফের ওপর ভীষণ রেগে গেল রিপোর্টাররা। কিন্তু কিছু করার নেই। কেউ যদি কিছু বলতে না চায় তাকে চাপাচাপি করার অধিকার নেই ওদের। কিশোরের বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল ওরা।
ঠিক কিডন্যাপারদের মত কিন্তু লাগেনি ওদেরকে, রবিন মন্তব্য করল।
নতুন কিছু জেনেছেন, স্যার? চীফকে জিজ্ঞেস করল মুসা। ধরা যাবে?
বুঝতে পারছি না। অতটা সহজ হবে বলে মনে হয় না।
কিন্তু রিপোর্টারদেরকে তো বললেন সাধারণ কিডন্যাপিং।
কিডন্যাপাররা ধরা না পড়া পর্যন্ত মুখ বুজে থাকাই ভাল। এতে কম সাবধান থাকে ওরা। ধরা সহজ হয়।
তা ঠিক, কিশোরও একমত হল। যত কম জানে ততই ধরতে সুবিধে। কিডন্যাপাররা ভাববে আমরা কিছুই জানি না। অসাবধান হবে। সেই সুযোগটা তখন কাজে লাগাতে হবে আমাদের।