পালানোর কোনই পথ নেই।
.
র্যাটলস্নেক রোডে মার্সিডিজটার, পেছনে এসে থামল পুলিশের গাড়ি। গাড়ির। ভেতরটা ভালমত পরীক্ষা করে দেখা হল।
কিছুই নেই, মুখ কালো করে বললেন ইয়ান ফ্লেচার। এখান থেকে কোন দিকে গেছে বোঝার উপায় নেই।
কিন্তু জলজ্যান্ত একটা মানুষ গায়েব হয়ে যেতে পারে না, মেরিচাচী বললেন।
গাড়িটার আশপাশে খুঁজে দেখলেন রাশেদ পাশা, মুসা আর রবিন। রাস্তার পাশের ঘাসে ঢাকা জুমিতে নামিয়ে রাখা হয়েছে ওটা।
কিশোরের কোনও চিহ্নই তো দেখছি না, রবিন বলল।
একটা পায়ের ছাপ পর্যন্ত নেই, বললেন রাশেদ পাশা।
বাতাসে মিলিয়ে গেছে যেন, চীফ বললেন। আশপাশের ঘন ঝোপ আর একধারে মাথা তুলে দাঁড়ানো পর্বতের দিকে নজর। যা অঞ্চল! যেখানে খুশি নিয়ে । সব গিয়ে লুকিয়ে রাখতে পারে কিশোরকে।
তা পারে, মুসা বলল। তবে বেশি দূরে গেছে বলে মনে হয় না আমার।
.
০৫.
কি করে বুঝলে? ভুরু নাচালেন শেরিফ।
সূত্রটুত্র পেয়েছ নাকি? চীফ জানতে চাইলেন।
মার্সিডিজের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁচা রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। বসে পড়ে মাটিতে আলগা ধুলোয় হাত বোলাল।
দেখুন, স্যার! সামনের মাটির দিকে দেখাল সে। পুরো রাস্তাটায় ওখানটাতেই যা এক চিলতে নরম মাটি দেখছি। মার্সিডিজের চাকার দাগ আছে। আর কোনও গাড়ি নেই। তার মানে অন্য গাড়ি আসেনি এখানে ওদেরকে তুলে নেয়ার জন্যে। এ পথে হেঁটে যাওয়ারও কোনও লক্ষণ দেখছি না। এর একটাই অর্থ, কাছাকাছিই আছে ওরা।
মুসা যেখানটা দেখিয়েছে সে জায়গাটা চীফও পরীক্ষা করলেন। খটখটে শুকনো মাটি। প্রচুর ধুলো আছে। অথচ পায়ের ছাপ নেই।
তার মানে, রবিন বলে উঠল। মুসা ঠিকই বলেছে। কাছাকাছিই আছে ওরা।
আছে, আবার বলল মুসা। রাস্তাই পেরোয়নি। আমার ধারণা, সোজা নেমে গেছে ঝোপের কাছে। ওই চ্যাপারেলের ঝোপের ভেতর দিয়ে চলে গেছে পর্বতের দিকে পা বাড়াতে গেল সে।
দাঁড়াও! বাধা দিলেন চীফ। পথের একপাশ দেখিয়ে বললেন, এখানে ঘাস আছে, পায়ের ছাপ পড়বে না। এদিক দিয়েও গিয়ে থাকতে পারে।
শেরিফও একমত হলেন তার সঙ্গে। দুজন সহকারীকে বললেন, অ্যাই, এই ঘাস ধরে তোমরা দুজন দুদিকে চলে যাও। পায়ের ছাপ দেখলেই ডাকবে। আমরা ঝোপগুলোয় খুঁজব। দেখি ঢোকার কোনও পথ আছে কিনা।
আশ্চর্যবোধক চিহ্ন চোখে পড়ে কিনা দেখবেন, রবিন বলল। কিংবা অস্বাভাবিক কিছু। জড় করা পাথর হতে পারে। ভাঙা ডাল হতে পারে। ওরকম চিহ্ন রেখে যেতে পারে কিশোর।
রাস্তার যে পাশে পর্বত সেদিকটায় খুঁজতে চলল পুলিশ আর শেরিফের দুই ডেপুটি। দুই দল দুই দিকে গেল। খানিক পরেই ফিরে এল ওরা। জানাল ঘাস বেশিদূর নেই। তাতে পায়ের ছাপও নেই। একজন খুঁজে পেল পাথরের ছোট একটা স্তূপ। আন্দাজ করল, ওটা কিশোরের রেখে যাওয়া নির্দেশক হতে পারে। পরীক্ষা করে দেখলেন শেরিফ। অনেক পুরনো মাটি বেরোল পাথরের ফাঁক থেকে। অনেক দিন ধরে একরকম ভাবে পড়ে আছে। নতুন নয়। তার মানে এটা কিশোর। রেখে যায়নি। একজন পুলিশ খুঁজে বের করল একটা ঝোপ। ওটার ডাল ভাঙা। ঘন ঝোপে খোঁজাখুজি করা হল। আর কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না। রাস্তা চোখে পড়ল না।
চীফ? ডেকে বলল আরেকজন পুলিশ। দেখুন তো!
ছোট শাদা একটা জিনিস আটকে রয়েছে ঝোপের কাটায়। একটুকরো শাদা শক্ত কাগজ। দৌড়ে গেল রবিন আর মুসা।
দেখে তো…, শুরু করল রবিন।
শেষ করল মুসা, আমাদের কার্ডের মত মনে হচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে খুলে আনল কার্ডটা। হ্যাঁ, তিন গোয়েন্দার কার্ডই। কোনও ফাঁকে কিডন্যাপারদের চোখ এড়িয়ে ফেলে গেছে কিশোর।
দেখি, ঝোপটা ফাঁক কর, নির্দেশ দিলেন শেরিফ।
ডেপুটিরা আর পুলিশ মিলে টেনে ফাঁক করল ঝোপের ডাল। সরু পায়ে চলা। পথটা আবিষ্কার করতে বেশিক্ষণ লাগল না।
রাস্তাই। সন্দেহ নেই, তাকিয়ে রয়েছে চীফ। দেখ, হেঁটে গেছে কেউ। পরিষ্কার চিহ্ন রয়েছে।
সরু পথটা ধরে চলল সবাই।
ওই তো! রবিন দেখাল। একটা ঝোপের পাতা ছেঁড়া, ডাল দোমড়ান; যেন কেউ পড়ে গিয়েছিল ওখানে। কাছেই একটা পাথরে খুদে একটা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন।
কিশোরই এঁকেছে। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। চক ছিল পকেটে।
জলদি! তাগাদা দিলেন রাশেদ পাশা। আছে কাছাকাছিই, পর্বতে…
থেমে গেলেন তিনি। কান পেতে শব্দ শুনছেন। তারপর সকলেই শুনতে পেল শব্দটা। শক্তিশালী মোটরের আওয়াজ ক্রমেই বাড়ছে ঠিক যেন ওদের মাথার ওপর।
আকাশের দিকে হাত তুললেন মেরিচাচী। হেলিকপ্টার!
কপালের ওপর হাত রেখে দেখতে লাগলেন শেরিফ। পুলিশের কিনা বোঝার চেষ্টা করছেন। একশ গজ ওপর দিয়ে উড়ে গেল পর্বতের দিকে।
না, ইঞ্জিনের গর্জনকে ছাপিয়ে চিৎকার করে বললেন চীফ। পুলিশের নয়! কিনডন্যাপারদের! ওটাতে করেই পালাবে!
গাছের আড়ালে হারিয়ে গেল কপ্টারটা। ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল ইঞ্জিনের শব্দ।
আপনি না বললেন কিছুতেই বোরোতে পারবে না! শেরিফের ওপর ভীষণ রেগে গেলেন মেরিচাচী।
থামবে না কেউ, হাঁটো! মেরিচাচীর কথা এড়িয়ে গিয়ে বললেন শেরিফ। সামনেই কোথাও আছে। পালানোর আগেই ধরতে হবে
যদি সময় মত পৌঁছতে পারি! আর ভরসা করতে পারছে না মুসা।
.
ধুলোর ঘূর্ণি তুলে বক্স ক্যানিয়নে নামল হেলিকপ্টার। পরিষ্কার প্রেক্সিগ্লাস বাবলের ভেতর থেকে লাফিয়ে নামল পাইলট। পরনে ফ্লাইং স্যুট, মাথায় হেলমেট, চোখে গগলস, মাথা নিচু করে দৌড়ে এল দুই কিডন্যাপারের কাছে।