ল্যাবরেটরি এক্সপার্টদের একটা দল ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গেছে, চীফ, জানালেন। যে জায়গাটায় কিডন্যাপ করা হয়েছে সেখানটায় আবার ভালমত খুঁজবে ওরা। সূত্রটুত্র কিছু না পেলে তো এগোতে পারছি না আমরা।
আপনি নিজে গিয়ে কিছু করছেন না কেন? কিছুতেই বুঝতে চান না। মেরিচাচী।
এখন গিয়ে তো আর লাভ নেই, জবাবটা দিলেন শেরিফ। অযথা অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানোর চেয়ে একটা সূত্র নিয়ে যদি বেরোতে পারি, তাহলে কাজ হতে পারে।
কিছুতেই বোঝান গেল না মেরিচাচীকে। চীফ আর শেরিফ বেরিয়ে গেলেন। সেদিকে জুলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তিনি। নিষ্ফল হয়ে ফিরে এল ল্যাবরেটরি টীম। শুনে আরও খেপে গেলেন তিনি। তার ধারণা, পুলিশ কোনও কাজের না। নইলে এতগুলো লোক মিলে এত চেষ্টা করেও এখনও কোনও খোঁজ বের করতে পারছে না কেন কিশোরের?
ছেলেটাকে যে কোথায় নিয়ে গেল! ফুঁসে উঠলেন মেরিচাচী। এই, মুসা আর রবিনের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝাল কণ্ঠে বললেন। আবার কিছুর তদন্ত করছ না। তো তোমরা? কোনও কেটেস নয় তো? অন্যের ব্যাপারে নাক গলাতে গিয়েছিলে?
না, আন্টি, জবাব দিল রবিন। সত্যি বলছি, ম্যাজিক মাউনটেইন দেখতে বেরিয়েছিলাম আমরা।
রাশেদ পাশা জিজ্ঞেস করলেন, কেন কিডন্যাপ করা হল কিছুই বুঝতে পারছ না?
ইস, যদি পারতাম! আবার আফসোস করল মুসা।
ব্যাটাদের যদি খালি ধরতে পারতাম, দাঁত কিড়মিড় করলেন মেরিচাচী। চট করে একে অন্যের দিকে তাকাল রবিন আর মুসা। এত দুঃখেও হাসি পেল। ওদের। মেরিচাচীর সামনে যদি এখন পড়ে কিডন্যাপাররা তাহলে তাদের জন্যেই। কষ্ট হবে ওদের।
একটা উপায় বের করতে পারলেও হত, রবিন বলল। খুঁজতে যেতে পারতাম। কিশোর কি কোনই পথ করে রেখে যায়নি?
পারলে তো করবে, মুসা বলল। লোকগুলো সাংঘাতিক চালাক। সুযোগ দেবে বলে মনে হয় না।
কাছে এসে দাঁড়ালেন চীফ। কতটা চালাক শীঘ্রি সেটা বের করব। হেলিকপ্টার নিয়ে বেরিয়েছিল শেরিফের একজন লোক। র্যাটলস্নেক রোডের পাশে মার্সিডিজটা দেখতে পেয়েছে সে। শহর থেকে তিন মাইলের বেশি হবে না।
চলুন! চলুন! পেছন থেকে প্রায় চিৎকার করে বললেন শেরিফ, এইবার পেয়েছি ব্যাটাদের!
.
কেবিনে একা বসে আছে কিশোর। বাইরে লোকগুলো কি বলে শোনার চেষ্টা করছে। ভাবছে, সে যে পিটার নয় এটা বুঝতে কতক্ষণ সময় লাগবে। লোকগুলোর?
ওদের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে সে, তবে কথা ঠিকমত বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছে লোকগুলো। আরও একজন লোকের। ব্যাপারে কথা বলছে যে তখন ওখানে নেই। বুঝতে অসুবিধে হল না, সেই লোকটার আসার অপেক্ষাতেই রয়েছে ওরা। কেউ একজন আসবে। কিছু একটা ঘটবে।
কিন্তু কে আসবে? আর এই পার্বত্য নির্জন এলাকায় ঘটবেটাই বা কি?
আরও ভাল করে শোনার জন্যে কান খাড়া করল সে। লাভ হল না। মোচড় দিয়ে উঠল পেটের ভেতর। যে আসবে সে যদি আসল পিটারকে চেনে? কেবিন থেকে বেরোনো দরকার। পালাতে হবে কিডন্যাপারদের কবল থেকে। নইলে কি যে ঘটবে বলা মুশকিল। মুখ বন্ধ করানোর জন্যে মেরেও ফেলা হতে পারে ওকে।
ছোট কেবিনটায় চোখ বোলাল সে। একটি মাত্র শূন্য ঘর। আসবাব নেই বললেই চলে। একমাত্র দরজাটা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আটকান। জানালাও একটাই। আড়াআড়ি তক্তা লাগিয়ে পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিপজ্জনক জিনিস রাখা হত বোধহয় এখানে। পাহাড় ভাঙার জন্যে ডিনামাইট হতে পারে। কিংবা তেল তোলার যন্ত্রপাতি।
কিন্তু এখন আর কিছুই নেই কেবিনে। পালানোর পথও দেখতে পাচ্ছে না সে।
পাথরের দেয়ালের ধার ঘেঁষে একবার চক্কর দিল। দুর্বল জায়গা খুঁজল। নেই। প্রায় এক ফুট পুরু দেয়াল। ফাটল-টাটল দেখা গেল না। এই দেয়াল ভেঙে বেরোন সম্ভব না। আর ভাঙার কিছু নেইও কেবিনে। যদি থাকতও, তাতে লাভ হত না। ভাঙতে গেলে বিকট আওয়াজ হবে। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে এসে উঁকি দেবে লোকগুলো। মোট কথা, দেয়ালের গায়ে বেরোনোর কোনও পথ নেই। অবশেষে মেঝের দিকে নজর দিল সে।
ইঞ্চিখানেক পুরু চওড়া বড় বড় তক্তা দিয়ে মেঝে তৈরি হয়েছে। গায়ে গায়ে ঠেসে বসান। ফাঁকও নেই তেমন। তবে জোরে চাপ দিলে বাঁকা হয়ে যায়। মাটিতে বসান হয়নি তক্তাগুলো। আড়াআড়ি কডিকাঠের মত তক্তা নিচে পেতে তার ওপর সাজান হয়েছে। নিচে ফাঁক তেমন নেই।
হামাগুড়ি দিয়ে পুরো মেঝেটা ঘুরে দেখল কিশোর। পেছনে দেয়ালের কাছে একটা তক্তা আলগা। এক প্রান্তে পা দিয়ে চেপে ধরে তত্তটা তুলে তার ফাঁকে। হাত ঢুকিয়ে দিল সে। টেনে সরিয়ে আনল ওটা।
নিচে ফাঁক রয়েছে। নীরবে পাশের তক্তাটার ওপরও কাজ করে চলল সে। সরিয়ে ফেলতে পারল অনেক কায়দা কসরৎ করে। নেমে গেল ফাঁকটায়। মেঝে আর মাটির মধ্যখানে যেটুকু ফাঁক রয়েছে, তাতে শুয়ে পড়া যায়। তা-ই করল সে। একধারে ঢালু হয়ে নেমে গেছে মাটি। বুকে হেঁটে ঢাল ধরে এগোল সে। মেঝের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে ফাঁক এত কমে গেছে বুকে হেঁটেও আর এগোন যায় না। চারপাশের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে পাথর দিয়ে। বাতাস চলাচলের জন্যে খুব ছোট ছোট ছিদ্র রাখা হয়েছে। সেসব দিয়ে মানুষ বেরোনো অসম্ভব। বেরোনোর পথ পেল না।
বাধ্য হয়ে যে পথে নেমেছিল সে পথে আবার ওপরে উঠে এল সে।