গর্জন করতে করতে চলে গেল মার্সিডিজটা।
দিয়েছেন খসিয়ে! প্রায় চিৎকার করে বলল রবিন।
আপাতত, হ্যানসন বলল। তবে শীঘ্রি ওরা বুঝে যাবে ফাঁকিটা। ফিরে আসবে আমাদেরকে ধরার জন্যে। জলদি পালাতে হবে আমাদের।
একসিলারেটর চেপে ধরল সে। তীব্র গতিতে ছুটল গাড়ি, ধুলো ওড়াতে ওড়াতে। খানিক পরই গতি কমিয়ে ফেলল হ্যানসন। ব্রেক কষে থামিয়ে দিল। গাড়ি। সরি। লাভ হল না। এতক্ষণে হতাশা প্রকাশ পেল তার কণ্ঠে।
কি হয়েছে দেখল ছেলেরা। সামনে পাহাড়ের দেয়াল। দুধারে পাহাড়। পথ। রুদ্ধ। একটা বক্স ক্যানিয়নে ঢুকেছে গাড়ি।
হাইওয়েতে ফিরে চলুন! নির্দেশ দিল কিশোর। জলদি! হয়ত এখনও বুঝতে পারেনি ওরা যে আমরা ফাঁকি দিয়েছি।
গাড়ি ঘোরাল হ্যানসন। ফিরে চলল মেইন রোডের দিকে।
তীক্ষ্ণ একটা মোড় ঘুরতেই সামনে পড়ল মার্সিডিজ। আরেকটু হলেই ওটার। গায়ে গুতো মেরে বসত রোলস রয়েস। ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়েই স্টিয়ারিং ঘোরাতে শুরু করল হ্যানসন, পাশ কেটে বেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলল মার্সিডিজের দুই আরোহী। দুপাশ থেকে দরজা খুলে লাফিয়ে। নেমে এল। হাতে পিস্তল।
বেরোও! জলদি! গর্জে উঠল একজন।
সাবধানে রোলস রয়েস থেকে নেমে এল হ্যানসন আর তিন গোয়েন্দা।
দেখুন, হ্যানসন বলল। বুঝলাম না কেন আপনারা
চুপ! ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল লোকটা।
খপ করে বিস্মিত কিশোরের কব্জি চেপে ধরল আরেকজন। তার মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে একটা মোটা থলে নামিয়ে দিল মাথার ওপর। টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে তাকে মার্সিডিজে তোলা হল। পিস্তলের মুখে কিছুই করতে পারল না হ্যানসন, মুসা আর রবিন। নীরব অসহায় দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
খবরদার আমাদের পিছু নেবে না! শাসিয়ে বলল একজন, যদি বন্ধুর জীবন বাঁচাতে চাও। তোমরা গোলমাল করলে ওর বিপদ হবে।
চলতে শুরু করল মাসাজ। হারিয়ে গেল হাইওয়ের দিকে।
.
০৩.
চরকির মত পাক খেয়ে রোলস রয়েসের দিকে ঘুরল মুসা। আসুন, পিছু নেব!
না, মুসা! বলল রবিন আর হ্যানসন।
ওদের দিকে তাকিয়ে রইল মুসা। কিন্তু ওকে বাঁচাতে হবে তো!
তা তো হবেই, মুসার কাঁধে হাত রাখল হ্যানসন। কিন্তু ওদের পিছু নেয়া চলবে না। কিডন্যাপাররা বিপজ্জনক লোক।
ওদের পিছু নিলে কিশোরের ক্ষতি করতে পারে, রবিন বলল। তবে ওরা। কোন দিকে গেল সেটা আমাদের দেখা দরকার, যাতে পুলিশকে বলতে পারি। ওরা জানে না আমাদের গাড়িতে ফোন আছে। পুলিশকে সতর্ক করে দিতে পারব ভাবেনি। মুসা, জলদি চল। পাহাড়ের ওপরে গিয়ে দেখি। হ্যানসন, আপনি থানায় ফোন করুন। চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে পান কিনা দেখুন।
প্রায় ডাইভ দিয়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকল হ্যানসন। রবিন: আর মুসা উঠতে শুরু করল ঢাল বেয়ে। তাড়াতাড়ি ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে হাঁপাতে লাগল অল্পক্ষণেই। চূড়ায় যখন উঠল দরদর করে ঘামতে আরম্ভ করে দিয়েছে। হাইওয়ের দিকে তাকাল।
ওই যে! রবিন হাত তুলল।
দক্ষিণে যাচ্ছে! মুসাও দেখতে পেয়েছে। রকি বীচের দিকেই তো। এত আস্তে চলছে কেন?
কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে না হয়ত।
পুলিশ তাড়াতাড়ি করলে ওদেরকে ধরে ফেলতে পারবে। এস।
ঢাল বেয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে পা পিছলাল রবিন। গড়িয়ে নামল কিছুদূর। আবার উঠল। মুসা একবারও না পড়ে দৌড়ে নেমে চলেছে। রোলস রয়েসের কাছে পৌঁছে শুনল পুলিশকে মার্সিডিজের লাইসেন্স নম্বর আর লোক দুটোর চেহারার বর্ণনা জানাচ্ছে হ্যানসন।
চীফকে বলুন, মুসা বলল। দক্ষিণে রকি বীচের দিকে যাচ্ছে ওরা। তাড়াতাড়ি করলে সামনে দিয়ে এসে পথ আগলাতে পারবে।
মুসার কথাগুলোও পুলিশকে জানাল হ্যানসন। ওপাশের কথা শুনল। তারপর বলল, চীফ। আমরা আছি। আসুন।
ফোন রেখে দিয়ে ছেলেদের দিকে তাকাল সে। কিশোরকে নিয়ে গিয়ে কি করতে চায়? ওরা কে সত্যিই চেন না?
কালকের আগে দেখিইনি কখনও, জবাব দিল রবিন।
কিচ্ছু জানি না আমরা! প্রায় ককিয়ে উঠল মুসা।
নিরাশ দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল ওরা।
.
ধীরে চলছে মার্সিডিজ। ধীরে ধীরে নিচে নামছে পথ। কাউন্টি হাইওয়ে ধরে চলেছে, অনুমান করল কিশোর। তার মানে রকি বীচের দিকে চলেছে। তাকে নিয়ে কি করতে চায় লোকগুলো? ওরা কারা? কোনদেশী লোক?
পেছনের সীটে ফেলে রাখা হয়েছে তাকে। বান মাছের মত শরীর মোচড়াল। সে। পিস্তলের নলের খোঁচা লাগল পাজরে। একজন তার কাছেই বসে রয়েছে।
চুপ করে থাক, আদেশ দিল লোকটা।
কথা বলার চেষ্টা করল কিশোর। প্রতিবাদ করতে চাইল। কথা বেরোল না মুখ দিয়ে, শুধু গোঁ গো শব্দ।
চুপ করতে বললাম না! ধমকে উঠল লোকটা। লক্ষ্মী ছেলে হয়ে থাকবে, বড় বংশের ছেলের মত।
নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠল লোকটা। কুৎসিত হাসি প্রতিধ্বনি তুলল বদ্ধ জায়গায়। অন্য লোকটা নীরবে গাড়ি চালাচ্ছে।
কিন্তু আবার কথা বলার চেষ্টা করল কিশোর। তাকে নিয়ে কি করবে। লোকগুলো জিজ্ঞেস করতে চাইল। কিডন্যাপ লোকে একটা কারণেই সাধারণত করে। জিম্মি রেখে টাকা আদায়ের জন্যে। রাশেদ পাশার কাছে কি টাকা চাইবে! গোঙানি আর কুলকুচা করার মত এক ধরনের মিশ্র শব্দ বেরোল তার গলা থেকে। ছটফট করছে ডাঙায় ভোলা মাছের মত।
চুপ থাকতে বললাম না। বাবাকে নির্বংশ করার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি?