জোরাল একটা টিইপ টিইপ যেন ভরে দিল ক্যাডিলাকের ভেতরটা। চমকে উঠল সবাই। সব কটা চোখ ঘুরে গেছে মুসার দিকে। শব্দটা আসছে তার শার্টের পকেট থেকে।
ইমারজেন্সি সিগন্যাল! চিৎকার করে বলল সে।
অফ কর ওটা, চীফ বললেন। এখন এসব গোলমাল…
না না, কর না! হাসল কিশোর। ওটাই তো আসল। বের করো পকেট থেকে। দেখো, তীরটা কোন দিক নিদের্শ করছে। কিডন্যাপাররা কাছাকাছিই রয়েছে।
যন্ত্রটা বের করে ডায়ালের দিকে তাকাল মুসা। গাড়ির সারির দিকে নির্দেশ করে রয়েছে তীরটা। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে যানবাহনগুলো। ওগুলোর মাঝে একটাও নীল লিংকন নেই। আর কোনও বাসও নেই। শুধুই গাড়ি আর গাড়ি। চার-পাঁচটা ট্রাক আর ভ্যানও রয়েছে।
আসুন! নামুন সবাই! বলতে বলতে নেমে পড়ল কিশোর।
যানবাহনের সারির দিকে এগোল ওরা। মাঝের লেনে একটা পুরনো ট্রাক রয়েছে। মেকসিকোর লাইসেন্স প্লেট। দুপাশে মলিন অক্ষরে স্প্যানিশ ভাষায়, লেখা রয়েছে মেকসিকোর একটা লেটুস ফার্মের নাম। বর্ডার বুদের দিকে এগোচ্ছে। ওটা। মুসার ডায়ালের কাটা সোজা মুখ করে রয়েছে ওটার দিকে।
ওটাই! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। জলদি আসুন!
আগে আগে ছুটছেন এখন চীফ। বুদের সামনে গিয়ে থামল ট্রাকটা। তিনিও পৌঁছে গেলেন এই সময়। ট্রাকের পেছনের ক্যানভাসের ঢাকনা তুলল গার্ড। ভেতরে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। স্যান ডিয়েগো পুলিশকে ইশারা করল গাড়িটা ছেড়ে দেয়ার জন্যে।
না। চিৎকার করে বলল কিশোর। এই ট্রাকেই আছে ওরা।
মাথা নাড়ল প্রহরী। সরি, ইয়াং ম্যান, ওতে কেউ নেই। পেছন দিকটা খালি। শুধু ড্রাইভিং সীটে ড্রাইভার। মেকসিকোর লোক।
হতেই পারে না, জোর তর্ক শুরু করল কিশোর। শুনছেন, আমাদের সিগন্যাল কত জোরে বাজছে?
যানবাহনের শব্দকে ছাপিয়ে টিপ টিপ করছে যন্ত্রটা। কিং আর ইয়ান ফ্লেচার গিয়ে ক্যানভাস তুলে দেখলেন। পেছনটা পুরো খালি।
তোমার সিগন্যাল নিশ্চয় কোনও গোলমাল করছে, কিং বলল।
ট্রাকের শূন্য পেছনটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। একপাশে চলে এল। দেখল ট্রাকের সে পাশটা চকচক করে উঠল চোখ। না, মিস্টার কিং, আমাদের সিগন্যাল ঠিকই কাজ করছে। ট্রাকের ভেতরটা দেখুন। বেখাপ্পা লাগছে না বডিটা? বাইরের দেয়ালের ভেতরে আরেকটা দেয়াল আছে। মাঝখানটায় ফাঁপা।
স্যান ডিয়েগোর দুজন পুলিশকে নিয়ে লাফিয়ে ট্রাকের পেছনে উঠলেন ইয়ান ফ্লেচার। দেয়ালটা পরীক্ষা করে মাথা নাড়লেন। কিশোর, দরজা-টরজা কিছু নেই।
থাকার কথাও নয়, জবাব দিল কিশোর। এত বোকা নয় কিডন্যাপাররা। ওরা ভেতরে ঢোকার পরই নিশ্চয় ভেতরের দেয়ালটা লাগান হয়েছে। স্যান, ডিয়েগোতে থেমেইছিল সেজন্যে। এটাই ছিল ওদের জরুরী কাজ। দেয়াল খুলে আনতে হবে।
সাবধান, চীফ, হুঁশিয়ার করল হ্যারি। ওরা ভয়ংকর লোক। অস্ত্র আছে।
ট্রাকের দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়তে ইশারা করলেন চীফ পুলিশ দুজনকে। পিস্তল বের করলেন। দেয়ালে লাথি দিয়ে বললেন, ব্যস, হয়েছে, এবার বেরিয়ে এসো। হাত তুলে। কিছু করার চেষ্টা করলে মরবে।
কোনও সাড়া এল না। শুধু যানবাহনের ইঞ্জিনের গুঞ্জন চলছে একটানা। আর মুসার সিগন্যালের জোরালো শব্দ।
কড়া গলায় আবার আদেশ দিলেন ফ্লেচার।
কয়েক সেকেণ্ড নীরবতা। তারপর মড়মড় করে কাঠ ভাঙার শব্দ হলো। ভেঙে খুলে গেল দেয়াল। হাত তুলে বেরিয়ে এল জন আর ডেভ। ওই যে কিশোর বলেছিল, ভেড়া বানিয়ে ছাড়বে, ভেড়াই বনে গেছে যেন ওরা।
কিশোরের ওপর চোখ পড়ল ডেভের। জিজ্ঞেস করল, তুমি! এত তাড়াতাড়ি বেরোলে কি করে? ট্রাকটা চিনলে কি করে?
চুপ! ধমক দিয়ে বললেন চীফ। অত কথার দরকার নেই! ওদের পিস্তলগুলো কেড়ে নিলেন তিনি।
ভেতরে হাত-পা বাঁধা আর মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় পাওয়া গেল পিটারকে। তাকে বের করা হলো। মুখ থেকে কাপড় খুলতেই হাসল সে। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে। বের করলে কিভাবে? তাজ্জব ব্যাপার!
কি করে, কিশোর? হ্যারিও অবাক। সিগন্যালের সাহায্যেই করেছ, বুঝলাম, কিন্তু যন্ত্রটা ওখানে গেল কিভাবে? ট্রাকটা তো আগে কখনও দেখোনি?
ট্রাকে ওই যন্ত্র আমি ঢোকাইনি, হেসে বলল কিশোর। ওরা নিজেরাই ঢুকিয়েছেন।
ওরা? একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল রবিন আর মুসা।
মনে আছে, ওয়ার্কশপে ডেভকে বলেছিলাম, বুঝিয়ে দিল কিশোর। বাগটা রয়েছে পিটারের পকেটে? বলার কারণ ছিল। আমার যন্ত্রটা ছিল আমার প্যান্টের পকেটে। কাজেই চাইছিলাম পিটারের পকেটেই আগে খুঁজুক ও। পিটারের দিকে ঘুরল সে। আমি তার খুব কাছাকাছি ছিলাম। চট করে এক সুযোগে আমার যন্ত্রটা, ফেলে দিলাম ডেভের কোটের পকেটে।
দাঁত বের করে হাসল কিশোর। সারাক্ষণ তার পকেটেই ছিল যন্ত্রটা। ওটার বীপার অফ করা ছিল, কাজেই শব্দ করেনি। কিন্তু সিগন্যাল ঠিকই পাঠাচ্ছিল।
ডেভের দিকে তাকিয়ে রাগ করে বলল জন, গাধা কোথাকার!
জ্বলন্ত চোখে ডেভও তাকাল জনের দিকে, তোমার গাধামী বুদ্ধির জন্যেই এরকম হলো!
নিয়ে যান এগুলোকে বিরক্ত হয়ে পুলিশম্যানদের নির্দেশ দিলেন ফ্লেচার।
একে অন্যকে বকাবকি আর দোষারোপ করতেই থাকল দুই কিডন্যাপার। হাতকড়া পরিয়ে ওদের ট্রাক থেকে নামাল পুলিশ।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে কিছুটা রাগ করেই চীফ বললেন, সিগন্যালটার কথা আমাদেরকে বলনি, কিশোর!