কার সঙ্গে?
ওদের সহকর্মীদের সঙ্গে, আমার বিশ্বাস। সহকারীরা রয়েছে মেকসিকোর টিজুয়ানায়। ওরা বলল, এবার পিটারকে ধরেছে, কোনও সন্দেহ নেই। আর প্ল্যান মোতাবেকই বেরিয়ে যাবে।
প্লানটা কি?
জানি না। ও সম্পর্কে কিছু বলেনি ওরা।
তাহলে কি করে…? বলতে গিয়ে বাধা পেল কিং।
কয়েকটা সূত্র আছে আমাদের হাতে, কিশোর বলল। কিডন্যাপাররা মেকসিকো সীমান্তের কাছে টিজুয়ানায় কারও সঙ্গে দেখা করবে। টিজুয়ানা দিয়ে মেকসিকো সীমান্ত পার হবে ওরা।
কিন্তু সেটা কখন? জিজ্ঞেস করলেন চীফ। যে কোনও সময় পেরোতে পারে ওরা।
ওরা বলেছে স্যান ডিয়েগোতে কাজ আছে ওদের। সীমান্ত পেরোনোর আগে কিছুক্ষণ থামবে ওখানে। সীমান্ত পার হবে রাত দশটায়।
আর ঠিক ওই সময় আমরা গিয়ে বসে থাকব ওখানে! কিং বলল। ভালই হবে, খুব ভাল। ভাবছি
ওদের প্ল্যান জানার আমাদের কোনও দরকার নেই, চীফ বললেন। কার সঙ্গে দেখা করবে সেটাও জানা লাগবে না। ওসব ছাড়াই ওদেরকে আটক করতে পারব আমরা।
সে রকমই আশা করছি, কিশোর বলল।
কিশোর, রবিন জিজ্ঞেস করল। পিটারকে নিয়েই সীমান্ত পেরোবে তো? মানে, এতটা খোলাখুলি যাওয়ার সাহস করবে? ছদ্মবেশ নেবে না তো? কিংবা পিটারকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা?
তাই তো। মুসা কথাটা ধরল। পুলিশ যে ওদের পিছে লাগতে পারে এটা না বোঝার মত বোকা নিশ্চয় নয় ওরা। সীমান্তেও কড়া নজর রাখা হতে পারে, এই সন্দেহও করতে পারে ওরা।
তা পারে, মাথা দোলাল কিং। তাহলে চিনব কি করে ওদেরকে? পুলিশই বা বুঝবে কিভাবে?
সেটা আমাদের কাজ, আশ্বস্ত করলেন্ত চীফ। ছদ্মবেশী লোককে কি করে চিনতে হয়, সে ব্যাপারে ট্রেনিং আছে আমাদের।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে। দক্ষিণে ছুটে চলেছে ক্যাডিলাক। স্যান ডিয়েগোতে পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে গেল। নটার বেশি বেজেছে। সোজা সীমান্তের দিকে যেতে দেখল স্যান ডিয়েগো পুলিশের দুটো পেট্রল কারকে।
আধ ঘণ্টা সময় আছে আমাদের হাতে, ঘড়ি দেখে বলল কিশোর। তার পরে যে কোনও মুহূর্তে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করতে পারে কিডন্যাপাররা।
ওরা, কিছুটা হতাশার সুরেই বলল মুসা। এবং আরও হাজারও মানুষ। সব সময়ই পেরোয়।
অনেকগুলো লেন এগিয়ে গেছে সীমান্তের দিকে। অসংখ্য গাড়ি, বাস, আর ট্রাকের সারি যেন স্রোতের মত এগিয়ে চলেছে সেদিকে সবাই সীমান্ত পেরোবে। প্রতিটি গাড়ির প্রায় বাম্পারে বাম্পারে লেগে যাচ্ছে, এতই কাছাকাছি। চেক পয়েন্টের দিকে এগোচ্ছে। চেক হয়ে যাওয়ার পর ঢুকে পড়ছে মেকসিকোতে।
এগুলোর মাঝে কি করে চিনবেন ওদেরকে চীফ? কিং-এর প্রশ্ন।
লোকগুলোর চেহারার বর্ণনা বর্ডার গার্ডকে দিয়ে দিয়েছে স্যান ডিয়েগো পুলিশ। ওদের লিংকন গাড়িটার বর্ণনা। এবং অবশ্যই পিটারেরও। মেকসিকান পুলিশ কড়া নজর রাখবে। সন্দেহজনক লোক দেখলেই প্রশ্ন শুরু করবে।
আর আমরা তখন কি করব? হ্যারি জানতে চাইল।
বসে বসে নজর রাখব।
রাস্তার পাশে এমন জায়গায় গাড়ি রাখা হলো, যাতে একযোগে সমস্ত লেনগুলো চোখে পড়ে। স্যান ডিয়েগো পুলিশের একটা গাড়িকে দেখা গেল সেন্টার বর্ডার বুদের কাছে। আরেকটা বেশ কিছুটা দূরে। সময় কাটছে। দশটা বাজতে দশ।
দেখুন। হাত তুলল কিং.। একটা নীল লিংকন!
সীটের একেবারে কিলারে বসে গলা বাড়িয়ে তাকিয়ে রয়েছে ক্যাভিলাকের দর্শকরা। বিরাট নীল গাড়িটা ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে চলেছে চেক পয়েন্টের দিকে। ভেতরে উঁকি দিল সীমান্ত প্রহরীরা। ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে সতর্ক নজর রাখল স্যান ডিয়েগো পুলিশ। অনেকক্ষণ কথা বলল প্রহরীরা। তারপর সরে হাত নেড়ে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দিল গাড়িটাকে।
ওরা নয়! গুঙিয়ে উঠল মুসা। কি।
হলে এমন ছদ্মবেশ নিয়েছে, হ্যারি বলল পুলিশ চিনতে পারেনি। ধোঁকা খেয়েছে।
ছদ্মবেশে ওদেরকে ফাঁকি দিতে পারবে বলে মনে হয় না আমার, মাথা নাড়লেন চীফ। বর্ডার গার্ডেরা এমনিতেই ভীষণ সতর্ক আর চালাক। তার ওপর হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। তিনগুণ সতর্ক হয়ে গেছে ওরা। পিটারের বয়েসী কাউকে দেখলে সহজে ছাড়বে না। দরকার হলে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে পরীক্ষা করবে।
কিন্তু কিডন্যাপাররা কি সেটা জানে না? রবিন প্রশ্ন তুলল।
নিশ্চয় জানে, রবিন, জবাবটা দিল কিশোর। সেজন্যেই লুকিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করবে। এমন কোনও গাড়িতে করে যেটা নিয়মিত সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করে, এবং যেটার দিকে প্রহরীদের নজর কম।
যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল, ওই বাসগুলোর মত?
দুটো বাস এগিয়ে গিয়ে থামল চেক পয়েন্টের কাছে। ওগুলোতে উঠল স্যান ডিয়েগো পুলিশ। ক্যাডিলাকের দর্শকেরা দেখতে পেল সীটের সারির মাঝখান দিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে পুলিশেরা। প্রতিটি যাত্রীর চেহারা দেখছে। নেমে এল এক সময়। হাত নেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিল বাসদুটোকে।
নাহ, হবে বলে মনে হচ্ছে না, হ্যারির কণ্ঠে হতাশা।
আমি.. আমি আশা ছাড়তে পারছি না, কিশোর বলল। তাকিয়ে রয়েছে গাড়ির লম্বা সারিগুলোর দিকে। একে একে এগিয়ে যাচ্ছে ওগুলো চেক পয়েন্টের দিকে। চেক হয়ে গেলে বেরিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ছে মেকসিকোতে।
দশটা বাজতে দুই মিনিট।
বেরিয়ে যায়নি তো! আর আত্মবিশ্বাস রাখতে পারলেন না চীফ। মেকসিকো পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার…