আবার ঘরে ফিরে এল দলটা।
টিটকারির সুরে ডলি বলল, বলেছিলাম না, নেই। পাবে না। কিং, হ্যারি স্বীকার করতেই হলো তোমাদেরকে। পরাজয় মেনে নিতে লজ্জা কিসের? দেখো, তোমাদের স্যার মনটেরোকেও কব্জা করে ছাড়ব আমরা।
আবার খোঁজ! কিছুতেই পরাজয় মেনে নিতে রাজি নন ইয়ান ফ্লেচার। রাগে পিত্তি জ্বলছে তাঁর, কিন্তু কিছুই করার নেই। কথা আদায় করা যাচ্ছে না ডলির মুখ থেকে, রাগটা তার এ জন্যেই।
অন্ধকার হয়ে আসছে। বাড়ির চারপাশে গাছপালা ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না শেষ বিকেলের রোদ। বিছানার নিচে আর আলমারিগুলোতে আবার খোঁজার জন্যে আলো জ্বেলে নিতে হল।
চীফ! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
মিটমিট করতে শুরু করেছে বাল্বগুলো।
কি ব্যাপার? অবাক হয়েছে হ্যারি। বৈদ্যুতিক গোলমাল?
জ্বলছে নিভছে…জ্বলছে নিভছে…কিছুতেই ঠিক হতে চাইছে না যেন আলো।
আকাশ তো ভালই, জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলল রবিন। আবহাওয়ার জন্যে এরকম হচ্ছে না। গরমও তেমন নেই যে সার্কিটে ওভারলোড হয়ে যাবে।
জ্বলছে নিভছে…জ্বলছে নিভছে…নিয়মিত।
যেন ইচ্ছে করে করছে কেউ, কিং অনুমান করল। মাস্টার সুইচ নিয়ে কিছু করছে না তো? কিংবা ফিউজ…
নিশ্চয় কিশোর! আবার চেঁচিয়ে বলল মুসা। সংকেত দেয়ার চেষ্টা করছে! আশপাশেই আছে কোথাও!
কিন্তু কোথায়? ঘরের চারপাশে তাকাতে লাগলেন চীফ। সমস্ত জায়গায়ই তো খোঁজা হয়েছে।
ওই মহিলা জানে! ডলির দিকে আঙুল তুলে বলল রবিন।
হাসি মুছে গেছে ডলির মুখ থেকে।
চীফ, মুসা বলল। ঢালের ওপর তৈরি হয়েছে বাড়িটা। পেছন দিকের ভিত মাটিতে গড়া হয়েছে, কিন্তু সামনের দিকটা পিলারের ওপর। মেঝের নিচে ফাঁকা জায়গা আছে। গোপন সেলার-টেলার থাকলে অবাক হব না।
ছুটে বেরিয়ে গেল মুসা। ফিরে এল একটু পরেই। জানাল, কংক্রীটের ভিতের ওপর তৈরি হয়েছে বাড়িটা। বিরাট একটা বাক্সের মত হয়ে আছে নিচেটা। ভেতরে ফাঁকা থাকতেই পারে। তবে ঢোকার পথ দেখলাম না।
বাইরে না থেকে থাকলে, রবিন বলল। ভেতরে আছে।
সরাও! নির্দেশ দিলেন চীফ। সমস্ত কার্পেট সরিয়ে ফেলো। বিছানার নিচে আবার দেখো। ট্র্যাপডোর থাকতে পারে। আলমারির ভেতরেও গোপন দরজা থাকতে পারে।
বেডরুমের সব চেয়ে বড় আলমারিটাতে পথ পেয়ে গেল রবিন। আলমারির নিচে। একটা ট্র্যাপডোর। সরু মই নেমে গেছে নিচের অন্ধকারে।
আলমারির ভেতরেই আলোর সুইচ খুঁজে পেল মুসা। জ্বেলে দিল। নিচের সেলারে জ্বলতে নিভতে আরম্ভ করল একটা বাল্ব। মই বেয়ে দ্রুত নেমে এল ওরা জানালাশূন্য একটা ঘরে। অনেক মদের বোতল আর বাতিল আসবাব পড়ে রয়েছে। আর রয়েছে…
কিশোর! চিৎকার করে বলল রবিন।
কিশোর? মুসাও চেঁচাল।
খুদে সেলারের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে গোয়েন্দাপ্রধান। পিঠের ওপর নিয়ে গিয়ে হাত বেঁধেছে। মুখে কাপড় গোঁজা। পুরনো ধাচের একটা সুইচ বক্সের হাতলে পা ঠেকানো। মাস্টার সুইচের হাতলে লাথি মারলেই নিভে যাচ্ছে আলো, আবার জ্বলে উঠছে।
আমরা বুঝেছি, মুসা বলল, তুমিই সংকেত দিচ্ছ।
তাড়াতাড়ি কিশোরের মুখের কাপড় খুলে নিল রবিন। বাঁধন খুলে দিল।
তোমাদের কথা অনেকক্ষণ থেকেই শুনছি, কিশোর বলল। খোঁজাখুঁজি করছ তা-ও বুঝতে পারছিলাম। শেষে তো ভয়ই হচ্ছিল, পাবে না ভেবে…
তুমি সংকেত দেয়াতে ভাল হয়েছে, মুসা বলল।
নইলে সত্যিই হয়ত পেতাম না, বলল রবিন। তবে মুসা আন্দাজ করে ফেলেছিল, সেলারে আটকে রাখা হয়েছে তোমাকে।
দুর্বল ভঙ্গিতে হাসল কিশোর। এখন বলে ফেল তো, কি করে এখানে এসে খুঁজে বের করলে আমাকে?
সংক্ষেপে তাকে সব কথা জানাল রবিন আর মুসা।
চমৎকার! প্রশংসা করল কিশোর। ভাল গোয়েন্দা হয়ে উঠেছ তোমরা ইদানীং। ভেরি গুড।
কিশোরের প্রশংসা পাওয়া খুব কঠিন। খুশি হল দুই সহকারী। একনাগাড়ে বসে থেকে থেকে হাত-পা ঝিমঝিম করছে কিশোরের। তাকে মই বেয়ে উঠে বেরোতে সাহায্য করল রবিন আর মুসা। নিয়ে এল লিভিং রুমে। তার পিঠ চাপড়ে দিলেন ইয়ান ফ্লেচার।
তুমি ভাল আছ, কিশোর? কিং বলল, সত্যিই খুব খুশি লাগছে। তোমার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।
রবিন আর মুসার কাছে তোমার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, হেসে বললেন চীফ।
হয়েছি। চারপাশে চোঁখ বোলাচ্ছে কিশোর। পিটার কোথায়? তাকে নিয়ে গেছে নাকি কিডন্যাপাররা?
মাথা ঝাঁকাল হ্যারি।
তোমাদের ছাগল পেয়েছ, রবিন আর মুসার দিকে তাকিয়ে কুৎসিত হাসি হাসল ডলি। এবার কেটে পড়তে পারো। জন আর ডেভকে ধরার চেষ্টা করলে অহেতুক সময় নষ্ট করবে। পিটারকে হাতে পেয়েছে ওরা। হাওয়া হয়ে গেছে এতক্ষণে।
সবাইকে নিরাশ মনে হলো, বিশেষ করে কিং আর হ্যারিকে। কেবল কিশোরের মুখে কোনও ভাবান্তর নেই। ডলির দিকে তাকিয়ে হাসল। দাঁড়ান, ছাগলই ভেড়া বানাবে আপনাদের। হাওয়া হয়ে গেছে বলছেন তো। পারবে না। আমি কিশোর পাশা থাকতে অন্তত না।
.
২০.
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশকে খবর দিলেন ইয়ান ফ্লেচার। তারা এসে গ্রেপ্তার করল ডলিকে। তারপর কিশোরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, স্যান ডিয়েগো পুলিশকে রেডিওতে খবর পাঠাল। নানদানদের ক্যাডিলাকটা ছুটে চলল মেকসিকো সীমান্তের দিকে।
এখন বল তো, কিশোর, চীফ জিজ্ঞেস করলেন। পিটারকে নিয়ে যাওয়া ঠেকাব কি করে?
ঠিক বলতে পারছি না এখনও। তবে সুযোগ আছে। পিটারকে সনাক্ত করার পর তাকে ওপরে তুলে নিয়ে গেল। তারপর ওদেরকে ফোনে কথা বলতে শুনেছি।