নতুন কোনও কেস?
নাহ। কেন, কিশোর বলেনি?
কথা হয়নি।
ও। ম্যাজিক মাউনটেইনে যাচ্ছি আমরা।
বেড়াতে? চমৎকার জায়গা।
বারান্দা থেকে নেমে এল মুসা। রবিনকে বলল, চল, ওঠ।
গাড়িতে উঠল দুজনে।
কি ব্যাপার, কিশোর আসছে না? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন। কোথায় ও?
হেডকোয়ার্টারে। কি জানি করছে। চলে আসবে এখনি।
কিছুক্ষণ বসে থেকে অস্থির হয়ে উঠল রবিন। চল তো দেখি। নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। মুসাও নামল। রবিনের পেছন পেছন এসে ঢুকল দুই সুড়ঙ্গে।
ট্রেলারে ঢুকে দেখল, ডেস্কের ওপাশে বসে রয়েছে কিশোর। অনেকগুলো রঙিন ব্রশিয়ার ছড়ানো টেবিলে।
হ্যানসন বসে আছে, কিশোর, রবিন বলল।
এই হয়ে গেছে। আর একটু, মুখ না তুলেই জবাব দিল গোয়েন্দাপ্রধান। আরও কয়েক মিনিট পরে সন্তুষ্ট হয়ে হেলান দিল চেয়ারে, হ্যাঁ, হয়েছে। চলবে।
কি চলবে? মুসা জানতে চাইল।
আমাদের এক্সকারশনের প্ল্যান করলাম, কিশোর জানাল। ম্যাজিক মাউনটেইনের একটা ম্যাপ জোগাড় করেছি। সবচেয়ে কম সময়ে কত বেশি মেশিনে চড়তে পারব হিসেব করলাম। কোনও মেশিনে বেশি মজা পেলে দুবার করেও যাতে চড়তে পারি সেই সময়ও রেখেছি। আবার কোনটা যদি হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়, কিংবা বাতাসের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দেরি করিয়ে দেয়…দিতেই পারে, তাই না? কতটা সময় নষ্ট হবে তাতে সেটাও ধরেছি…।
গুঙিয়ে উঠল মুসা। কিশোর, মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার মাথায় সত্যি ছিট আছে। চল, ওঠ তো।
রবিন বলল, এতসব ভেবে কি লাভ? সময় যা লাগার লাগবেই।
কি লাভ? ভ্রূকুটি করল কিশোর। হিসেব ছাড়া কিছুই চলে না…
আরে বাবা, দুহাত তুলল মুসা, ওখানে কাজ করতে যাচ্ছি না আমরা। যাচ্ছি নিছক মজা করতে। আনন্দ। তার আবার হিসেব কি?
বেশ, মুখ গোমড়া করে ফেলল কিশোর। আমার প্ল্যান যদি তোমার পছন্দ না হয়, বাদ দিতে পার।
টেবিলের কাগজগুলোর দিকে কয়েক সেকেণ্ড নীরবে তাকিয়ে রইল সে। এত কষ্ট করে অঙ্কগুলো করেছে। কাগজগুলো এক জায়গায় করে দলামোচড়া করে একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে ফেলে দিল ময়লা ফেলার ঝুড়িতে। রবিন আর মুসার মনে হল একটা জ্বালাতন থেকে মুক্তি মিলল, হাসি ফুটল মুখে। উঠে দাঁড়াল কিশোর। ট্রেলার থেকে বেরিয়ে এল তিনজনে।
গাড়িতে উঠে নির্দেশ দিল কিশোর, ম্যাজিক মাউন-টেইনে যান।
ইয়েস, স্যার, হেসে বলল হ্যানসন। ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক, তবু সৌজন্য ভুলতে রাজি নয় খাঁটি ইংরেজ শোফার।
জায়গাটা রকি বীচের পুবে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে। শহর থেকে বেরিয়ে এসে কাউন্টি হাইওয়ে ধরে চলল বিশাল গাড়িটা। শুকনো, ধুলোময়, পাহাড়ের প্রথম ঢালটার কাছে পৌঁছে জিজ্ঞেস করল হ্যানসন, সত্যি বেড়াতে? না কোনও গোপন কেস?
নাহ, কেসটস না, হতাশ কণ্ঠে বলল কিশোর। বেড়াতেই এসেছি। কেন?
কারণ, অনুসরণ করা হচ্ছে আমাদেরকে।
অনুসরণ! প্রায় একই সঙ্গে বলল তিন কিশোর। মাথাগুলো ঘুরে যাচ্ছে পেছন দিকে।
কোথায়, হ্যানসন? রবিনের প্রশ্ন। আমি তো কোনও গাড়ি দেখছি না।
মোড়ের ওপাশে রয়েছে। স্যালভিজ ইয়ার্ড থেকে বেরোনোর পর পরই গাড়িটা চোখে পড়েছে আমার। তারপর থেকে লেগেই রয়েছে পিছে। একটা সবুজ মার্সিডিজ।
সবুজ মার্সিডিজ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। আপনি শিওর?
গাড়ি চালানো আমার পেশা, কিশোর, দৃঢ়কণ্ঠে বলল হ্যানসন। ওই যে, বেরিয়েছে! আসছে আবার।
পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। ভুল নেই। পিছু নিয়েছে সবুজ গাড়িটা।
সেই গাড়িটাই! মুসা বলল।
তারমানে, কিশোরের কণ্ঠে খুশির আমেজ। টুরিস্ট নয় লোকগুলো। কাল মিথ্যে কথা বলেছে। আমার ধারণাই ঠিক।
তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু কি চায় ওরা?
বুঝতে পারছি না।
কিন্তু বুঝতে হবে মনে হচ্ছে, রবিন বলল। গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ওরা।
হ্যানসন, কিশোর বলল। ওদেরকে খসাতে পারবেন?
চেষ্টা করতে পারি, শান্ত কণ্ঠে বলল হ্যানসন।
একসিলারেটরে চাপ বাড়াতেই লাফ দিয়ে আগে বাড়ল বিশাল গাড়িটা। প্রায় নিঃশব্দে। ইঞ্জিনের আওয়াজ এখনও তেমন বাড়েনি। পর্বতের ভেতরে ঢুকে পড়েছে ওরা এখন। সরু টু-লেন পথটা একেবেকে উঠে গেছে। এক পাশে গভীর খাত। স্টিয়ারিং চেপে ধরেছে হ্যানসন। দক্ষ হাতে মোড় ঘুরছে। একটু এদিক ওদিক হলেই গিয়ে খাতে পড়তে পারে গাড়ি।
গতি বেড়ে গেছে সবুজ মার্সিডিজের। রোলস রয়েসটাকে ধরার জন্যে তেড়ে আসছে ওটা। মোড় ঘোরার সময় গতি কমাচ্ছে না একটা গাড়িও, ফলে কর্কশ শব্দ করছে টায়ার। মাঝে মাঝেই বিপজ্জনক ভাবে রাস্তার কিনারে চলে যাচ্ছে একপাশের চাকা। যত শক্তিশালী ইঞ্জিনই হোক, স্বাভাবিক ভাবেই বড় গাড়ির চলন ভারি হয় ছোটগুলোর চেয়ে। অতটা ক্ষিপ্র হতে পারে না। তাই কাছিয়ে আসতে থাকল মার্সিডিজটা।
ধরে ফেলেছে! চিৎকার করে বলল মুসা।
শান্ত রয়েছে হ্যানসন। এর চেয়ে জোরে চালানো উচিত না। সামনের পথের ওপর দৃষ্টি স্থির। তবে… থেমে গেল সে। সামনে একটা বাঁক। সেটা ঘুরতে ক্ষণিকের জন্যে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল মার্সিডিজটা। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল হ্যানসন। স্কিড করে এগিয়ে গেল গাড়ি। ডানে আর কয়েক ইঞ্চি সরলেই চাকা চলে যেত পথের বাইরে। বন বন করে স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে সে। ব্রেক ছেড়ে দিয়ে। আবার একসিলারেটরে চাপ দিল। বায়ের একটা সরু কাঁচা রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে এল গাড়ি। ওকের বন আর চ্যাপারালের ঝোপের ভেতর দিয়ে চলে গেছে পথটা।