কিং বলল, একটা ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ড তো রয়েছেই হোটেলের সামনে।
সে বোঝাতে চেয়েছে, হ্যারি আন্দাজ করল। সব লোকের ওপরই নজর রেখেছিল সে। আর ট্যাক্সিতে করে পালানোর প্ল্যান করেছে।
বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডে একটা মাত্র ট্যাক্সি দেখা গেল। ম্যাগাজিন পড়ছে ড্রাইভার। ওকে জিজ্ঞেস করা হলো। না, চারদিন আগে কোনও কিশোরকে নিয়ে যায়নি সে এখান থেকে। তার আগেও নেয়নি, পরেও না।
কটা ট্যাক্সি আছে এখানে? হ্যারি জানতে চাইল।
অনেক, মিস্টার। তবে সবই আমাদের কোম্পানির। একটাই কোম্পানি।
তোমাদের মেইন গ্যারেজটা কোথায়? জিজ্ঞেস করল কিং।
বলে দিল ড্রাইভার। তার কথা মত ট্যাক্সি কোম্পানির সেন্ট্রাল গ্যারেজে চলে এল হ্যারি। বন্দরের কাছাকাছি। বিরাট এক কাঠের আড়তের পাশ দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। গ্যারেজের পেছন দিকে রয়েছে অফিস। সেখানে এসে, দিনের বেলা ডিউটি যে ম্যানেজারের তাকে পেল গোয়েন্দারা। কি চায়, বলল তাকে। একটা তালিকা দেখতে শুরু করল ম্যানেজার।
রেড লায়ন? চারদিন আগে? হ্যাঁ, সেদিন পাঁচজন ড্রাইভার ডিউটি দিয়েছে। ওখানে। দুজন এখন এখানেই আছে। রড আর হেগ। তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার।
তার ট্যাক্সির ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করছে হেগ। চারদিন আগে কোনও কিশোরকে কোথাও নিয়ে যায়নি সে।
রডকেও পাওয়া গেল। অলস ভঙ্গিতে বসে কফি খাচ্ছে। সে জানাল, হ্যাঁ, একটা ছেলেকে রেড লায়ন থেকে নিয়ে গিয়েছি। সরাসরি তাকাল কিশোরের দিকে। তোমাকেই তো। জিজ্ঞেস করছ কেন আবার? দুদিন পরই তোমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল, ঠিক না? পত্রিকায় বেরিয়েছে, দেখেছি। ব্যাপারটা কি বল তো!
বাধা দিয়ে কিশোর বলল, কিডন্যাপ করা হয়েছিল আমাকেই। তবে আপনি যাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সে আমি নই। ভাল করে তাকান তো আমার দিকে। দেখুন আলাদা করে চিনতে পারেন কি না।
ভাল করেই তাকাল লোকটা। ওই ছেলেটার মতই লাগছে। শুধু পোশাকের ব্যাপারটা আলাদা। সে অনেক বেশি ফিটফাট ছিল তোমার চেয়ে। তাহলে তুমি বলতে চাইছ তুমি সেই ছেলে নও?
কিশোর জবাব দেবার আগেই হ্যারি জিজ্ঞেস করল, ছেলেটাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন মনে আছে?
নিশ্চয় আছে, মাথা ঝাঁকাল রড়। মনে আছে তার কারণ আজব আচরণ। করছিল ছেলেটা। মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঘটাচ্ছে। হোটেল থেকে ছুটে বেরিয়ে এল। আমাকে বলল শহরের আরেক ধারে নিয়ে যেতে। নিয়ে চললাম। বার বার পেছনে তাকাতে লাগল সে। যেন ভূতে তাড়া করেছে। একবার মনে হলো, হোটেল থেকে কিছু চুরি করেনি তো? কিন্তু চোর মনে হলো না। তবে পালিয়েছে যে তাতে কোনও সন্দেহ ছিল না আমার। শেষে গাড়িটা…
কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন? অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল কিং।
বলছি বলছি। কেবলই পেছনে তাকাচ্ছিল। সারা শহর ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াল আমাকে। হঠাৎ থামতে বলল। কতগুলো গুদাম আর কারখানার মাঝখানে। আমার পাওনা মিটিয়ে দিয়ে নেমে গেল। দৌড় দিল গলি দিয়ে। টাকা বেশিই দিয়ে। ফেলেছিল আমাকে, ভাঙতি নেয়ার জন্যেও থামেনি। তারপর এল গাড়িটা, যেটার কথা বলছিলাম। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। মনে হলো ছেলেটারই পিছু নিয়েছে।
কি গাড়ি? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
সবুজ মার্সিডিজ। ভাল গাড়ি। ওরকম একটা গাড়ি পেলে আর কিছু চাইতাম, নাঃ..,
যেখানে নামিয়ে দিয়েছিলেন ছেলেটাকে, আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারবেন সেখানে? ভাল পয়সা দেব, হ্যারি বলল।
পারব না কেন। নিশ্চয় পারব।
জায়গাটা গ্যারেজ থেকে বেশি দূরে না। শহরের একধারে কতগুলো গুদাম আর কারখানা বাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। নির্জন এলাকা। গুদামগুলোতে লোক আছে। বলে মনে হয় না। আর কারখানাও ছোট ছোট, টুকিটাকি জিনিস তৈরি হয়। বেশির ভাগই খালি অঞ্চল, বাড়িঘর কিছু নেই। দুটো বাড়ির মাঝের একটা গলি দেখাল ড্রাইভার, ওদিক দিয়েই গেছে।
লোকটার ভাড়া মিটিয়ে দিল কিং। অনেক বেশিই দিল। মোড়ের কাছে ক্যাডিলাকটা রাখল হ্যারি।
এখানে আসতে গেল কেন? মুসার প্রশ্ন। নির্জন এলাকাটায় চোখ বোলাচ্ছে। ও কিডন্যাপারদের খসাতে চেয়েছে হয়ত, রবিনের অনুমান। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিল ওরা তাকে অনুসরণ করছে।
তা হতে পারে, কিশোর বলল। লুকানোর আরেকটা জায়গা খুঁজছিল হয়ত। প্রচুর ঘোরপ্যাঁচ রয়েছে এমন কোথাও। চল, গলিটা দেখি। দেখা যাক আর সূত্র আছে কিনা।
সরু গলি। দুধারে ইটের দেয়াল। তিনটে দরজা দেখা গেল। সবগুলোতে বড় বড় তালা ঝোলানো। মরচে পড়া। বেশ কিছুদিন যে ভোলা হয়নি বোঝা যায়। গলির শেষ মাথায় চলে এল গোয়েন্দারা, বিশেষ কিছুই নজরে পড়ল না।
এবার? মুসা জিজ্ঞেস করল, এবার কি করব?
সামনে আরেকটা গলি। যেটাতে রয়েছে ওরা ওটারই মত দেখতে। দুপাশে গুদামঘর, ছোট ছোট কারখানা, আর প্রচুর শূন্য জায়গা, যেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে জঞ্জাল। ওই গলির একমাথা দিয়ে আরেকটা রাস্তা চলে গেছে আড়াআড়ি, ইংরেজি টি অক্ষর তৈরি করে।
তিন দিকে যেতে পারে সে, হ্যারি বলল। যে কোনও তিনদিক। কোন পথে যে গেছে ঈশ্বরই জানে!
.
১২.
যেদিকেই যাক, কিশোর বলল। কোনও একটা দিকে তো গেছে। একবারে সব দিকেই যেতে পারে না।
কি বলতে চাও? রবিনের প্রশ্ন।
কিডন্যাপাররা তার পিছু লেগেছিল। সে সেটা জানত। বেশি দূর যাওয়ার উপায় ছিল না তার। সময়ই ছিল না। নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে পড়তে হয়েছে।