কিছু রেখে গেলেও আর পাওয়া যাবে না সেটা, রবিন বলল।
ঠিকই বলেছ, একমত হলো কিং। কিশোর, লাভ হবে না। নোটফোট কিছু রেখে গেলে নিশ্চয় ঝাড় দিয়ে ফেলে দিয়েছে ঝাড়ুদার।
হয়ত, স্বীকার করল কিশোর। তার পরেও কথা আছে। ঝাড়ুদাররা ঠিকমত ঝাড়ু দেয় না অনেক সময়। তাছাড়া আমার মনে হয় না এত সাধারণ কিছু রেখে গেছে পিটার যেটা সহজেই ফেলে দেয়া যায়। সহজে চোখে পড়ে এমন কিছু রেখে। গেছে বলেও মনে হয় না। কারণ সে জানে কিডন্যাপাররা খুঁজতে পারে। তাহলে ওরা দেখে ফেলবে। না, অত সহজ কিছু রেখে যায়নি সে। সাংকেতিক কিছু রেখে। গেছে। এমন কিছু যা স্যার মনটেরোর বন্ধুরা চিনতে পারবে, শত্রুরা নয়। কাগজের ওপরও লিখে রেখে যেতে পারে, কিংবা অন্য কিছুতে।
তুমি বলতে চাইছ, রবিন বলল। খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে এমন কিছু করেছে, যা ঘর থেকে সরানো যাবে না। কিডন্যাপারদের নজরে পড়বে না। অথচ তার বন্ধুদের চোখে ঠিকই পড়বে।
হ্যাঁ, সে রকমই কিছু।
এসো, তাহলে বের করে ফেলি, কিং বলল।
বাথরুমে খুঁজতে চলে গেল মুসা। অন্যেরা রইল শোবার ঘরেই। ওপরে নিচে, জিনিসপত্র যা আছে সব সরিয়ে, ছবির পেছনে, পর্দার আড়ালে, কার্পেটের নিচে, সব জায়গায় দেখা হতে লাগল। রেডিয়েটরের নিচে আর ছাতের আলোর শেড দেখা হলো। গদির কাভার সরিয়ে দেখল কিশোর, পিটার কিছু লিখে রেখে গেছে কিনা। কিছুই পাওয়া গেল না। এমন কিচ্ছু দেখা গেল না যেটাকে মেসেজ কিংবা সূত্র মনে হয়।
বেশি সহজ জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছি আমরা, কিশোর বলল অবেশেষে। প্রথম মেসেজটাতে ডাবল কোড ব্যবহার করেছিল পিটার। জ্যাঙ্গাস প্রেস বলে বুঝিয়েছে ইমবালা। এবং ইমবালা বলে লাল সিংহের পাহাড় বোঝাতে চেয়েছে সে। এখানেও সে রকম কিছু করে রেখে যেতে পারে।
এবং সেটার সমাধান করতে পারবে, যোগ করল রবিন। ও ব্যাপারে বিশেষ জ্ঞান আছে শুধু যাদের, তারাই।
রাইট। তার মানে পিটারকে খুঁজে বের করতে হলে কিছু বিশেষ ব্যাপারে জ্ঞান থাকতেই হবে। সেটার ওপরই নির্ভর করছে সব। কিং, পিটারের কি কোনও বিশেষ স্বভাব ছিল? কোনও কিছুতে আগ্রহ? উদ্ভট কোনও আচরণ?
নানদার ইতিহাসের ওপর তার অসম্ভব আগ্রহ ছিল, হ্যারি জানাল।
কাঠের ওপর খোদাই করা আফ্রিকান শিল্পও সংগ্রহ করত সে, কিং বলল। ছোট ছোট স্কেচ করতে পছন্দ করত। বিশেষ করে দেয়ালে। স্যার মনটেরো একবার রাগ করে বলেছিলেন তাঁর অফিসের দেয়ালে পর্যন্ত আঁকাআঁকি করেছে। পিটার।
ঠিক! তুড়ি বাজাল কিশোর। দেয়ালে স্কেচ আঁকলে সহজে সেটা মোছা। যাবে না, নতুন করে রঙ না করলে। আর কোনও হোটেলের ঘরেই অত তাড়াতাড়ি রঙ করা হয় না। এটাই খুঁজতে হবে আমাদের। এই, খোঁজো খোঁজো সবাই।
কিন্তু এবারেও কিছু পাওয়া গেল না। দেয়ালে কোনও স্কেচ নেই। এমনকি আসবাবপত্রেও নেই কিছু, কোনও চিহ্নও নয়। কিছুই আকেনি।
কিশোর, কিছুই নেই এখানে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল মুসা। আমার বিশ্বাস, কিডন্যাপারদের দেখার পর এখানে কিছু করার সময়ই পায়নি পিটার।
চরকির মত পাক খেয়ে মুসার দিকে ঘুরল কিশোর। ঠিক, ঠিক বলেছ, মুসা! এটাই জবাব!
মানে? মুসা অবাক। কি এমন বললাম?
পিটার খুব চালাক ছেলে, ধীরে ধীরে বলল কিশোর। অথচ ম্যানেজারকে বলল লোকগুলোকে পাঠিয়ে দিতে, বাইরের লোক সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকা সত্ত্বেও। সে তখন পালিয়ে রয়েছে। লোকগুলো শত্রু না বন্ধু জানে না। কিন্তু তবু ম্যানেজারকে বলল পাঠাতে। আমরা হলে বলতাম কি?
না, জবাব দিল রবিন। ম্যানেজারকে বলতাম ওদেরকে আটকাতে। যাতে লুকিয়ে ওদের চেহারা একবার দেখতে পারি।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। নিশ্চয়। পিটারও দেখেছিল। জানালা দিয়ে। তবে, সেটা কাকতালীয় ভাবেই। সে তখন জানালার কাছে দাঁড়িয়েছিল হয়ত। যাই হোক, লোকগুলোকে আটকাতে বলেনি ম্যানেজারকে। প্রয়োজন মনে করেনি। ওদেরকে বুঝতে দিতে চায়নি যে একটা প্ল্যান সে ইতিমধ্যেই করে বসে আছে।
প্ল্যান? ভুরু কোঁচকাল রবিন, কি প্ল্যান?
সব চেয়ে সহজ প্ল্যান, ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়া। এমন কোথাও যেখান থেকে লোকগুলোর ওপর চোখ রাখতে পারে। লোকগুলো শত্ৰু এটা বোঝর সঙ্গে সঙ্গে যাতে পালাতে পারে ওখান থেকে। এসো।
কিশোরকে অনুসরণ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এল সবাই।
বেরোনোর পথের কাছেই কোথাও হবে, নিজেকেই যেন বোঝাচ্ছে কিশোর। যেখান থেকে লোকগুলোর ওপর নজর রেখেছে সে। এমন কোথাও… হলওয়েতে নজর বোলাচ্ছে সে। ওই আলমারিটার মত কোনও জায়গা।
লম্বা, সরু একটা দেয়াল আলমারি। সিঁড়ি থেকে কয়েক ফুট দূরে। পর্দা আর বিছানার চাদরটাদরগুলো বোধহয় রাখা হয় ওখানে। ভেতরে ঢুকে দরজা সামান্য ফাঁক করে রাখলেই এলিভেটর আর সিঁড়ির ওপরের অংশ চোখে পড়বে। যে কেউ এসে পিটারের ঘরের দিকে যেতে চাইলে তাকে দেখা যাবেই ওখান থেকে।
পেন্সিলে আঁকা স্কেচ খোঁজ, নির্দেশ দিল কিশোর।
একবার তাকিয়েই দেখে ফেলল মুসা। আলমারির দরজার ভেতর দিকে। এই যে! খাইছে! দারুণ এঁকেছে তো! একটা গাড়ি। ভেতরে ড্রাইভারও আছে। পাশে ব্যাজের মত কি যেন আঁকা। ওপরেও আছে।
ভ্রূকুটি করল কিশোর। গাড়ি? গাড়ি একে কি বোঝাতে চেয়েছে?
সাধারণ গাড়ি নয়, কিশোর! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। দেখ, ড্রাইভারের মাথায় ক্যাপ আছে। আর হাতে একটা বাতির মত। তার মানে ট্যাক্সি!