ডেস্কের পেছনের দরজাটা খুলে গেল। বেরিয়ে এল একজন খাট, হালকাঁপাতলী লোক। গায়ে চেককাটা জ্যাকেট, পরনে ঢোলা পাজামা। কিশোরের দিকে তাকাল জ্বলন্ত দৃষ্টিতে। আবার এসেছ তাহলে! এবার বিল আদায় করেই ছাড়ব!
তারমানে পিটার মনটেরো এসেছিল! প্রায় চেঁচিয়েই উঠেছিল কিশোর, সময় মত সামলে নিল।
আপনি ম্যানেজার? খাটো লোকটাকে জিজ্ঞেস করল কিং।
হ্যাঁ, আমি ম্যানেজার, কর্কশ জবাব দিল লোকটা। কিশোরের দিক থেকে চোখ সরাচ্ছে না। ইয়াং ম্যান, এখুনি বিল মিটিয়ে না দিলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব আমি।
তার দরকার হবে না, শান্তকণ্ঠে বলল, হ্যারি। টাকাটা আমরা দিয়ে দেব। একে পিটার ভাবছেন তো? ও পিটার নয়। ওই
নয়? সন্দেহ দেখা দিল ম্যানেজারের চোখে। তাহলে…
দেখতে পিটারের মতই, বুঝিয়ে দিল কিং। তবে পিটার নয়। চেহারা অনেকটা এক রকম।
কেন, খবরের কাগজে আমার ছবি দেখেননি? কিশোর জিজ্ঞেস করল। তাহলে তো এই ভুল করার কথা নয়
মাথা নাড়ল ম্যানেজার। সাংঘাতিক ব্যস্ত আমরা। বিশেষ করে এই হপ্তায়। কয়েকজন মেহমান এসেছে। তাদেরকে সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছি। পেপার দেখব। কখন। কিশোরের দিকে তাকিয়েই রয়েছে সে। তার কুঁচকানো কমদামী পোশাক দেখছে। পিটারকে অবশ্য এত বাজে পোশাকে এত অগোছালো অবস্থায় দেখিনি। কিন্তু তুমি যদি পিটারই না হও, তাহলে ওরা তোমার বিল দিতে চাইছে কেন?
আমি আর মিস্টার ম্যাকঅ্যাডাম, হ্যারিকে দেখাল কিং। স্যার মনটেরোর প্রতিনিধি। এই যে আমাদের আইডেনটিটি। লস অ্যাঞ্জেলেসে নানদার ট্রেড মিশন আছে, ইচ্ছে হলে আমাদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারেন ওখানে। এখন বলুন, পিটারের কাছে কত পান। দিয়ে দিচ্ছি।
একটা বিল বের করে দিল ক্লার্ক। টাকা মিটিয়ে দিল হ্যারি ইতিমধ্যে দুজনের আইডেনটিটি চেক করল ম্যানেজার। মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, কেমন যেন দ্বিধায় ফেলে দেয়।
বুঝতে পারছি কেন এমন লাগছে আপনার, কিং বলল। আরেকটু খোলাসা করে বললেই আর দ্বিধা থাকত না। কিন্তু সেটা করতে পারছি না। অনেক জরুরী। কাজ পড়ে আছে আমাদের। পিটার এখানে না থাকলে কোথায় আছে খুঁজে বের করতে হবে। ও এখানে আসার পর থেকে কি কি ঘটেছে দয়া করে বলবেন কি?
দ্বিধা করতে লাগল ম্যানেজার। তারপর মাথা ঝাঁকাল। ঠিক আছে, বলছি। হপ্তাখানেক আগে এসেছিল সে। এর আগেও এসেছিল তার বাবার সঙ্গে। কাজেই চিনতে পেরেছিলাম। এসে বলল কয়েক দিনের মধ্যেই তার বাবা আসবেন, তার সঙ্গে দেখা করবে। বিশ্বাস করলাম। জায়গা দিলাম তাকে। দুদিন পরে দুজন, লোক এসে বলল স্যার মনটেরোর কাছ থেকে এসেছে। পিটারের রুম নম্বর চাইল ওরা। কেউ এসে বললেই বোর্ডারদের নামধাম বলে দিই না আমরা। ওদের পরিচয়। জানতে চাইলাম। তারপর পিটারকে ফোন করলাম। লোকগুলোকে ঘরে পাঠিয়ে দিতে বলল সে।
লোকগুলো দেখতে কেমন ছিল? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ততটা ভাল মনে নেই, ম্যানেজার বলল। চারদিন আগে এসেছিল ওরা। একজন বেশ গাট্টাগোট্টা, কোকড়া বাদামী চুল। আরেকজন লম্বা, পাতলা, কালো চুল। ওদের নাম মনে করতে পারছি না।
কিশোরের দিকে তাকাল হ্যারি আর.কিং। মাথা ঝাঁকাল সে। চেহারার বর্ণনায় লোকগুলোকে দুই কিডন্যাপারের মতই লাগল ওদের।
ওরা চলে যাওয়ার পর কি হলো? জিজ্ঞেস করল কিং।
অদ্ভুত কাণ্ডই করেছে, তখন অবশ্য সে রকম মনে হয়নি। লোকগুলো ওপরে যাওয়ার একটু পরেই দেখলাম মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। মিনিট পাঁচেক পরেই লোকগুলো তাড়াহুড়ো করে নেমে এসে বেরিয়ে গেল।
পিটারকে আর দেখেননি? হ্যারি জানতে চাইল।
না। আর আসেনি। বিলের টাকাও দিয়ে যায়নি।
আবার হারালাম, তিক্তকণ্ঠে বলল হ্যারি।
আমরা ভেবেছিলাম পাবই, নিরাশ হয়েছে রবিনও।
চিন্তিত লাগছে কিশোরকে। ওর ঘরটা দেখতে পারি?
কী বক্সের দিকে তাকাল ম্যানেজার। খালিই আছে। হাত বাড়িয়ে চাবিটা তুলে আনল। ঊনত্রিশ নম্বর ঘর। দোতলায়। সামনের দিকে। ডানের এলিভেটর দিয়ে উঠতে পার। কিংবা এলিভেটরের পাশের সিঁড়ি দিয়ে।
এলিভেটরের দিকে এগোতে এগোতে মাথা নাড়ল কিং, যেন বিশেষ ভরসা। করতে পারছে না। কিশোর, ওর ঘর দেখে কি হবে? ওখানে তো নেই। একটা আশাই করতে পারি এখন শুধু, আবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
লোকগুলোকে সন্দেহ করেছিল, বোঝাই যায়, জবাব দিল কিশোর। এলিভেটরে ঢুকে পড়েছে। বোতাম টিপে দিয়ে বলল, তা না হলে ওভাবে হোটেল থেকে পালাত না। নিশ্চয় লোকগুলোকে চিনতে পেরেছিল, শত্রু হিসেবে। দেখেই আবার পালিয়েছে। লোকগুলো হয়ত তখনও তার ঘরেই ঢোকেনি।
তাতে আমাদের কি লাভ? হ্যারির প্রশ্ন।
সে আশা করছিল, তার মেসেজ পেয়ে স্যার মনটেরো ছুটে আসবেন হোটেলে। পালানোর আগে নিশ্চয় আবার ভেবেছিল সে কোথায় যাচ্ছে তার একটা নির্দেশ রেখে যাওয়া দরকার। কোনও একটা মেসেজ। কিংবা কোনও সূত্র।
এলিভেটর থেকে বেরিয়ে এল ও। রওনা হলো পিটারের ঘরের দিকে। সকলের মনেই আশা, ছোট্ট একটা মেসেজ অন্তত রেখে যাবে পিটার।
১১.
ঘরে পা দিয়েই গুঙিয়ে উঠল মুসা, কিশোর, সব সাফ করে ফেলা হয়েছে।
আনমনে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তাকাল বিশাল ঘরটায়। জানালা দিয়ে রোদ আসছে। সেটা দিয়ে হোটেলের সামনের দিকের ড্রাইভওয়ে আর ট্যাক্সি পার্ক করার জায়গা দেখা যায়। তারপরেও বহুদূরে দৃষ্টি চলে যায়, একেবারে নীল প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত।