এই সময় বাজল টেলিফোন। মুখও তুলল না সে। সমস্যা তার ভাল লাগে। সেগুলোর সমাধান করতে…
কিশোর, ডেকে বললেন মেরিচাচী। রবিন।
নিরাসক্ত ভঙ্গিতে উঠে গিয়ে রিসিভার কানে ঠেকাল কিশোর। বলো।
কিশোর, পেয়ে তো গেলে! আমাদেরকে ফোন করলে না কেন?
কি বললে? চোখ মিটমিট করছে কিশোর। কি পেয়ে গেলাম?
কেন, জবাব। পিটার কোথায় লুকিয়েছে?
মজা করছ তো। করো। ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেল কিশোর। সকালে এমনিতেই মেজাজ ভাল নেই আমার। হ্যারি আর কিঙের কাছে গিয়ে আলোচনা। করব ভাবছি। হয়ত…
তার মানে পাওনি? রবিন অবাক।
পাইনি? কি পাইনি?
লাইব্রেরি থেকে যে বইটা নিয়েছ তাতে?
কি বলছ তুমি? নতুন কিছু তো দেখলাম না। আগাগোড়া পড়েছি।
তাহলে মিস করেছ। চলে এস। আমরা হেডকোয়ার্টারে বসে আছি। রবিন, কী…? কিন্তু লাইন কেটে দিয়েছে রবিন। গেলাসের দুধটুকু না খেলে উঠতে দেবেন। মেরিচাচী। মাঝে মাঝে এটা অত্যাচার মনে হয় কিশোরের। এখন আবার একটা নতুন অত্যাচার যোগ হয়েছে, কিডন্যাপিঙের পরে, বাইরে বেরোতে গেলেই খালি সতর্ক করেন। দুই ঢোকে দুধটুকু শেষ করে ছুটে বেরোল রান্নাঘর থেকে। হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল।
গোয়েন্দাকে সব সময় চোখকান সজাগ রাখতে হয়, গম্ভীর হওয়ার ভান করতে গিয়ে হেসে ফেলল মুসা।
টিটকারি রাখ তো এখন…
বাধা দিয়ে রবিন জিজ্ঞেস করল, সত্যি বলছ কিছু পাওনি?
থাকলে তো পাব, বিড়বিড় করল কিশোর।
রবিন, বলেই দাও ওকে, মুসা বলল।
বেশ, শুরু করল রবিন। আমরা ঢুকে দেখি তুমি নেই। টেবিলে বইটা দেখতে পেল মুসা। টেনে নিলাম। চীফ জ্যাঙ্গার ওপর লেখা চ্যাপ্টারটাতেই পেলাম। ওটা।
কি পেলে? অত ভণিতা করছ কেন? জলদি বলো!
বইটা তুলে নিয়ে পাতা ওল্টাল রবিন। পড়তে আরম্ভ করল, নানদা সর্দার জ্যাঙ্গার আশা বেড়ে গেল যখন ইমবালা, অর্থাৎ দা হিল অভ দা রেড লায়নে ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করলেন। কারণ তিনি বুঝতে পারলেন অন্তত তিনটে বছরের জন্যে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছেন ইউরোপিয়ানদের। এটুকু পড়েই থেমে গেল সে। কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাসল।
মুসাও হাসল।
হাঁ করে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। বুঝতে পারছে না। তো? কি পেলে? ইমবালার কথা তো আমরা…
কিশোর, অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল রবিন। এখনও বুঝতে পারলে না? তোমার হয়েছে কি? দা হিল অভ দা রেড লায়ন! ইমবালার ইংরেজি মানে, লাল সিংহের পাহাড়। মনে পড়ছে না? এখানেও আছে রেড লায়ন। দা রেড লায়ন র্যাঞ্চ। বিখ্যাত পুরনো হোটেলটা, যেখানে হলিউডের বড় বড় অভিনেতারা ছুটি কাটাতে আসে।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরবে রবিনের দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তারপর ওপর দিকে মুখ তুলে হো হো করে হেসে উঠল। রবিনের পিঠ চাপড়ে দিতে দিতে বলল, রবিন, কাজই করেছ একটা! ঠিক বলেছ। দা রেড লায়ন র্যাঞ্চ। ছেলেকে নিয়ে নিশ্চয় ওখানে থেকেছেন স্যার মনটেরো। ইস, আমি একটা গাধা! লিখেই। দিয়েছে ইমবালার মানে, অথচ আমার চোখেই পড়ল না!
ভুল আমরা সবাই করে থাকি, ভারিক্কি চালে বলল মুসা।
হেসে ফেলল কিশোর। প্রতিশোধ নিচ্ছ, না? নাও। কিছু মনে করছি না। আমি। কাজ হয়েছে এতেই খুশি।
রবিনও হাসল।
হ্যারি আর কিংকে ফোন করা দরকার, কিশোর বলল।
কিন্তু কেউ ফোন ধরল না ওপাশ থেকে।
নাস্তা করতে গেছে হয়ত, রিসিভার রাখতে রাখতে বলল কিশোর। চল, গিয়ে ধরি। একসঙ্গেই নাহয় তখন র্যাঞ্চে যাওয়া যাবে।
তাহলে সাইকেল নেয়ার দরকার নেই, রবিন বলল। সাইকেলগুলো আবার কোথায় রাখব? বাসে চলে যাই। তারপর ওদের সঙ্গে গাড়িতে।
গুড আইডিয়া, মুসাও একমত।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দ্রুত বেরিয়ে পড়ল হেডকোয়ার্টার থেকে। বিশ মিনিট পরে একটা বাস ওদেরকে নামিয়ে দিল মিরামার হোটেলের সামনে। কিরে ঘরে ফোন করল ক্লার্ক। আছে। ছেলেদেরকে পাঠিয়ে দিতে বলল কিং।
ঘরে ঢুকে কিশোর জিজ্ঞেস করল, কিছু শুনেছেন আর?
না, জবাব দিল কিং। নানদায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে আসছে। পিটারকে খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন স্যার মনটেরো, আমাদের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন।
আমরা বোধহয় এবার সাহায্য করতে পারব আপনাদের। বই পড়ে যা আবিষ্কার করেছে সেটা খুলে বলল কিশোর।
দা হিল অভ দা রেড লায়ন! নিশ্চয়! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল হ্যারি। মনে হয়, ঠিকই আন্দাজ করেছ তোমরা।
বলেছিলাম না, তার দিকে তাকিয়ে তিন গোয়েন্দার প্রশংসা করে বলল কিং। ছেলেগুলো চালাক। জলদি চল। গাড়ি বের করতে হবে।
পার্কিং লটে এসে বিশাল ক্যাডিলাক গাড়িটায় চড়ে বসল সবাই। ড্রাইভ করতে বসল কিং। তাকে পথ বাতলে দিতে লাগল রবিন। শহরের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ের পাদদেশে চলে এল ওরা। রেড লায়ন র্যাঞ্চের দোতলা বাড়িটা রাস্তা থেকেই চোখে পড়ে। ওটার দুপাশে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েক গুচ্ছ হলদে রঙ করা। কাঠের বাড়ি আর কিছু শাদা রঙের কটেজ। পুরো অঞ্চলটাই ঘিরে দেয়া হয়েছে অলিণ্ডার আর হিবিসকাসের উঁচু বেড়া দিয়ে। গাড়ি পার্ক করে রেখে প্রধান। বাড়িটার দিকে এগোল ওরা।
রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে বসে আছে, ধোপদুরস্ত কালো স্যুট পরা ক্লার্ক। মুখ তুলে তাকিয়ে মোলায়েম হাসি হাসল। হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে গেল হাসিটা। চিৎকার করে উঠল, মিস্টার টিনটন!