মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তাঁর নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত নাম এখন জোগাড় করতে হবে আমাদের। তার পর…
জোরে থাবা পড়ল দরজায়। ঝট করে একসঙ্গে সব কটা মাথা ঘুরে গেল সেদিকে। চেঁচিয়ে ডাকল একটা নারীকণ্ঠ, মিস্টার কিং! মিস্টার ম্যাকঅ্যাডাম! আছেন ওখানে?
দরজার কাছে এগিয়ে গেল কিং। বলতে বলতে গেল, ও মিস ডলি জেসাপ। ট্রেড মিশন থেকে এসেছে। স্যার মনটেরোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা.. করছে সে।
হয়ত পিটারের খোঁজ পেয়েছেন স্যার মনটেরো, আন্দাজ করল হ্যারি। ।
দরজা খুলল কিং। লম্বা, কালো চুলওয়ালা এক তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে নেভি সোয়েটার। পরনে ধূসর স্ল্যাকস। তাড়াহুড়ো করে এসে ঘরে ঢুকল।
ওকে পেয়েছেন? জিজ্ঞেস করল ডলি। ফোন করতে মানা করলেন। খবর দিই কি করে। স্যার মনটেরোর কাছ থেকে গোপন মেসেজ এসেছে… হঠাৎ ছেলেদের ওপর চোখ পড়তেই থেমে গেল সে। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল ওদের। দিকে।
আমি বুঝিনি আপনারা একা নন, কিংকে বলল সে।
পিটারের সম্পর্কে কিছু? জিজ্ঞেস করল কিং।
তার খবর পাওয়া গেছে? হ্যারির প্রশ্ন।
না, ওসব নয়। অফিসিয়াল মেসেজ।
হুঁ, মাথা ঝাঁকাল কিং। ছেলেদের দিকে ফিরে বলল, অল রাইট, বয়েজ, তোমরা তোমাদের তদন্ত চালিয়ে যাও। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিটারকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। কোনও খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে এখানে জানাবে। আমাদেরকে।
বেরিয়ে যেতে ইঙ্গিত করা হচ্ছে ওদেরকে, বুঝতে পারল ছেলেরা। বেরিয়ে এল হোটেলের কামরা থেকে। নিচে নেমে বাস স্টপের দিকে রওনা হলো।
রবিন জিজ্ঞেস করল, কোত্থেকে শুরু করব, কিশোর?
জ্যাঙ্গা। টেলিফোন বুক, ডিরেকটরি, ম্যাপ, রেফারেন্স বুক, মোটকথা যত জায়গায় ওই নামের সম্পর্ক থাকতে পারে মনে হবে সবখানে খুঁজব। ভাগাভাগি হয়ে খুঁজতে বেরোব আমরা। ম্যাপ খুঁজতে মুসা চলে যাও সিটি হলে। রবিন। লাইব্রেরিতে। সিটি ডিরেকটরি আর টেলিফোন বুক খুঁজবে। আমি যাব হিসটরিক্যাল সোসাইটিতে।
খিদে পেয়েছে, লজ্জিত হাসি হাসল মুসা। বাড়ি থেকে আগে লাঞ্চটা সেরে আসি?
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। নাহ, তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল। একটা স্ন্যাকসে ঢুকে কিছু খেয়ে নাও। তারপর চলে যাও কাজে। বিকেলের পরে হেডকোয়ার্টারে দেখা হবে।
বাস এল। তাতে চড়ল ওরা। নোট বুক বের করে যেসব জায়গায় গিয়ে লড়াই করেছেন জ্যাঙ্গা, সেগুলোর তিনটে লিস্ট করে একেকজনের হাতে একেকটা। দিল রবিন। তারপর বিশেষ বিশেষ জায়গায় নেমে আলাদা হয়ে গেল তিনজনে।
.
সাড়ে তিনটেয় হিসটরিক্যাল সোসাইটি থেকে বেরিয়ে ইয়ার্ডে ফিরে চলল কিশোর। তেমন কিছুই পায়নি সে। হেডকোয়ার্টারে ঢুকে দেখল রবিন কিংবা মুসা। ফেরেনি। চুপচাপ বসে থাকতে ভাল লাগে না। ইমারজেন্সি সিগন্যালগুলো নিয়ে। বসল সে। নতুন ব্যাটারি ভরল। ফাইন টিউনিং করল। তখনও ফিরল না দুই সহকারী। শেষে ট্রেলারে ঢুকে জ্যাঙ্গার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে বসল কিশোর।
জবাব একটা নিশ্চয় আছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, জ্যাঙ্গা যেসব জায়গায় গিয়েছেন। ওগুলোর নামের মধ্যেই রয়েছে সূত্র। আর সেটা বের করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি পিটারকে।
রবিন আর মুসা যখন এল, তখন পাঁচটা প্রায় বাজে। ওদের গম্ভীর মুখ দেখেই যা বোঝার বুঝে নিল কিশোর।
কিছু না, জোরে নিঃশ্বাস ফেলে হাত নেড়ে বসে পড়ল রবিন।
নামগুলো সব আফ্রিকান, কিশোর, মুসা বলল হতাশ কণ্ঠে। রকি বীচে ওরকম নামের কিছু নেই।
আসলে সব জায়গায় চেষ্টা করিনি আমরা, নিরাশ মনে হলো না। গোয়েন্দাপ্রধানকে। খাওয়ার পর লাইব্রেরিতে গিয়ে জ্যাঙ্গা খুঁজব। আরও কোনও ইমপরট্যান্ট জায়গায় গিয়ে থাকতে পারেন যেটার কথা আমাদেরকে বলতে ভুলে গেছে কিং আর হ্যারি।
বাড়িতে কাজ আছে আমার, রবিন বলল। মাকে কথা দিয়ে এসেছি। তার সঙ্গে এক জায়গায় যেতে হবে।
আমারও আছে, মুসা জানাল।
আমার নেই, কিশোর বলল। আমি একাই যেতে পারব। বই ঘাঁটাটা এমন কোনও কঠিন কাজ না।.
কিশোর, মুসার কণ্ঠে অস্বস্তি। মনে হয়… মনে হয় ভুল পথে খুঁজছি আমরা।
আমারও তাই মনে হচ্ছে, রবিন বলল।
কি জানি! গাল চুলকাল কিশোর। তার বিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে দিয়েছে মনে হয় দুই সহকারী। কিন্তু আমার বিশ্বাস, পিটার যা বলার বলে দিয়েছে। ওই মেসেজে জানিয়ে দিয়েছে কোথায় আছে সে।
.
১০.
পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে শুধু খাবার খুঁটতে লাগল কিশোর। অন্যমনস্ক। রুচি নেই যেন।
কি রে? ব্যাপারটা নজর এড়াল না মেরিচাচীর। অসুখ নাকি?
নাহ! প্লেটের দিকে চোখ ফেরাল কিশোর। আগের রাতে ঘুম ভাল হয়নি। সকালেও তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে। তার আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মনে হয়েছে, বোধহয় মুসার কথাই ঠিক। লাইব্রেরিতে নানদার ওপর একটা বই পেয়ে নিয়ে এসেছে। হেডকোয়ার্টারে বসে বসে অনেক রাত পর্যন্ত পড়েছে। পিটারকে খুঁজে বের করতে কাজে লাগে এমন কিছুই চোখে পড়েনি।
আরে কি হলো? খাচ্ছিস না কেন? ডিম নে, মেরিচাচী তাগাদা দিলেন। নাকি পেটে…
ঠিক আছে, দাও একটা, প্লেট বাড়িয়ে দিল কিশোর। কিশোরের এই উদাসীনতা রাশেদ পাশারও নজরে পড়েছে। আড়চোখে তাকালেন তিনি, কিছু বললেন না।
ভাবছে কিশোর। পিটার তার সূত্র ঠিকমতই দিয়েছে। বোঝার জন্যেই। কিন্তু কিশোর বুঝতে পারছে না। কিছু একটা মিস করছে। নাস্তা শেষ হলো। নতুন। কিছুই বের করতে পারল না ততক্ষণেও সে।