জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখল কিং। তুলে ধরল হ্যারির জন্য। দেখে মাথা নাড়ল হ্যারি।
চমৎকার একটা লাইব্রেরি আছে আমাদের রকি বীচে, বলে গেল কিশোর। রেফারেন্স বই আর ম্যাগাজিন ঘেটে বের করতে খুব একটা কষ্ট হল না স্যার মনটেরোর নাম। জানতে পারলাম নান্দার ব্রিটিশ কলোনির প্রাইম মিনিস্টার তিনি। স্বাধীনতার জন্যে গোলমাল চলছে এখন দেশটায়। পার্টিগুলোর নাম। জানলাম। তারপর আর বুঝতে কষ্ট হল না কেন পিটারকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল লোকগুলো। আপনাদের কথায়ও একই রকম টান। এবং দুজন দুরঙের চামড়া হলেও কাজ করছেন একসাথে। অর্থাৎ স্যার মনটেরোর হয়ে। কাজেই বোঝাটা কি এতই কঠিন?
তাই তো, মুসা বলল। একেবারেই সহজ।
হ্যারির দিকে তাকিয়ে হাসল কিং। চলবে?
হ্যাঁ, বলে আবার হোলস্টারে পিস্তল রেখে দিল হ্যারি। সত্যিই বলছে মনে হয়।
এবং খুব ভাল গোয়েন্দা। আশা করি আমাদেরকে নিরাশ করবে না ও। কি বল, কিশোর?
না, করব না, দৃঢ় কণ্ঠে বলল কিশোর।
ভেরি গুড, কিং বলল। মাত্র গতকাল রকি বীচে এসেছি আমরা। বিকেলের কাগজে পড়েছি তোমার কিডন্যাপিঙের খবর। তোমার ছবি দেখেছি। তিন গোয়েন্দা নামে যে একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছ তোমরা, এবং সেটার সাংঘাতিক সুনাম, তা-ও জানলাম। ভাবলাম তোমাদেরকে দিয়েই হবে। চলে এলাম।
তাহলে কি আমাদের ভাড়া করছেন? মুসার প্রশ্ন।
হ্যারির দিকে তাকিয়ে যেন আলোচনার উদ্দেশ্যেই বলল কিং, তোমার কি মনে হয়, হ্যারি? ওরা পারবে? এমন গোয়েন্দাই আমাদের দরকার, তাই না? ।
মনে হয় পারবে, হ্যারির মুখেও হাসি।
রবিন আর মুসার মুখেও হাসি। কিন্তু কিশোর গম্ভীর। জিজ্ঞেস করল, পিটারের সঙ্গে চেহারার কতটা মিল আছে আমার, স্যার?
আমাকে শুধু কিং বললেই চলবে। মিল? একেবারে যমজ বলা চলে। আশ্চর্য! বিশ্বাসই হতে চায় না। দুবছর ধরে আমেরিকায় আছে পিটার। এতদিনে নিশ্চয় চেহারা কিছুটা হলেও বদলেছে। ফলে লোকগুলো আর চিনতে পারেনি। তোমাকেই পিটার বলে ভুল করে বসেছে। ওর কথায়ও নানদার টান। একটা। ব্যাপার বুঝতে পারছি না…।
আমার কথা শুনেও কেন বুঝতে পারল না ওরা, এই তো? হাসল কিশোর। মুখে কাপড় গোঁজা ছিল আমার। প্রথমে বলার চেষ্টা করেছি। তারপর যে-ই ওদের উদ্দেশ্য বুঝে গেলাম, চুপ হয়ে গেলাম একেবারে। একটা কথাও আর বললাম না।
ভাল করেছ, হ্যারি বলল। মারাত্মক বিপদে পড়ে যেতে তাহলে। ওদের নাম আর চেহারার বর্ণনা যা পেয়েছি তাতে পরিচিত লাগছে না। তবে উগ্রবাদী। দলের লোক সন্দেহ নেই। ওই দলের লোকরা ভয়ংকর।
দেশে থাকলে নিরাপদ নয়, কিং বলল। সেজন্যেই ছেলেকে আমেরিকায়। পাঠিয়ে দিয়েছিলেন স্যার-মনটেরো। লস অ্যাঞ্জেলেসে থেকে ইস্কুলে পড়ে। খুঁজে খুঁজে এখানেও এসে হাজির হয়েছে উগ্রবাদীরা। হপ্তাখানেক আগে প্রায় ধরেও ফেলেছিল পিটারকে। অনেক কষ্টে পালিয়েছে সে। তারপর তার আর খোঁজ নেই। স্যার মনটেরোর তো প্রায় পাগল হবার জোগাড়। লস অ্যাঞ্জেলেসের নানদার ট্রেড মিশনের মাধ্যমে পিটার খবর পাঠানোর পর গিয়ে তিনি শান্ত হয়েছেন।
কি খবর পাঠিয়েছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ট্রেড মিশনটা কি? মুসা জানতে চাইল।
ট্রেড মিশন হল একটা অফিসিয়াল গ্রুপ, হ্যারি বলল। যাদের কাজ হল দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
আর মেসেজ যেটা পাঠিয়েছে, কিং বলল। সংক্ষিপ্ত। বেশ অদ্ভুত। আমরা। তো এর মাথামুণ্ড কিছুই বের করতে পারিনি। তাতে রকি বীচের কথা বলা হয়েছে। পিটারের নিশ্চয় ভয় শত্রুদের হাতে পড়ে যেতে পারে তার মেসেজ। সহজ করে লিখলে ওরাও বুঝে ফেলবে।
ওই মেসেজের মানে করে দিতে বলছেন আমাদেরকে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
দেখি তো? দেখতে চাইল রবিন।
হোটেলে রয়ে গেছে। ওখানেই নিরাপদ। হ্যারি বলল, যেতে চাইলে এখনি নিয়ে যেতে পারি।
দুজনকে অনুসরণ করে ওয়ার্কশপ থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। লম্বা, কালো একটা ক্যাডিলাক দাঁড়িয়ে আছে। তাতে চড়ল সবাই। হঠাৎ মুসা বলে। উঠল, কিশোর, দেখ! রাস্তার অন্যপাশে একটা জায়গা দেখাল সে।
কী?
ওই ঝোপের ভেতর কাকে দেখলাম, মুসা বলল।
চল তো দেখি, কিং বলল।
সাবধানে ঝোপটার দিকে এগোল সবাই। রাস্তার কিনার থেকে শুরু করে পরের ব্লক পর্যন্ত এগিয়ে গেছে ঝোপ। পাতলা। ভেতর দিয়ে অনেক দূর দেখা যায়। কাউকে দেখা গেল না সেখানে। তবে ছিল যে তার প্রমাণ মিলল। একটা পোড়া সিগারেটের গোড়া পড়ে রয়েছে।
বললাম না দেখেছি! প্রায় চিৎকার করে বলল মুসা।
জিরাতে কেউ বসে থাকতে পারে, কিশোর বলল। সিগারেট টেনেছে।
হয়ত, কিং বলল।
তা না হলে, নিজেকেই যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে কিশোর। স্যালভিজ ইয়ার্ডের ওপর নজর রাখতে আসবে কে? কিডন্যাপাররা এখনও এই এলাকায়। থেকে থাকলে নিশ্চয় খবরের কাগজ দেখেছে। ভুল লোককে ধরেছিল বুঝতে পেরেছে।
আবার ক্যাভিলাকে ফিরে এল ওরা। গাড়ি চালাল হ্যারি।
ছেলেদের দিকে ফিরে কিং বলল, পিটারকে খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের। ঝোপের ভেতর যে ছিল, সে হয়ত নজর রাখেনি, কিন্তু আমার ভয় লাগছে কিডন্যাপাররা এখনও এই শহরেই আছে। সহজে হাল ছাড়বে না ওরা।
এগুলো আসলে এক ধরনের জেদ, কিশোর বলল। নিজেরা যা ভাবে সেটাই ঠিক, অন্যদেরটা কিছু না।