লাভ হবে না তাতে। ভাল করেই জানে আমরা এখানে আছি। বেরিয়ে যেতে দেখেনি, কিশোর বলল।
তা ঠিক, সাংঘাতিক হতাশ হয়েছে মুসা। মেরিচাচীর কাছ থেকে লুকিয়ে রক্ষা নেই। স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড। না, এফ বি আই। না না, ক্যানাডিয়ান মাউনটিজ। উঁহু, তিনটা একসঙ্গেই। এত কড়া নজর ঈগলেরও নেই। চল, বেরোই।
বেরিয়ে এল তিনজুনে। জঞ্জালের পাশ দিয়ে এগোতে এগোতে হঠাৎ হাত তুলল রবিন, কিশোর, দুজন লোক!
কিডন্যাপারগুলো না তো! আঁতকে উঠল মুসা।
না। দেখছ না, একজন কালো চামড়া।
কালো? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। ঠিকই আছে। এরকমই হওয়ার কথা। এস।
হওয়ার কথা? কিছুই বুঝতে পারল না মুসা। কি বলতে চাও?
কিন্তু জবাব দেয়ার অবকাশ নেই যেন কিশোরের। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোচ্ছে। তাকে ধরার জন্যে দ্রুত এগোল দুই সহকারী। কিন্তু অফিসের কাছাকাছি যাওয়ার আগে ধরতে পারল না।
চোখে সন্দেহ নিয়ে তিন গোয়েন্দার দিকে তাকালেন মেরিচাচী। এই ভদ্রলোকরা তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। ভাড়াটাড়া করার ব্যাপার। মনে তো হচ্ছে আগামী পুরো হপ্তাটাই কাজ আটকে থাকবে আমার। কিছুই হবে না।
না, ম্যা ম, মেরিচাচীর আশঙ্কা দূর করার জন্যে তাড়াতাড়ি বলল শ্বেতাঙ্গ লোকটা। লম্বা, সোনালি চুল, মুখটা ওই দুই কিডন্যাপারের মতই রোদেপোড়া। আমাদের হয়ে ছোট্ট একটা তদন্ত করে দিতে হবে ওদের।
লোকটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। ইংরেজি বলছে ইংরেজদের মত, কিন্তু সেই অদ্ভুত টান।
ছোট হলেই ভাল, মেরিচাচী বললেন। আগামী হপ্তা থেকে ইস্কুল শুরু হবে ওদের। এর মধ্যেই আমার কাজগুলো সব করিয়ে রাখা দরকার।
বলে আর দাঁড়ালেন না তিনি। অফিসে চলে গেলেন। দ্রুত একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল কিশোর। তারপর লোকগুলোকে ইশারা করল সঙ্গে আসার জন্যে। ওয়ার্কশপে নিয়ে এল ওদেরকে।
কিডন্যাপিঙের ব্যাপারে, তাই না? জিজ্ঞেস করল সে, আপনাদের পরিচয়?
আমি হাবার্ট কিং, সোনালি চুল লোকটা বলল। কালো লোকটাকে দেখিয়ে বলল, ওর নাম হ্যারি ম্যাকঅ্যাডাম। কিডন্যাপিঙের ব্যাপারেই আলোচনা করতে এসেছি আমরা।
ভাল গোয়েন্দা দরকার আমাদের, হ্যারি বলল। তোমাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। খুবই ভাল নাকি তোমরা। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছ। সেজন্যেই এলাম। সাহায্য করতে রাজি থাকলে বল, সব কথা খুলে বলছি। কেন কিডন্যাপ করা হয়েছিল তোমাকে। কি চায় ওরা।
খুশি হয়েই করব, মিস্টার ম্যাকঅ্যাডাম, কিশোর জবাব দিল। তবে কেন কিডন্যাপ করা হয়েছিল আমাকে, জানি, আপনাদেরকে আর বলতে হবে না। ওরা কি চায় তা-ও জানি।
জান? মুসা অবাক।
জানি, সেকেণ্ড। আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল কারণ আমি দেখতে অনেকটা পিটার মনটেরোর মত। পিটার হল স্যার উইনিফ্রেড মনটেরোর ছেলে। আফ্রিকার একটা ছোট্ট ব্রিটিশ কলোনি নানদার প্রধানমন্ত্রী তিনি। ইংরেজ। বিয়ে করেছেন এক ভারতীয় মহিলাকে। আগামী বছরের মধ্যেই ওটাকে স্বাধীন স্বতন্ত্র দেশ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তার সরকারে থাকবে বেশির ভাগই কালো চামড়ার মানুষ। আর শ্বেতাঙ্গ যারা থাকবে, তারা বাইরের কেউ নয়, নানদায় যারা জন্মগ্রহণ করেছে শুধু তারাই। কিন্তু প্রতিপক্ষ আছে। দলটার নাম ব্ল্যাক নানান এলিয়ান্স। গোপনে কাজ করছে এর সদস্যরা, দেশ থেকে সমস্ত শ্বেতাঙ্গদের তাড়াতে চাইছে। আরও একটা দল আছে, শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী। ন্যাশনাল পার্টির লোক ওরা। ওরা চায়, কোনও কালো লোক থাকবে না সরকারে। সব শাদা। সেনাবাহিনীও গঠিত হবে সব শ্বেতাঙ্গদের দিয়ে, যাতে কালোদের দাবিয়ে রাখতে পারে।
কিশোর, তুমি এত কথা জানলে কি করে? রবিন অবাক।
আর এর সঙ্গে কিডন্যাপিঙেরই বা কি সম্পর্ক? মুসা জানতে চাইল।
অনেক সম্পর্ক, কিশোর বলল। কিডন্যাপাররা ন্যাশনাল পার্টির উগ্রবাদী। শ্বেতাঙ্গদের লোক। পিটারকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তার বাবাকে বাধ্য করতে চায়, যাতে স্যার মনটেরো তাঁর প্ল্যান বাতিল করে তাদের কথায় রাজি হন। মিস্টার কিং আর মিস্টার ম্যাকঅ্যাডাম নিশ্চয় স্যার মনটেরোর সমতাবাদী দলের লোক। পিটারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
হঠাৎ নীরব হয়ে গেল যেন ওয়ার্কশপটা।
বড় বেশি জান তুমি, হ্যারি বলল। অনেক বেশি জেনে ফেলেছ। এতটা ভাল না।
তার কালো থাবায় ধরা ভয়ংকর দর্শন এক পিস্তল।
.
০৮.
কালো মুখে জ্বলন্ত কয়লার মত জ্বলছে যেন হ্যারির চোখ। সোজা কিশোরের দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে। এসব জানার একটাই উপায়। কিডন্যাপারদের সঙ্গে যোগসাজস আছে তোমার। তুমি স্পাই।
হুট করে কিছু কোরো না, হ্যারি, কিং বলল। তার দৃষ্টিও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। হ্যাঁ, ইয়াং ম্যান, বল তো কি করে এসব জানলে তুমি?
জানা কি এমন কঠিন কাজ নাকি? তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত ওল্টাল কিশোর। আমি ইও নই বোকাও নই। একটা সহজ কথা ভাবছেন না কেন? আমি কিডন্যাপারদের লোক হলে আমাকে ওভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হত নাকি? আর আমিও কি ঢাকঢোল পেটাতাম?
তাকিয়ে রয়েছে হ্যারি। বলে যাও।
কাজটা সহজ হল কি করে বল, আদেশের সুরে বলল.কিং।
বেশ। বড় করে দম নিল কিশোর। ধরে তো নিয়ে যাওয়া হল আমাকে। ওদের আলাপ আলোচনা শুনলাম। কথায় অদ্ভুত টান। আমাকে পিটার বলে ভুল করল। ভাবল স্যার উইনিফ্রেড মনটেরোর ছেলে। যাই হোক, পালিয়ে আসতে পারলাম অবশেষে। তারপর আবার গেলাম কেবিনটার কাছে। এটা পেয়েছি, হাতির দাঁতে তৈরি জিনিসটা বের করে দেখাল সে। আমাদের শোফার হ্যানসনের বিশ্বাস, এটা আফ্রিকার কোনও ব্রিটিশ কলোনি থেকে এসেছে।