চল। মাথা ঝাঁকাল হ্যানসন।
ঝোপের ভেতরের সরু পথ ধরে একসারিতে হাঁটছে ওরা। দ্রুত কমে আসছে গোধূলীর আলো। র্যাটলস্নেক রোডের দিকে চলতে চলতে মুসা বলল, কিশোর, ছেলেটাকে বের করব কিভাবে?
উপায় নিশ্চয় আছে। সেজন্যে তাঁর সম্পর্কে আরও কিছু জেনে নেয়া প্রয়োজন। আমাদের। আজ রাতে গবেষণা চালাব আমি। কাল সকালে হেডকোয়ার্টারে দেখা কর তোমরা। তখন বিস্তারিত আলোচনা করব।
.
০৭.
আরে আস্তে খাও না, মিসেস আমান বললেন। ফুরিয়ে তো আর যাচ্ছে না। গলায় আটকাবে তো।
পরদিন সকালে নাস্তা খেতে বসেছে মুসা। তাড়াহুড়া আছে, মা।।
খবরের কাগজ থেকে মুখ তুললেন মিস্টার আমান। কিশোরের কিডন্যাপিঙের ব্যাপারটা নয় তো? সাবধান। খুব বিপজ্জনক কিন্তু।
জানি।
মিসেস আমান বললেন, কেমন অদ্ভুত ব্যাপার বল তো? ভুল করে একজনের জায়গায় আরেকজনকে নিয়ে যাওয়া।
কিশোর তো তবু চুপ করেছিল। আমি হলে…, বাক্যটা শেষ না করে হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিল মুসা।
দ্রুত নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে এল সে। সাইকেল নিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডে রওনা হল। সুন্দর সকাল। ফুরফুরে বাতাস। হেডকোয়ার্টারে ঢোকার গোপন প্রবেশ পথ লাল কুকুর চার দিয়ে এসে ভেতরে ঢুকল মুসা। বাইরের ওয়ার্কশপে কাজ করতে দেখল কিশোরকে। ওয়ার্কবেঞ্চের ওপর তিনটে খুদে যন্ত্র খুলে ছড়িয়ে বসেছে গোয়েন্দাপ্রধান।
জরুরী সংকেতের প্রয়োজন হতে পারে,মুসাকে দেখে বলল কিশোর। এস, হাত লাগাও। রবিন আসতে আসতে সেরে ফেলি।
পিটারের ব্যাপারে খোঁজখবর করার কথা ছিল, ওয়ার্কবেঞ্চের অন্য প্রান্তে। বসল মুসা। তার কি হল? নিয়েছ?
নিয়েছি, হাসল কিশোর। অনেক কিছু জেনেছি কাল রাতে। পিটার মনটেরোকে খুঁজে বের করা কঠিন হবে না।
বল! উত্তেজনা চেপে রাখতে পারছে না মুসা।
রবিন আসুক। এক কথা দুবার বলতে ভাল লাগে না।
জোর করে কিশোরের মুখ খোলান যাবে না। হতাশার একটা ভঙ্গি করে যন্ত্র। মেরামতে লাগল মুসা। পাটসগুলো সব পরিষ্কার করে আবার জুড়ে দেয়ার জন্যে রেডি করেছে, এই সময় হাজির হল রবিন। সবুজ ফটক এক দিয়ে ঢুকল সে। সরি, জোরে জোরে সাইকেল চালিয়ে আসাতে হাঁপাচ্ছে। মা দেরি করিয়ে দিল। কাজ না সেরে বেরোতে পারলাম না। তা কি খবর, কিশোর? আমাদের কেসের ব্যাপারে আলোচনার কথা ছিল। চীফ ফ্লেচারের কাছ থেকে আর কোনও খবর। পেয়েছ?
পেয়েছি। সকালেই ফোন করেছিলাম। হেলিকপ্টারটাকে পেয়েছে পুলিশ। ভেনচুরার কাছে একটা মাঠে ফেলে দিয়ে চলে গেছে।
আমাদেরকে বোকা বানিয়েছিল? উড়ে গেল দক্ষিণে, অথচ পাওয়া গেল উত্তরে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ঠিকই করেছে। আমি হলেও ওরকমই কিছু করতাম। কে আর সেধে গিয়ে পুলিশের হাতে পড়তে চায়। চীফ বলেছেন লোকগুলোকে ধরার মত কোনও সূত্রই ছিল না কপ্টারে। ভাড়া নেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল জরুরী ডাক সরবরাহ করবে। এয়ারফিল্ড থেকে নিয়ে গিয়েছিল ওটা পাইলট মাথায় হেলমেট আর চোখে গগলস ছিল তার। ফলে চেহারা কেউ দেখতে পায়নি। আর কাগজপত্র যে সব ভুয়া তাতে তো কোনও সন্দেহই থাকার কথা নয়।
বাহ্, চমৎকার, ব্যঙ্গের সুরে বলল মুসা। অনেক উপকার হবে, আমাদের!
কিডন্যাপারদের খবর কি? রবিন জানতে চাইল।
এখনও সনাক্ত করা যায়নি, কিশোর জানাল। হেলিকপ্টার আর মার্সিডিজে আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। ওয়াশিংটনের এফ বি আই অফিসে ওই ছাপ রেকর্ড করা নেই। আর মার্সিডিজটাও ভাড়া করা।
বলতে চাও আমাদের হাতে কোনও সূত্রই নেই, ভোতা গলায় বলল মুসা।
না, ঠিক তা নয়, হাসল গোয়েন্দাপ্রধান। বলেছি না কাল রাতে অনেক গবেষণা করেছি। আমার মনে হয়…
এ কথা শেষ হল না তার। পেছনে শোনা গেল জোরাল কণ্ঠস্বর। মেরিচাচী। সবাই তাহলে এখানে। ভালই হল। কিশোর, দুই দিন আগে কথা দিয়েছিলি ছোট স্টোররুমটা পরিষ্কার করে দিবি।
সরি, চাচী।
ঠিক আছে। আজকে করে দে। মাল রাখতে হবে ওখানে। বাইরে থেকে থেকে নষ্ট হচ্ছে জিনিসগুলো। তিনজনে করতে আর কতক্ষণ লাগবে…
আমি একাই পারব, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে বলল, এগুলো লাগিয়ে ফেল। আমি আসছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল সে। অনেক বার কথাটা ভেবেছে আগেও, আজ আরেক বার ভাবল, পৃথিবীতে এই কাজ জিনিসটা না থাকলে অনেক ভাল হত। আর যদি খিদেটা না থাকত। অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি পেত মানুষ।
বিষণ্ণ দৃষ্টিতে কিশোরের চলে যাওয়া দেখতে লাগল রবিন আর মুসা। কিশোর কি জেনেছে জানার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ছোট যন্ত্রগুলো জোড়া লাগানোয় মন দিল।
শেষ হয়ে গেল লাগানো।
অযথা বসে না থেকে ওয়ার্কশপটা গোছানোয় লেগে গেল দুজনে। সেই কাজও শেষ। অনেকক্ষণ বসে থেকে উসখুস করে হেডকোয়ার্টারে ঢোকার জন্যে যেই দুই সুড়ঙ্গের দিকে এগোল, শোনা গেল একটা কণ্ঠ, দাঁড়াও!
কাজ করতে করতে ঘেমে একাকার হয়ে এসেছে কিশোর। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে। ওয়ার্কশপে এসে ঢুকল সে।
কাল রাতের কথাটা তাড়াতাড়ি বলে ফেল তো এবার! অস্থিরতা আর চেপে রাখতে পারল না মুসা।
কি জেনেছ? রবিনের প্রশ্ন।
কিশোর! আবার ডাক শোনা গেল মেরিচাচীর। অফিসের কাছ থেকে ডেকেছেন।
খাইছে! আবার! ককিয়ে উঠল মুসা।
চল লুকিয়ে পড়ি! পরামর্শ দিল রবিন। জবাব দিও না।