ব্যাপারটা কি এখন খুলে বল তো, কিশোর, চীফ অনুরোধ করলেন।
আমাকে অন্য কেউ ভেবে ভুল করেছে ওরা। কোনও দেশের ভি আই পি গোছের কারও ছেলে মনে করেছে। পলিটিক্যাল কারণ হতে পারে। প্রতিশোধ হতে পারে। একজন জিম্মি খুঁজছে ওরা।
হু। নীরবে ভাবলেন কিছুক্ষণ চীফ। তারপর মুখ তুললেন। ভালোয় ভালোয়। যে বেঁচে এসেছ এইই বেশি। ঠিক আছে, এখন যা করার পুলিশই করবে। তোমাকে কয়েক দিন সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। ইতিমধ্যে লোকগুলোকে ধরে ফেলতে পারব আমরা, আশা করি। তখন আর তোমার ভয় নেই, নিরাপদ। তোমার চাচা-চাচী তো চলে গেছেন। যাবে কিভাবে? পুলিশের গাড়িতে করে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করব?
মাথা কাত করে সায় জানাল কিশোর।
বাইরে বেরিয়েই দেখা গেল রোলস রয়েসটাকে। চারটে গাড়ির পেছনে। ওটার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হ্যানসন। দ্রুত তার দিকে এগিয়ে গেল। তিন গোয়েন্দা।
আপনি? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
আমাকে যেতে বলা হয়নি, জবাব দিল হ্যানসন। তার মানে ডিউটিতেই রয়েছি আমি। তোমরা যেখানে থাকবে সেখানেই থাকতে হবে আমাকে। তাই আছি। কোথায় যেতে হবে এখন?
বাড়িতে। এক মিনিট দাঁড়ান। বলে দৌড়ে থানার সামনে ফিরে এল। কিশোর। একটা গাড়ি ঘোরানো হয়েছে ওদেরকে নেয়ার জন্যেই। ড্রাইভারকে ধন্যবাদ দিয়ে সে বলল, আর কষ্ট করতে হবে না। ওদের গাড়ি এসে গেছে।
রোলস রয়েসে উঠল তিন গোয়েন্দা। ড্রাইভিং সীট থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে জিজ্ঞেস করল হ্যানসন, কোথায় যাব?।
র্যাটলস্নেক রোড, শান্তকণ্ঠে নির্দেশ দিল কিশোর।
কোথায়? চমকে গেছে মুসা।
সেই বক্স ক্যানিয়নটায় যাব আবার। হ্যানসন, চালান।
প্রতিবাদ করে লাভ হবে না। চুপ করে রইল দুই সহকারী গোয়েন্দা।
র্যাটলস্নেক রোডে যখন পৌঁছল ওরা তখনও কড়া রোদ। গাড়িতে তালা লাগিয়ে তিন গোয়েন্দার সঙ্গে হ্যানসনও চলল ঝোপের ভেতরে লুকান পথ ধরে। পঁচিশ মিনিটের মাথায় পৌঁছে গেল ক্যানিয়নে, যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কিশোরকে।
আমি ভেতরে খুঁজব, বলল সে। তোমরা কেবিনটার বাইরে খোঁজ। দেখ। কোনও সূত্র পাও কিনা।
আমি কেবিনের ভেতরে অনেকক্ষণ ছিলাম, বলল সে। কিছু থাকলেও এখন। আর চোখে পড়বে না আমার। মুসা, তুমি আর হ্যানসন ভেতরে খোঁজ। বাইরের চারপাশটায়ও ঘুরে দেখবে। আমি আর রবিন যাচ্ছি হেলিকপ্টারটা যেখানে নেমেছিল সেখানে।
কিন্তু খুঁজবটা কি? রবিনের প্রশ্ন।
আমারও সেই কথা, মুসা বলল।
যে কোনও সূত্র, জবাব দিল কিশোর। লোকগুলো কে, কোত্থেকে এসেছে, কি চায়, এখনই বা কোথায় গেল, এসব। এমন কিছু মিলতেও পারে যা থেকে এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে।
ধীরে ধীরে পর্বতের ওপাশে হারিয়ে গেল সূর্য। লম্বা ছায়া পড়ল গিরিখাতের ভেতরে। কেবিনের ভেতরে বাইরে সমস্ত জায়গায় খুজল মুসা আর হ্যানসন। কিছু পেল না। রবিন আর কিশোরও কিছু পেল না হেলিকপ্টার নামার জায়গায়। মনে পড়ল কিশোরের, কেবিন থেকে দূরে তাকে খুঁজতে গিয়েছিল কিডন্যাপাররা। ছড়িয়ে পড়ে আবার শুরু হল খোঁজা। প্রায় নিরাশ হয়ে পড়েছে এই সময় হঠাৎ ঝুঁকল কিশোর। একটা জিনিস তুলে নিল মাটি থেকে। অন্যেরা দৌড়ে এল তার কাছে।
কী? জানতে চাইল রবিন।
বুঝতে পারছি না, আস্তে জবাব দিল কিশোর। দেখ।
গোধূলির ম্লান আলোতেও চকচক করে উঠল জিনিসটা। হাতির দাঁত কুঁদে। তৈরি হয়েছে আরেকটা খুদে হাতির দাঁত। সোনার জালিতে বসিয়ে ছোট একটা আঙটা লাগানো হয়েছে।
কানের দুল? মুসা বলল।
অন্য গহনাও হতে পারে। কিংবা সৌভাগ্যের প্রতীক, রবিন বলল। ওই যে অনেকে বিশ্বাস করে, ওরকম কিছু আরকি।
যা-ই হোক, কিশোর বলল। নিখুঁত নয় জিনিসটা। হাতে বানানো। বিদেশী হস্তশিল্প হতে পারে। পর্বতের গভীরে গিরিখাতে এই জিনিস এল কি করে ভাবছি।
কিডন্যাপাররা ফেলে গেল? মুসার প্রশ্ন।
যেতেই পারে।
কিশোরের কাছ থেকে জিনিসটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল হ্যানসন। লোকগুলোর কথার টানটা কোন দেশের বোধহয় বুঝতে পারছি। আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকাকালে ইংরেজদেরও কথার টান অনেকটা ওদেশের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। খাঁটি ব্রিটিশদের মত আর কথা বলতে পারত, না ঔপনিবেশিকরা। কোনও দেশে বেশিদিন থাকতে থাকতে ওরকম হয়েই যায়। এই জিনিসটা মনে হচ্ছে আফ্রিকার স্থানীয় অধিবাসীদের গহনা।
উত্তেজিত কণ্ঠে কিশোর বলল, কোন দেশের সেটাই এখন আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
কিশোর, মুসার কণ্ঠে অস্বস্তি। আমি ভেবেছিলাম এ কেসটা আমাদের জন্যে বাদ।
লোক ভাল না ওরা, সাবধান করল রবিন।
জানি, জবাব দিল কিশোর। সেজন্যেই তো বাদ দিতে পারছি না। আমাদের বয়েসী একটা ছেলে মহাবিপদের মধ্যে রয়েছে। রকি বীচেই কোথাও আছে সে। আমাদের কাজ তাকে সাহায্য করা।
কেন, দুনিয়ার সব মানুষকে সাহায্যের দায়িত্ব কি শুধু আমাদেরই? গজগজ করল মুসা।
না। তবে অন্তত এই একটি কেসে পিছিয়ে আসতে পারছি না আমরা। আঘাতটা আমার ওপরও এসেছিল। মারাও পড়তে পারতাম। ওই ছেলেটারও একই অবস্থা হতে পারে। ওকে সাহায্য করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। ভুল করেই হোক আর যেভাবেই হোক, আমাকে কিডন্যাপ করা না হলে হয়ত এতে জড়াতাম না। বক্তৃতার ঢঙে কথাগুলো বলে হ্যানসনের দিকে ফিরল কিশোর। বাড়ি যেতে হবে। আপনারও ডিউটির সময় শেষ হয়ে এল।