বুটের ছাপগুলো পরীক্ষা করল কিশোর। ছাপগুলো তেমন দাবেনি। স্যার, ওর হাতে কিছু ছিল? দেখেছেন?
না, ছিল না। হাত খালি। গুপ্তধনগুলো নিশ্চয় গাড়িতে রেখে কিছু নিতে ফিরে এসেছিল। আফসোস করলেন, গেছে, পালিয়েছে। আর ধরা যাবে না।
হ্যাঁ-না কিছু বলল না কিশোর। আবার স্টেশন ওয়াগনের কাছে ফিরে আসতে আসতে ঝট করে মাথা তুলল। ডিনো কোথায়?
ডিনো? এড বলল। সারা সকালই দেখিনি। থাকে না কোনদিনই। মর্নিং ওয়াকে যায়।
ঝিক করে উঠল কিশোরের চোখ। এড, মাত্র একবছর হল ও এসেছে। কিভাবে এল?
কিভাবে?…জাস্ট চলে এল। স্কটল্যাণ্ডে আমাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে। আমাদের পুরানো বাড়ির সবাইকে চেনে ও, পরিবারের সব কথা জানে।
ওরকম যে কেউ জেনে নিতে পারে, মুসা বলল। কিশোর, টিক বানাউয়ের সঙ্গে কাজ করছে না তো ডিনো? নাকি সে-ই টিক, ছদ্মবেশে রয়েছে?
লম্বা-চওড়া তো একই রকম, থাকতে অসুবিধে নেই। তাছাড়া, গোড়া থেকেই গুপ্তধন খোঁজায়, বাধা দিয়েছে আমাদের। দুবার আমাদের কাছ থেকে জার্নাল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে টিক, দুবারই তখন লজে অনুপস্থিত ছিল ডিনো। ভূতুড়ে শহরেও টিক বানাউ পালিয়ে যাওয়ার পর পরই এসে হাজির হয়েছিল সে।
আড়তে আমাদের নিয়ে গিয়েছিল, রবিন বলল। কাজেই জানা ছিল আমরা কোথায় গেছি। ড্যানিয়েলদের ওখানে যা যা জেনে এসেছি, ও শুনেছে আমাদের মুখে। আমাদের ছাউনিতে আটকে রেখে ফিরে এসে স্মোকহাউসটা ভাঙা সহজ ছিল তার জন্যে। তখনও জানত না সে, কোন ধরনের পাথর কিনেছিলেন বাওরাড।
কিন্তু ছাউনিতে তো শুধু নোবলকে দেখলাম, প্রফেসর বললেন।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কিন্তু নোবল দরজার তালা খোলার চেষ্টা করেছে প্রথমে। সে-ই জানালা আটকে থাকলে দরজা খুলতে যাবে কেন? তার জানাই থাকার কথা দরজা বন্ধ। আর…। কি যেন ভাবল গোয়েন্দাপ্রধান। বন্ধুদের দিকে তাকাল। লজের ছাউনিতে আগুন লাগার সময় কি কাউকে পালাতে দেখেছি আমরা?
পরস্পরের দিকে তাকাল রবিন, মুসা আর এড। কেউ দেখেনি।
আমিও দেখিনি, কিশোর বলল। আমরা ছুটে গেছি, কারণ, ডিনো আমাদের বলেছে সে চোর দেখেছে। কিন্তু সত্যি কি দেখেছে ডিনো?
তুমি কি বলতে চাইছ ডিনোই আগুন লাগিয়েছে? রবিন জিজ্ঞেস করল। টিককে দেখেছে বলে সন্দেহমুক্ত হতে চেয়েছে? কারণ সে নিজেই টিক বানাউ বলে?
এড মনে করিয়ে দিল, প্রফেসরও তো একটা লোককে দৌড়ে যেতে দেখেছেন।
এবং লোকটা নোবল, বলল কিশোর। স্যার, সত্যি কি নোবলকেই দেখেছিলেন? নাকি ভুল করে বানাউকে নোবল বলেছেন?
হতেও পারে, ধীরে ধীরে বললেন প্রফেসর। সারাক্ষণই নোবলের কথা ভাবছিলাম, তাছাড়া তাড়াহুড়া, উত্তেজনা, ভুল হতেই পারে মানুষের। ডিনো বলেছে, টিককে দেখেছে। আমার মনে হয়েছে, টিক নয়, নোবল। নী-হে, এখনও মনে হচ্ছে আমার, নোবলকেই দেখেছি।
ডিনোই চোর, বলে উঠল মুসা। ডিনোই তুলে নিয়ে গেছে…।
বৃষ্টির মধ্যে গর্জে উঠল একটা কণ্ঠ, কি নিয়ে গেছে ডিনো? রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওদের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছে স্কটসম্যান।
আ-আপনি! ঢোক গিলল কিশোর। এতই চমকে গিয়েছে, স্টেশন ওয়াগনের হঙ-এ ভর দিয়ে নিজেকে স্থির রাখতে হল। হাত থেকে পড়ে গেল টর্চ। তোলার জন্যে ঝুঁকল।
বোরিস, আদেশ দিলেন প্রফেসর, ধর ব্যাটাকে!
সোজা হল কিশোর। চৌখে অদ্ভুত দৃষ্টি। বিস্মিত। আবার ভর দিল প্রফেসরের গাড়িতে।
না, বোরিসভাই, বলল সে। ধরার দরকার নেই। আমার ভুল হয়েছে।
২১
কিশোরের দিকে তাকিয়ে দ্বিধা করছে বোরিস।
ওর কাছে থাক, বললেন প্রফেসর। খবরদার, যেন পালাতে না পারে। …কিশোর, কি ভুল করেছ? ভালই তো যুক্তি দেখাচ্ছিলে, ডিনো চোর।
আড়তে ও-ই আমাদের আটকেছিল, কিশোর, মুসা জোর দিয়ে বলল।
ছাউনিতে আগুন দিয়েছে। স্মোকহাউস গুড়িয়েছে, রবিন বলল।
ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ডিনো। কী? তোমরা আমাকে…।
খপ করে ডিনোর হাত চেপে ধরল বোরিস। নড়বে না।
ছাউনি পুড়িয়েছে, তোমাদেরকে আড়তের ছাউনিতে আটকেছে, স্মোকহাউসে খুঁজেছে, গুপ্তধন খুঁজতে আমাদের বাধা দিয়েছে, সবই ঠিক। মাথা নাড়ল কিশোর, কিন্তু সে টিক বানাউ নয়। গুপ্তধনও পায়নি।
তুমি না বললে সব কিছুর মূলে টিক আর নোবল? প্রফেসর বললেন।
টিক বানাউয়ের কথা বলতে পারেন, মাথা কাত করল কিশোর। কিন্তু নোবল নয়। গুপ্তধন চায়নি সে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্যই করেছে। চুরি করে হেডকোয়ার্টারে ঢুকেছিল জার্নাল নিয়ে গিয়ে আমাদের থামানোর জন্যে নয়, ওটার ছবি তুলতে। এটা ঠিক, টিক আর নোবলকে কাছাকাছি থাকতে দেখেছি আমরা। থাকবেই। কারণ টিক আর আমাদেরকে অনুসরণ করেছে নোবল। সান্তা বারবারায় আমাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাকে বিশ্বাস করিনি, পাত্তা দিইনি, বরং পুলিশের ভয় দেখিয়েছি। এখন বোঝা যাচ্ছে, সেই ছেলেটাকে বোরিসের কাছে সে-ই পাঠিয়েছিল, আমরা বিপদে পড়েছি একথা জানাতে। আড়তে গিয়েছিল রবিন আর মুসাকে মুক্ত করতে।
তাহলে কি টিক বানাউ একা? মুসার প্রশ্ন।
হ্যাঁ, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর।
তোমার কথার মাথামুণ্ড কিছুই বুঝছি না, এড বলল।
টিক বানাউ লোকটা আজব। বোঝাতে চেয়েছে সে বাইরে থেকে এসেছে, এই এলাকায় নতুন, অথচ কাজেকর্মে বোঝা গেছে প্রায় সব কিছুই চেনে সে। রবিন হিসটোরিক্যাল সোসাইটি থেকে ফেরার পর পরই স্যালভিজ ইয়ার্ডে উদয় হয়েছে টিক। আমরা যেদিন ক্যাবরিলো আইল্যাণ্ডে গেছি, সেদিন হানা দিয়েছে সোসাইটিতে। কেন? পুরানো রেকর্ড জানতে, সান-প্রেস অফিসে না গিয়ে, সরাসরি চলে গেছে আলফ্রেড পেরিংটনের বাড়িতে। লেখকের খবর জানল কিভাবে?