- বইয়ের নামঃ ডেড ম্যানস ফলি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
ডেড ম্যানস ফলি
১. ফোনটা ধরল মিস লেমন
ফোনটা ধরল মিস লেমন, পোয়াবোর যোগ্য সেক্রেটারি। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছিল তখন এরকুল পোয়ারো। মিস লেমন রিসিভারে হাত চাপা দিয়ে নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা করেল পোয়ারোকে, আপনি কি ধরবেন ন্যাসেকম্বডেভন থেকে আপনার ব্যক্তিগত কল।
ভ্রু কুঁচকে উঠল পোয়ারোর। অবশ্য তার কাছে জায়গাটা এমন কিছু নয়। সাবধানে বলল পোয়রো, জিজ্ঞাসা কর কে ফোন করছেন।
সে পোয়ারোর দিকে একটু পরে তাকিয়ে বলল–এরিয়াডন অলিভার।
এরকুল পোয়াবোর মনে পড়ল একটি স্মৃতি..বাতাসে ভেসে যাওয়া ধূসর কেশ একটা ঈগলের প্রোফাইল–সে রিসিভারটা নিজের হাতে তুলে নিল উঠে এসে।
-হ্যাঁ, আমি কথা বলছি, এরকুল পোয়ারো।
আপনিই যে মিঃ পোয়ারো এটা ঠিক তো? মিসেস অলিভার আমি, আমাকে আপনার মনে আছে কিনা জানি না।
ম্যাডাম, আপনাকে নিশ্চয়ই মনে আছে।
আপনাকে কি কেউ ভুলতে পারে। পোয়ারো উত্তর দিলো। তারপর জানতে চাইল, আমার সঙ্গে কি আপনার কিছু দরকার আছে? মিসেস অলিভার বলল, এখনই দরকার, আপনি প্লেনে আসতে পারবেন?
দুঃখিত আমি কেমন যেন অসুস্থতা বোধ করি প্লেনে চড়লে-বলল পোয়ারো।
হা আমারও এরকম হয়। মিসেস অলিভার বলল, অতএব আপনি বরং ট্রেনেই আসুন। বেলা বারোটায় ট্রেন প্যাডিংটন থেকে ন্যাসেকম্ব স্টেশনে। আপনার জন্য গাড়ি অথবা চালকসহ ট্যাক্সি থাকবে স্টেশনে। ন্যাসে হাউস-এ আসবেন সেখান থেকে।
পোয়ারো জানতে চাইল, ব্যাপারটা কি এবং আমাকে আপনার কি জন্য দরকার, সেটা তো বলবেন।
এমন বিশ্রী জায়গায় টেলিফোনটা রাখা আছে, মিসেস অলিভার বলল, সবাই যাতায়াত করছে, হলের মধ্যে দিয়ে, সেজন্য ভালো করে শোনাও যাচ্ছে না। তবে আপনাকে আশা করছি আমি। সবাই খুব খুশী হবে। গুডবাই।
পোয়ারো টেলিফোনটা নামিয়ে রাখতেই, মিস লেমন জিজ্ঞাসা করল, এই ভদ্রমহিলা কে স্যার?
পোয়ারো বলল, মিসেস অলিভার, একজন গোয়েন্দা ঔপন্যাসিক। তুমি হয়তো একা বসে থাকবে–এখনি তিনি আমাকে যেতে বললেন ডেভনশায়ারে, আজকেই। চমকে একপলকে সে ঘড়ির দিকে তাকাল–এগারোটা পঁয়ত্রিশ।
একজন যাত্রীই মাত্র অবতরণ করল ন্যাসেকম্ব স্টেশনের ট্রেন থেকে, তিনি হলেন এরকুল পোয়ারো।
অনেকগুলো সেলুন দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে, স্টেশনের বাইরে এসে সে দেখলো, এগিয়ে এলো তার দিকে ইউনিফর্ম পরিহিত একজন সোফার। বিনয়ের সঙ্গে সে জানতে চাইলো– আপনিই কি মঁসিয়ে পোয়ারো?
সোফার পোয়ারোর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল। তারা শহরতলির পথে এসে নামল স্টেশন থেকে ওভারব্রিজ পেরিয়ে। পোয়ারো অভিভূত হল সামনে সুন্দর একটা নদী আর পাহাড়ের ঘেরা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে। সোফার একটা ঝোঁপের সামনে গাড়ি থামাল।
সোফার বলল, এইটা হেলম নদী স্যার, কাছেই ডারমুর। প্রশংসা করার মতো সুন্দর জায়গা বটে, অস্ফুট স্বরে পোয়ারো বলল, অপূর্ব! যেন ডেভনে সে পোয়ারোর গাইড-এর ভূমিকা নিয়েছে এমন করে সোফার তাকে বোঝাচ্ছিল, ইয়ুথ হোস্টেলটা স্যার আমাদের বাড়ির পাশেই। মিঃ ফ্লেচারের জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে, হুডাইন পার্ক। এখানে গ্রীষ্মের সময় খুব ভীড় হয়। এখানে কয়েক রাত্রির বেশি থাকতে দেওয়া হয় না। এখানে নারী-পুরুষ সকলেই আসে, বেশিরভাগ বিদেশী।
পোয়ারো আনমনে মাথা নাড়ল, সে অবাক হয়নি মোটেই এখানে প্রথম আসার জন্য, কিন্তু তার চক্ষু পীড়ার উপক্রম হলো পিছনের দুই মেয়েকে দেখে। চোখ তার বন্ধ হয়ে গেল যন্ত্রণায়। যুবতীরা কেন যে এধরনের পোশাক পরে থাকে? এককভাবে কি একেবারেই আকর্ষণীয় নয়। ঐ রক্তবর্ণের উরুগুলো। সে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো, মনে হচ্ছে ওরা বোঝার ভারে আক্রান্ত।
সত্যি স্যার, এখান থেকে আরও দুমাইল দূরে হুডাইন পার্ক, যদি আপনার আপত্তি না থাকে আমরা ওদের লিফট দিতে পারি, সোফার জিজ্ঞাসা করল।
বিনয়ের সঙ্গে বললো পোয়ারো-নিশ্চয়ই দিতে পারি। মেয়ে দুটি অত্যন্ত ভারী ঝোলার ভারে নুইয়ে পড়েছিল। তারা জানতো না যে পুরুষদের আকর্ষণ করতে হলে কীরকম পোশাক পরতে হয়। সোফার গাড়ি থামাল মেয়ে দুটির সামনে এসে। পথ চলার ক্লান্তি দূর হওয়ার আশায় তাদের ক্লান্ত মুখে আশ্বস্ততার ছায়া ফুটে উঠল। মেয়ে দুটি উঠে এলো গাড়িতে। পোয়ারো সেই মাত্র দরজা খুলে দিল। একটি মেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, আপনার অশেষ মহানুভবতা। দেখতে ভালো মেয়েটি, বিদেশীদের টান তার কণ্ঠস্বরে। পথটা অনেক দূর মনে হয়। অপর মেয়েটি কথায় ব্যক্ত করতে না পারলেও বারবার মাথা নেড়ে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে ভুলল না পোয়ারোর দয়া প্রদর্শনের জন্য। বেশি প্রাণবন্ত ও হাসিখুশী দেখাচ্ছিল যে মেয়েটিকে, দেখতে ভালো তাকেই।
সুদর্শনা বলল, ইংল্যান্ড থেকে আসছি দু-সপ্তাহের ছুটিতে। আমার খুব প্রিয় জায়গা ইংল্যন্ডে। আমি দেখতে এসেছি এখানকার বিখ্যাত বিউটি স্পটগুলি। আগামীকাল যাব প্লিমাউথে– এখানকার নদী পেরিয়ে নতুন বিশ্বের আবিষ্কার দেখতে।
অপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, সিনোরিনা, তুমি? তার কোঁকড়ানো চুলের মাথা বেঁকিয়ে সে কেবল হাসল। ডাচ মেয়েটি বলল, ও বিশেষ ইংরাজি বলতে পারে না। আমরা একটু আধটু ফরাসি বলতে পারি, এইভাবেই আমরা ট্রেনে কথাবার্তা চালিয়েছি। ও আসছে মিলান-এর কাছ থেকে। ওর এক আত্মীয়ার বিয়ে হয়েছে ইংল্যান্ডের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। এক্সেটারে ভদ্রলোকের একটা মুদী দোকান আছে। ও, ওর এক বন্ধুর সঙ্গে এক্সেটারে এসেছিল গতকাল। পেটের গোলমালে অসুস্থ হয়ে পড়ে বন্ধুটি, তাই সেখানেই আছে সে এখন।