আমিও জানি না, কিশোর বলল।
বড় কিছু নিশ্চয়, এড বলল।
নূস টিম্বার আর শ্রমিক দিয়ে কি করল বাওরাড? প্রফেসরের প্রশ্ন। কোথায় গেল এত কাঠ?।
আর পাথরগুলোই বা কোথায়? রবিনেরও প্রশ্ন। দশটা পাথর ছোট জিনিস না যে সহজে লুকিয়ে ফেলবে।
এইই! কি মনে হতে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। খনির শ্রমিকেরা সব চেয়ে ভাল কি পারে? কিশোর, তুমিই বল, সহজ ব্যাখ্যাগুলোর ওপর জোর দিতে। ওরা সব চেয়ে ভাল পারে মাটি খুঁড়তে। বড় গর্ত খুঁড়ে, পাথরগুলোর ভার রাখার জন্যে টিম্বার ব্যবহার করেছে হয়ত ওরা। হয়ত মাটির তলার কোন ঘরে।
পায়চারি করছিলেন প্রফেসর, মুসার কথায় থেমে গেলেন। গর্ত? মাটির তলার ঘরে?
কেন নয়? জোর দিয়ে বলল মুসা। মাটির তলার ঘরই গুপ্তধন লুকানোর আসল জায়গা। হয়ত ডাইক কোম্পানি থেকে জাহাজের লণ্ঠন কিনে এনেছিল বাওরাড ডাই। অন্ধকার ঘরে কাজ করেছে তো, বেশি আলোর প্রয়োজন ছিল।
তাহলে ক্যাবরিলো আইল্যাণ্ড থেকে কি এনেছিলেন? ভুরু নাচাল কিশোর। তাছাড়া, মাটির তলার ঘরে রাখলে নোরিয়ার জন্যে চমক হবে না, নতুন কোন ব্যবস্থা নয় ওটা। আগে আরও অনেকেই মাটির তলার ঘরে গুপ্তধন লুকিয়েছে। নোরিয়ার চমকের ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন বাওরাড, তারপর গুপ্তধন।
আবার পায়চারি শুরু করলেন প্রফেসর। চলে গেলেন জানালার কাছে, ডিনো যেখানে বসেছে। এ-বাড়িতে ওরকম কোন ঘরের কথা জানেন, মিস্টার হ্যাংবার?
না, কাটা জবাব। যত্তোসব।
জানালা দিয়ে পুকুরটার দিকে তাকালেন প্রফেসর, আর কালো গাছগুলোর দিকে। ঘুরলেন হঠাৎ, চোখ উজ্জ্বল। মুসা, ঠিক বলেছ তুমি! স্কটল্যাণ্ডে পাহাড়পর্বতও যেমন আছে, গুহারও অভাব নেই। মিসেস ডাই, চিঠিতে বলা হয়েছে, বাওরাড বাড়িতে কি ভালবাসত মনে করে দেখার জন্যে। যদি
…ছেলেবেলায় গুহার ভেতর খেলার কথা বলে থাকে? প্রফেসরের কথাটা যেন মুখ থেকে কেড়ে নিল কিশোর। সেল নোরিয়ার জানার কথা!
এখানেও হয়ত তেমন একটা গুহা বানিয়েছে, প্রফেসর বললেন। ক্যাবরিলো আইল্যাণ্ড থেকে নিয়ে এসেছে পুরানো স্প্যানিশ আসবাবপত্র আর গালিচা, গুহায় সাজানোর জন্যে।
আর সেই সঙ্গে একটা আয়নাও! যোগ করল রবিন।
জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল প্রফেসর। আমার মনে হয়, এইটাই জবাব,তুড়ি বাজালেন তিনি। কায়দা করে বানিয়েছে গুহা, যাতে গুহামুখটা চোখ এড়িয়ে যায়। আর এড়াতে দেব না। কাল সকালে উঠেই আগে গুহাটা খুঁজে বের করব।
এখনই নয় কেন? মুসা বলল। বাতি তো আছেই।
মাথা নাড়লেন প্রফেসর। যা অন্ধকার, বাতি দিয়ে বের করা যাবে না। তাছাড়া সবাই এখন ক্লান্ত। দিনের ভাল হবে।
হ্যাঁ, মিসেস ডাই বললেন। গুপ্তধন তো পালাচ্ছে না। তাড়াহুড়োর দরকার নেই।
কিন্তু নোবল আর টিক পেছনে লেগে রয়েছে, এড প্রতিবাদ করল। কখন কি করে ফেলে।
রাতে ওরাও কিছু পাবে না, প্রফেসর বললেন।
ছেলেরাও বুঝতে পারছে সেকথা। কিন্তু এত লম্বা একটা রাত অপেক্ষা করা খুব কঠিন, উত্তেজনায় ঘুমই হবে না ওদের।
তাহলে ওই কথাই রইল, তিনি বললেন। কাল সকালে সবাই মিলে খুঁজতে যাব আমরা।
সবারই মধ্যে আমি নেই, দুহাত নাড়ল ডিনো৷ যত্তোসব পাগলামি।
প্রফেসর চলে গেলেন।
তিন গোয়েন্দা আর বোরিস ফিরে চলল রকি বীচে।
ট্রাকের পেছনে উঠেছে ছেলেরা। কিছুক্ষণ চলল নীরব যাত্রা। তারপর কিশোর জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, বল তো, গুহার নির্দেশক কি দিয়ে দিতে পারে?
বড় পাথর, মুসা বলল।
কিংবা গাছ, বলল রবিন। ডাইদের স্কটল্যাণ্ডের বাড়িতে আছে, তেমন দেখতে কোন গাছ।
হ্যাঁ, তা হতে পারে। আয়না! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। পাথরে লাগানো থাকতে পারে, গাছে ঝোলানো থাকতে পারে। কোন বিশেষ জায়গায় দাঁড়ালে হয়ত নোরিয়ার চোখে পড়ত।
বাড়ির জানালায় থেকে নিজেকেই প্রশ্ন করল কিশোর। নাকি লজের টাওয়ারের মাথায় দাঁড়িয়ে?
জবাব মিলল না। – রকি বীচে ঢুকল ট্রাক।
একটা কথা মেলাতে পারছি না, আনমনে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। লকের গোপন রহস্যের কথা ভাবতে বলেছেন বাওরাড। গোপন রহস্য মানে সেই ভূত, যে লকে শত্রু ঢোকে কিনা নজর রাখে। এর সঙ্গে গুহার মিল পাচ্ছি না। গুহাটা পেলেই হয়ত মানে বোেঝা যাবে, আশা করল মুসা।
হয়ত।
রবিন আর মুসাকে যার যার বাড়িতে দিয়ে এল বোরিস। তারপর ঢুকল স্যালভিজ ইয়ার্ডে।
এত বেশি উত্তেজিত হয়ে আছে কিশোর, ঘুম নেই চোখে। শেষে হলঘরে চাচা-চাচীর কাছে এসে বসল। গরম চকলেট খেতে খেতে জানাল, সারাদিন কি কি করেছে, কোথায় কোথায় গেছে। চাচা কোন মন্তব্য করলেন না। চাচী বললেন, হ্যাঁ, গুপ্তধনের সঙ্গে গুহার মিলই বেশি।
বিছানায় শুয়েও ঘুম এল না তার। উঠে গিয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখল ক্রিস্টমাসের আলো।
ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে গেল কিশোর। তড়াক করে উঠে বসল বিছানায়। চোখ মিটমিট করল কয়েকবার। জানালায় আলো নেই, বাইরে অন্ধকার। কিন্তু ঘড়িতে দেখা যাচ্ছে, সকাল আটটা। সকাল হয়েছে ঠিকই, বৃষ্টির জন্যে আলো ফুটতে পারছে না ঠিকমত। খুব জোরেসোরে নেমেছে।
কিন্তু বৃষ্টির কথা ভাবছে না কিশোর।
বিছানায় বসেই তাকিয়ে রইল দেয়ালের দিকে। ধাধার রহস্য ভেদ করে ফেলেছে সে।
১৯
কাপড় পরে মুসা আর রবিনকে ফোন করল কিশোর। পনের মিনিটের মধ্যে ইয়ার্ডে পৌঁছতে বলল। আমি একটা গাধা! বিড়বিড় করল সে। আস্ত গর্দভ! অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল। এডকে ফোন করল। সে ধরতেই বলল, এড? গুপ্তধন কোথায়, জানি। গাইতি, বেলচা আর রেনকোট নিয়ে তৈরি থাক। আমরা আসছি।