পড়েছি, জানালো সে, তবে বেশি দিন না। পাগল সংঘে আমি বোধহয় খুব একটা চোখে পড়ার মতো চরিত্র ছিলাম না। লোকে শীঘ্রি ভুলে গেল আমার কথা।
এরপর এলো কিশোরের জবাব দেয়ার পালা।
তুমি কি করছো? বেকার জিজ্ঞেস করলো।
শূন্য দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো কিশোর, যেন প্রশ্নটা বুঝতে পারছি না। বোকার মতো কললো, কই, কিছুই তো করছি না। চুপচাপ বসে রয়েছি।
এখানে বসে থাকার কথা বলছি না। জীবনে কি করছো?
র-র-রকি বীচে বাস করছি।
ওখানে থেকে কি করো?
প্রশ্নটা যেন খুব অবাক করলো কিশোরকে। মাথা চুলকালো, চেয়ারে নড়েচড়ে বসলো। অবশেষে স্বীকার করলো বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে স-স-স-সৈকতে সা-সঁ-আঁ তার কাটতে যায়।
ইস্কুলে যাও না? কোনো কিছুই যেন হ্যারিস বেকারে হাসিতে চির ধরাতে পারে। তবে গলায় সামান্য অধৈর্য ভাব ফুটলো।
গ-গ-গরমের ছুটিতে যাই না।
ভবিষ্যতে কিশোরের কি করার ইচ্ছে জিজ্ঞেস করে বিপদে পড়তে চাইলো না বেকার। আর কিছু আপাতত জিজ্ঞেস করলো না তাকে।
তবে এখনও নির্দিষ্ট সময় শেষ হতে বারো মিনিট বাকি। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসলো বেকার। এখন ওদের অতীত সম্পর্কে আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো, ঘোষণা করলো সে। আমার বিশ্বাস, পাগল সংঘে অভিনয় করার সময়কার মজার কোনো ঘটনার কথা ওরা বলতে পারবে।
আবার নেলিকে দিয়ে শুরু হলো।
আমার শুধু মনে আছে নাপিতের কথা, নেলি বললো। এতো জোরে ব্রাশ ঘষতো আমার মাথায়, মনে হতো চামড়া ছিলে ফেলবে।
মড়ার খুলির মনে পড়লো সম্মানী দেয়ার দিনের কথা। প্রতি শুক্রবার রাতে পেতাম আমরা। চেক নয়, নগদ টাকা। বাদামী খামে ভরা থাকতো, লাল সুতো দিয়ে বাঁধা।
নিশ্চয়ই সেটা তোমার জন্যে খুব আনন্দের দিন ছিলো? বেকার বললো হেসে।
মোটেও না। আনন্দের ছিলো আমার বাবার জন্যে। সারা হপ্তায় ওই একবারই স্টুডিওতে আসতো, আমার কাছ থেকে খামটা কেড়ে নেয়ার জন্যে।
ভারিপদর মনে পড়লো বড় জুতোর কথা। এতে বড় জুতো পরতে দেয়া হতো আমাকে, ঢলঢল করতো। পায়ে আটকে রাখার জন্যে ভেতরে কাপড় পুরে দিতে ওরা। একজোড়া জুতো এখনও আছে, এখনও পায়ে ঢিলে হয়।
শিকারী কুকুরের মনে পড়লো, যেদিন স্টুডিওতে কোনো কাজ থাকতো না, সেদিন তার বাবা তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতেন সৈকতে। কিংবা খেলতেন ছেলের সঙ্গে। তার যদি সেদিন কোনো কাজও থাকতো, সেটা করতেন না, ছুটি নিতেন। শেষের দিকে তো দিন গুনতে আরম্ভ করেছিলাম আমরা দুজনেই, কবে অভিনয়ের কন্ট্রাক্ট শেষ হবে, বললো সে।
কিশোর কিছুই মনে করতে পারলো না। বললো, আমি তখন খুব বা-বাবাবাচ্চা। তোতলাতে তোতলাতে আরও জানালো, তার স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল, কিছুই মনে রাখতে পারে না। কয়েক হপ্তা আগে টিভিতে পাগল সংঘ দেখানোর আগে নাকি জানতোই না সে, কখনও তার নাম মোটুরাম ছিলো। তা-ও টেলিভিশনে সে দেখেনি। কে জানি একজন এসে-কে সেটাও মনে করতে পারছে না-তাকে বললো, তার নাম মো-মো-মো মোটুরাম।
শুনে নিশ্চয় অবাক লেগেছিলো তোমার, শূন্য হাসি হেসে বললো বেকার। হঠাৎ এক বিস্ময়কর তথ্য উদঘাটিত হওয়ায়?
বিস্ময়কর তথ্য উদ্ঘাটিত বলে একটা নাটকীয় আবহ আনতে চেয়েছিলো কোর, কিন্তু বলেই বুঝলো মস্ত ভুল করে ফেলছে। শুব্দগুলোর মানে যখন বোঝেতে পারলো সে অনেক চেষ্টার পর, তখন আর মাত্র তিন মিনিট বাকি আছে আলোচনা শেষ হতে।
উঠে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার দিকে তাকালো বেকার।
এখন সবাইকে একটা সারপ্রাইজ দেবো, চওড়া হাসি হাসলো সে। আমাদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে পাগলদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রত্যেককে একটা করে সুতনির উপহার দেবো, দেখে এই অনুষ্ঠানের কথা মনে করার জন্যে। অ্যানি, নিয়ে এসো প্লীজ।
মাথা সামান্য কাত করে তাকালো সে। রান্নাঘরের দরজা দিয়ে ঢুকলো একটা সুন্দরী মেয়ে, মাথায় লাল চুল, পরনে খাটো স্কার্ট। হাতে একটা চারকোণা বড় বাক্স, সোনালি কাগজে মোড়া।
বাক্সের ডালাতোলার আগে এক সেকেন্ড দ্বিধা করলো বেকার। তোমাদের প্রত্যেককে একটা করে খুব দামী উপহার দেয়া হবে, তার সব চেয়ে উষ্ণ আর চওড়া হাসিটা উপহার দিয়ে নিলো আগে সবাইকে। সারা জীবন ওটাকে রত্ন মনে করে রেখে দিতে পারবে তোমরা।
উপহারটা কী, বলার আগে আবার এক সেকেন্ডের জন্যে থামলো বেকার। তারপর বললো, রূপার একটা করে চমৎকার কাপ, তার ওপর তোমাদের নাম খোদাই করা, অবশ্যই পাগল সংঘের দেয়া নাম। যখনই দেখবে, মনে মনে হাসবে, আর মনে করবে একসময় কি প্রচণ্ড খ্যাতিই না পেয়েছিলো সিরিজটা।
বাক্সটা অ্যানির হাতে রেখেই ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো বেকার। প্রায় থাবা দিয়ে ছিনিয়ে নিলো বাক্সটা। এপাশ-ওপাশ নাড়া দিলো জোরে জোরে। হাত থেকে পড়ে গেল ওটা, মাটিতে পড়ে কাত হয়ে খোলা মুখ করে রইলো ক্যমেরার দিকে।
শূন্য বাক্স। দামী রূপার কাজ তো দূরের কথা, কোনো জিনিসই নেই বাক্সের ভেতরে।
বেকারের মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো কিশোর। লোকটার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পর এই প্রথম দেখতে পেলো সে, তার মুখে হাসি নেই।
হাসছে না হ্যারিস বেকার।
৪
শুরু হয়নি এখনও, রবিন বললো।
চ্যানেল ঠিক আছে তো? মুসার প্রশ্ন।
মাথা ঝাঁকালো রবিন। পৌনে পাঁচটায় দেখানোর কথা, খবরের আগে। কাগজে তো তাই লিখেছে। কিন্তু এখন তো দেখছি পুরনো এক ওয়েস্টান হবি।