ঝট করে পরস্পরের দিকে তাকালো রবিন আর কিশোর। এর আগের বার যখন এসেছিলো, ওদেরকে গিনিপিগ আর শামুক খাওয়ানোর জন্যে অনেক জোর-জবরদস্তি করেছিলো কিম। কাজেই এখানে দাওয়াত খাওয়ার কথা শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দুজনে।
কেন, বিশেষ করে আমাকে কেন? মুসাও অস্বস্তি বোধ করছে।
কারণ, তোমাকে খুব পছন্দ করে কিম, মুচকি হাসলেন লেখক। যা দেয় তা-ই মুখ বুজে খেয়ে ফেলো তো। বলে, রান্না করে যদি কাউকে মন মতো খাওয়াতেই না পারলাম তাহলে শান্তি কোথায়?
কেশে উঠলো মুসা। স্যার, একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না। কি খাওয়াবে না খাওয়াবে সেটা আপনি বলে দেন না কেন? আপনি পছন্দ করে দিলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়।
আমি জানতাম এক সময় না একসময় তোমরা একথা কলবে আমাকে। চেয়ারের পাশে রাখা লাঠিটা তুলে নিয়ে তাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন লেখক, পা এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। ঝাল মাংসের পুর দেয়া হ্যামবার্গার খাওয়ার জন্যে আমার প্রাণটা কি কম আঁইঢাই করে? পারি না, বুঝলে, একদম পারি না। জোর করে কিছু বলতে গেলেই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় কিম।
ও-কি, কোথায় যাচ্ছেন? ভয় পেয়ে গেছে মুসা।
বলে আসি, অন্তত প্লেন হ্যামবার্গার যাতে দেয়, তবে বিনিময়ে তার কথা তোমাকে শুনতে হবে, মুসা।
রান্নাঘর থেকে হাসিমুখে ফিরে এলেন সাইমন। হ্যামবার্গার দেবে। আবার বসলেন চেয়ারে। নীরবে ভাবলেন কিছুক্ষণ। তারপর মুখ তুলে বললেন, তোমাদের কেসের গল্প সবটাই শুনলাম। একটা ব্যাপার পরিষ্কার হচ্ছেনা এখনও।
কী? সামনে ঝুঁকলো কিশোর।
সাইনাসকে সন্দেহ করলে কেন?
সন্দেহটা জাগিয়েছে ভারিপদ। প্রথমে করিনি, কিন্তু যতোই ভাবলাম, ততোই ধারণাটা দৃঢ় হতে লাগলো যে কেউ না কেউ তাকে মুভি স্টুডিওতে পাঠিয়েছে। কোনো কাজে। সেটা দুজন লোক হতে পারে। হ্যারিস বেকার, কিংবা রাফায়েল সাইনাস। হ্যারিস বেকারের, পাঠানোর কোনো কারণ নেই, সে বিজ্ঞাপন ম্যানেজার, চিঠি বা অন্য জিনিস আনা-নেয়ার জন্যে অফিসের লোকই আছে তার। বাকি থাকলেন সাইনাস। ভাবলাম, তিনিই বা কি আনতে পাঠাবেন? যতোই ভাবলাম, সন্দেহ ততোই বাড়তে লাগলো। তাছাড়া কিছুকিছু সূত্রও মিলে যেতে লাগলো তার আচরণের সঙ্গে।
হু্ বুঝেছি, মাথা ঝাঁকালেন প্রাক্তন গোয়েন্দা। তোমাকে যেমন আগে ডেকে এনেছে টিভি স্টেশনে, তেমনি ভারিপদকেও এনেছেন। তাকে একটা চিঠি দিয়ে অযথা পাঠিয়েছেন স্টুডিওর অফিসে, আর তোমাকে বলেছেন তাকে সন্দেহ করেন। লিফটে করে উঠে সাইনাসের অফিসেই ঢুকেছিলো ভারিপদ, খাম নিয়ে বেরিয়ে এসে স্টুডিওতে রওনা হলো। তুমি পিছু নিলে।
টেলিফোনের তার-টার ছিঁড়ে আগেই সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে রেখে এসেছিলেন সাইনাস। তুমি গিয়ে নয় নম্বর স্টেজে ঢুকতেই তালা লাগিয়ে দিলো মড়ার খুলি। তাকে ওকাজ করতে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন পরিচালক। তোমাকে আটকাতে চেয়েছিলেন, যাতে কুইজ শো-তে অংশ নিয়ে তুমি মড়ার খুলির পুরস্কার জেতায় বাধা হয়ে না দাঁড়াও।
হুঁ, সব বুঝলাম। বড় বেশি খুঁতখুঁতে মন তোমার, কিশোর পাশা, এটা ভাবতেও পারেননি বেচারা পরিচালক। রান্নাঘরের দিক থেকে আসা পায়ের শব্দ শুনে ঝট করে সোজা হলেন সাইমন। ফিসফিসিয়ে বললেন, ওই যে, আসছে।
টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে, খর দিলো কিম।
ভয়ে ভয়ে গিয়ে বসলো সবাই। তবে গন্ধ ভালোই আসছে। একটা প্লেটের ঢাকনা তুলে দেখালো কিম। ইয়া বড় বড় চারটে হ্যামবার্গার। ডেতরে গরুর মাংসের কিমা। আর পেঁয়াজের কুঁচি। লোভনীয় গন্ধ বেরোচ্ছে ওগুলো থেকে।
একটা নিয়ে কামড় বসালো মুসা।
ভালো না? জিজ্ঞেস করলো কিম।
চমৎকার। ফার্স্ট ক্লাস।
গুড। খুব খুশি হলো বাবুর্চি। বললো, এবার আমার একটা উপকার করতে হবে।
নিশ্চয়ই ক… বলেই মাঝপথে কামড় থামিয়ে কিমের দিকে তাকালো গোয়েন্দা-সহকারী। কি-ক্কি উপকার।
কিছু না, আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাত নাড়লো কিম। এই একটু চেখে দেখতে হবে আরকি। একটা প্রাচীন খাবারের উল্লেখ দেখলাম একটা চীনা খাবারের বইয়ে। লোভ সামলাতে না পেরে বেঁধেই ফেললো। আর কেউ তো খেতে জানে না, খেতে বললেও রাজি হয় না। তাই তোমাকে অনুরোধ করছি। দয়া করে যদি…।
তা জিনিসটা কি?
না, তেমন কিছু না। খুব ভালো খাবার বলেই মনে হয় আমার। তুমি যদি খেয়ে ভালো বলো, আমিও খাবোর হাজার হোক, প্রোটিন যখন বেশি…
অতো ভণিতা করছো কেন? দেখি, ঢাকনা তোলো।
ঢাকনা তুললো কিম। মাংস ভাজি। গন্ধটা বেশ চমৎকার।
হাসি ফুটলো মুসার মুখে। তা এর জন্যে এতে অনুরোধ? দাও দেখি, খাই। মাংসই তো, কি আর হবে খেলে?, শুয়োরটুয়োর না হলেই হলো। ওটা ভাই খেতে পারবো না, ধর্মে মানা।
না না শুয়োর না, শুয়োর না। এই নাও, প্লেটটা ঠেলে দিলো কিম।
একটুকরো মুখে দিয়ে দেখলো মুসা। চিবাতে চিবাতে মাথা নাড়লো, হুঁ, মন্দ। আরও কয়েক টকুরো খেয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তা কিসের মাংস এটা?
হাসলে কিম। প্লেটটা সরিয়ে নিলো মুসার সামনে থেকে। বললো, থাক, আর খেতে হবে না। বুঝেছি, রান্না ভালো হয়েছে।
কিসের মাংস? আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
তুমি খাবে?
না, আর দরকার নেই, হাত নাড়লো কিশোর। শুধু জিজ্ঞেস করছি, কিসের মাংস?