আবার দুর্বল ভঙ্গিতে দেয়ালে হেলান দিয়ে পঁড়িয়েছে মড়ার খুলি। তাকে দিয়ে কিছু হবে না। দ্রুত গিয়ে নেলির বাঁধন খুলে দিলো তিন গোয়েন্দা।
মাথা ঝাড়া দিয়ে যেন মাথার ভেতরটা পরিষ্কার করে নিতে চাইলো নেলি। হাতের বাঁধনের জায়গা ভললো। মুখের ওপর এসে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে ঢেলে সারালো পেছনে। পা টানটান করে, ঝাড়া দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
উঠে দাঁড়াতে বেশ কষ্ট হলো তার। হাসলো। বেশ একটা মজার কাণ্ড হয়ে গেল, না? আমাদের সেই পুরনো পাগল সংঘ ছবির মতো। শুধু একটা ব্যাপার উষ্টো হয়েছে। ওখানে আমি তোমাকে বাঁচাতাম, কিশোর, আর এখানে তুমি আমাকে বাঁচালে।
১৬
পুরস্কারের টাকা পেয়ে এতো খুশি হয়েছে নেলি, কিশোর বললো, মিস্টার সাইনাস
বা মড়ার খুলি, কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেনি।
এখন সে কলেজে যেতে পারবে, রবিন বললো। যা সে চাইছিল। টাকার জন্যে পারছিলো না এতদিন।
সেপ্টেম্বরেই বার্কেলিতে ভর্তি হবে, মুসা জানালো।
প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে মুখ করে থাকা জানালার সারিওয়ালা, ভিকটর সাইমনের মস্ত লিভিং রুমে বসেছে তিন গোয়েন্দা। মিস্টার সাইমনের অনুরোধেই কপিচুরির কেসের গল্প বলতে ওরা এসেছে এখানে। তিনিই ফোন করেছিলেন হেডকোয়ার্টারে, সাইনাসের মুখে কাপ চুরি যাওয়ার খবর শুনে বেশ আগ্রহী হয়েছিলেন সব কথা জানার জন্যে।
টেবিলের পাশে রাখা একটা লম্বা বীচ-চেয়ারে আরাম করে বসেছেন বিখ্যাত রহস্য-কাহিনী লেখক। তাহলে আবার নিজের জায়গায় ফিরে গেহে নকল মড়ার খুলি? থিয়েটারে অভিনয় করতে?
গেছে, হাত নাড়লো কিশোর, তবে আমার মনে হয় না এবারেও সুবিধে করতে পারবে। বেঁচে থাকার জন্যে এখনও তাকে মোটর মেকানিকের কাজই করতে হবে।
এক মুহূর্ত থেমে বললো গোয়েন্দাপ্রধান, মজার ব্যাপার হলো, মড়ার খুলিকে দেখতে পারতাম না বলে তার ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যেই ওই কুইজ শোতে অংশ নিয়েছিলাম। তাকে এতো বেশি ঘৃণা করতাম, চেয়েছিলাম যেভাইে হোক পরাজিত করবোই। কিন্তু পরে গিয়ে যে মড়ার খুলিকে দেখলাম, তাকে পছন্দই করে ফেললাম। নেলির কোনো ক্ষতি করতে চায়নি সে এ্যাপারে আমি নিশ্চিত। ও শুধু রাফায়েল সাইনাসের কথামতো নেচেছে টাকার লোভে সততটা, তার চেয়ে বেশি বড় অভিনেতা হওয়ার লোভে।
হুঁ, অভিনেতা হওয়ার লোভে কতো লোকে যে কতো কিছু করে বসে, ধীরে মাথা দোলালেন সাইমন। তা রাফায়েল সাইনাস কি করছেন এখন? সেই পুরানো ভাঙা প্রাসাদেই কি ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে অতীতের স্বপ্ন দেখছেন?
না, মুসা বললো। নেলিকে যখন আমরা নামিয়ে নিয়ে আসছিলাম, শুনলাম পাগলের মতো চিৎকার করছেনঃ চুপ, কোনো গোলমাল নয়! লাইট ক্যামেরা। অ্যাকশন! অনেক কষ্টে তাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেছে অ্যালউড হোফার।
সমবেদনা দেখিয়ে মাথা ঝাঁকালেন লেখক। একসময় অনেক বড় পরিচালক ছিলেন তিনি। তাঁর তৈরি অনেক ছবি দেখেছি আমি, ভালো ভালো ছবি। এখনও কি হাসপাতালেই আছেন?
না, কিশোর জানালো, মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনের লোকেরা এসে গেছে। অকসর পাওয়া, অক্ষম সিনেমার লোকদের জন্যে একটা কলোনি বানিয়েছে ওরা, সেখানেই জায়গা দিয়েছে তাকে। আর কিছু না পান, পুরনো বন্ধুদের দেখা সাক্ষাৎ ওখানে পানে সাইনাস, কথা বলে মনের ভার কিছুটা হলেও হালকা করতে পরকে।
যা, তা পব্রকেন। তা হ্যারিস বেকার নিশ্চয় একেবারেই নিরপরাধ? সাইনাস আর মড়ার খুলির পরিকল্পনার কিছুই জানতো না?
না। ওই কুইজ শো-র ব্যবস্থা করে প্রমোশনের আশায় ছিলো বেকার। শো শেষ হলে সব জানার পর সেটা ফাঁস করে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায়নি। তাই মড়ার খুলিকে ছেড়ে দিয়ে গোপন অতে চেয়েছে।
ভারিপদ আর শিকারী কুকুরের কি খবর?
অনেক দিন বেকার থাকার পর ভারিপদ একটা কাজ পেয়ে গেছে। একটা জুতোর কোম্পানি ওই কুইজ শো দেখে তাকে ডেকে নিয়ে গেছে, বিজ্ঞাপনের কাজ করার জন্যে। কাজটা পেয়ে খুব খুশি ডারিপদ। আর শিকারী কুকুর কলেজ শেষ করে আইন পড়বে। অসুবিধেয় পড়া, বেকার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের হয়ে আদালতে লড়াই করবে মুভি স্টুডিও আর টেলিভিশ্ন নেটওয়াকের বিরুদ্ধে। হুট করে যেন আর কাউকে বিদায় করে দিতে না পারে ওরা।
ভালো, খুব ভালো, মন্তব্য করলেন লেখক। রান্নাঘরের দিকে তাকালেন একবার। যেখানে হাড়ি-পাতিল নিয়ে খুটুর-খাটুর করছে তাঁর ভিয়েতনামি বাবুর্চি নিসান জাং কিম। তারপর আবার তিনগোয়েন্দার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, আর অলউড হোফার? তার পরিচয় গোপন আছে তো?
নিশ্চয়ই, মুসা বললো। ওর কথা কাউকে বলিনি আমরা। ছুটি শেষ হলে সেপ্টেম্বরে নিরাপদেই ইস্কুলে ফিরে যেতে পারবে।
ইস্কুলের কথায় আবার রান্নাঘরের দিকে তাকালেন সাইমন। কিমও ইস্কুলে যাবে।
ইস্কুলে যাবে? রবিন বললো। কি পড়বে?
রান্না। আপাতত ফরাসী রান্না। কোন্ কোন্ জিনিস খেলে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে, সে-ভূত নেমেছে মাথা থেকে। নানারকম জটিল রান্নার দিকে ঝুঁকেছে আজকাল। এই যেমন, সাগরের শ্যাওলা দিয়ে মুখরোচক খাবার কি করে তৈরি করা যায়। অবশ্য হজম করতে কিছুটা কষ্টই হচ্ছে আমার। সামনে ঝুঁকলেন তিনি।
তোমরা কিন্তু দুপুরে না খেয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে তুমি, মুসা।