কাল রাতে হলিউড বুলভার থেকে তাকে তুলে নিতে দেখেছি আপনাকে, মুসা বললো। মড়ার খুলি আর নেলি আপনার গাড়িতে উঠছে…।
অসম্ভব, হাসার চেষ্টা করলেন পরিচালক। এখন কোনো গাড়িই নেই আমার। রোলস রয়েসটা গ্যারেজে। আর আমার…।
বাইরের গাড়িটা আমার বিশ্বাস, কিশোর বললো, হ্যারিস বেকারের। কিংবা বিজ্ঞাপন বিভাগের। কুইজ শো পরিচালনার সময়টাতে আপনাকে ব্যবহার করতে দিয়েছে। খানিক আগে আপনাকে চালিয়ে আনতে দেখলাম। কাল রাতে নেলি আর মড়ার খুলিকেও তুলে নিতে দেখেছি।
প্রতিবাদ তো করলেনই না, এবার আর হাসারও চেষ্টা করলেন না সাইনাস। ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে গিয়ে বসে পড়লেন একটা ক্যানভাসের চেয়ারে। বেরিয়ে এলো ক্ষোভ, একটা লিমুজিন পর্যন্ত ওরা ভাড়া করে দেয়নি আমাকে। কুইজ শো পরিচালনার জন্যে যতোটা কম টাকা দেয়া সম্ভব, দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছে ওরা। প্রায় ভিখিরির মতো হাত পেতে বেকারের কাছ থেকে গাড়িটা চেয়ে নিয়েছি কদিন ব্যবহারের জন্যে। কিংবা বলা যায় হুমকি দিয়ে নিয়েছি। যদি গাড়ি না দেয়, তাহলে কুইজ শো পরিচালনা করবো না বলে। পাগল সংঘের পরিচালককে বাদ দিয়ে… থেমে গেলেন আচমকা। হাঁটুর দিকে চোখ। সুতো-ওঠা প্যান্টের একটা সুতো টানছেন আনমনে। নেলিকে আমি কিডন্যাপ করিনি। তুমি ভুল করছে।
প্লীজ, মিস্টার সাইনাস, নরম গলায় অনুরোধ করলো কিশোর, যদি কিছু জানা থাকে আপনার, বলুন। আমরা জানি, নেলি ওই চিঠি বেকারকে লেখেনি। নিজের ইচ্ছেয় কুইজ শোতে অনুপস্থিত থাকেনি। এখন তাকে না পেলে পুলিশের কাছে যেতেই হবে আমাদের। পুলিশ এসে সারা বাড়ি খুঁজবে।
নেলি এখানে অবশ্যই আছে, মাথা তুললেন পরিচালক। আবার সেই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর ফিরে এসেছে। আমার মেহমান হয়ে এখানে আছে সে। ওকে আমি বড় অভিনেত্রী বানাবো। ধনী, বিখ্যাত বানিয়ে ছাড়বে। উঠে দাঁড়িয়ে দেয়ালের হবিগুলোর দিকে হাত তুললেন তিনি। এই মানুষগুলোর মতো, যারা ওদের সবকিছুর জন্যে আমার কাছে ঋণী। সিনেমায় অভিনয় করিয়ে নেলিকে আমি…
চুপ করো বুড়ো ভাম। বেকুব কোথাকার।
দরজার কাছ থেকে ভেসে এলো কঠিন কষ্ঠ। ফিরে তাকালো তিন গোয়েন্দা। সোনালি চুলওয়ালা, চামড়ার জ্যাকেট রা তরুণ ঢুকে পড়েছে ভেতরে।
১৫
একদম চুপ! সাইনাসের দিকে তাকিয়ে আবার ধমক দিলো নকল মড়ার খুলি। তোমার সব কথাই শুনেছি। আমাকে এসবে ঢুকিয়েছো তুমি। কাপগুলো চুরি করিয়েছো। আমাকে দিয়ে। বলেছো আধা বখরা দেবে। পুরস্কার যাতে জিততে পারি তার জন্যে সব প্রশ্নের জবাব শিখিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কি কচুটা পেয়েছি? কিছু না।
কিশোরের দিকে তাকালো মড়ার খুলি। সব কিছুর মূলে এই বুড়ো। হলিউডের এক থিয়েটারে কাজ করতাম আমি। স্টেজের পেছন দিয়ে ঢুকে আমার সঙ্গে দেখা করে বহুত ফোলালো, বললো, আমি নাকি খুব ভালো অভিনেতা। আমার অভিনয়ের তুলনা হয় না।
পকেটে হাত ঢোকানো রয়েছে সাইনাসের। বিসন্ন ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। হ্যাঁ, সত্যিই মিথ্যে কথা বলেছি। কোনোদিনই বড় অভিনেতা হতে পারবেনা তুমি, এমনকি আমার সাহায্য পেলেও না।
তার কথা যেন কানেই ঢুকলো না মড়ার খুলির। কিশোরের দিকে তাকিয়ে বললো, বেকারের অফিসে সব কথা খুলে বলতে পারিনি। অসুবিধে ছিলো। আমি জানি সাইনাস এখানে একটা ঘরে নেলিকে তালা আটকে রেখেছে। কিডন্যাপিঙের সাজা আমার জানা আছে। পুলিশকে হাজার বোঝালেও ওরা বুঝতে চাইবে না, বলবে আমিও এর সঙ্গে জড়িত। আসলেই তো তাই। এই বুড়োর কথায়ই কাল নেলিকে ফোন করে রাতে আমার বাসায় দেখা করতে বলেছি। বলেছি, হ্যারিস বেকার আমাদের দুজনের সঙ্গে কথা কলতে চায়। গোপনে। শুধু আমাদের দুজনের সঙ্গে, আর কারো সাথে না। এবং একথা যেন আমরা কাউকে না জানাই। বেকার আমাদেরকে হলিউড বুলভার থেকে তুলে নেবে।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। তার ধারণার সাথে মিলে যাচ্ছে মড়ার খুলির কথা। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছে না, এতো কিছু করে বিনিময়ে কি পেতে চেয়েছিলো এই লোকটা?
আসলে নেলিকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম, বলে গেল মড়ার খুলি। যাতে সে আমাকে টেক্কা দিয়ে বাজি জিততে না পারে। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলাম। নেলির কথা বলে তোমাকেও ঠেকাতে চেয়েছিলাম।
তো এখন কি চান? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
চুক্তি, মড়ার খুলি বললো। তোমার সঙ্গে একটা চুক্তি করতে চাই। নেলির কাছে নিয়ে যাবো তোমাদেরকে। তারপর, হাসলো সে, তারপর আমরা সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করবো। আমার পক্ষ হয়ে কথা বলবে তুমি। বলবে, তোমাদেরকে নিয়ে আমিই এসেছি তাকে রে করে নিয়ে যেতে। তোমার কথা বিশ্বাস করবে ও। কারণ পুরস্কারটা ইচ্ছে করেই তাকে জিতিয়ে দিয়েছো তুমি।
দুই সহকারীর দিকে তাকালো কিশোর। এই চুক্তি করার অধিকার তার নেই। সাইনাস আর মড়ার খুলির বিরুদ্ধে যদি কেস করে দেয় নেলি, পুলিশ জানবেই। পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করবে। তখন মিথ্যে কথা বলতে পারবে না সে।
অথচ এখন যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নেলিকে মুক্ত করাও দরকার। তারপর পলিশের কাছে যাওয়া সেটা তার ব্যাপার।
মাথা ঝাঁকালো মুসা। আরও এক সেকেন্ড দ্বিধা করে রবিনও সায় দিলো।
বেশ, কিশোর বললো, আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করবো যে আপনি ওর কোনো ক্ষতি করতে চাননি। বলবো, আপনি এখানে এসেছেন ওকে মুক্ত করতে। এরপর যা করার নেলি করবে, আমি আর কিছু বলতে পারি না। ও কোথায়?