নিশ্চয়ই, জবাব দিলো হোফার।
এঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে কার পার্কের পেছন দিকে গাড়ি পিছিয়ে আনলো সে। ওরা এখানে আছে একথা জানা না থাকলে সহজে কারো চোখে পড়বে না লিমুজিনটা এখন, অন্তত হলুদ গাড়িটার কাছ থেকে। অথচ ওরা এখান থেকে স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে গাড়িটার তিমির মুখের মতো নাক।
হ্যারিস বেকারের পিছু নেবো নাকি? জিজ্ঞেস করলো হোফার।
তাকে নিরাশ করলো না কিশোর, আনমনে মাথা ঝাঁকালো। সীটে হেলান দিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে। রবিন বুঝতে পারছে, এখন ওভাবেই কিছুক্ষণ নীরব আর রহস্যময় হয়ে থাকতে চায় গোয়েন্দাপ্রধান, চায় না তাকে বিরক্ত করা হোক।
কিন্তু তাকে ওভাবে থাকতে দিলো না রবিন। বললো, এই, চুপ করে আছে কেন? ভেবেছো পার পেয়ে যাবে। তা হতে দিচ্ছি না। অফিসে ওরকম করলে কেন, জলদি বলো।
হ্যাঁ, রবিনের পক্ষ নিলো মুসা, জলদি বলো। কেন করলে?
বেশ। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো কিশোর। এক আঙুল তুললো, এক নম্বর, বেশ জোরেই বললো, যাতে হোফারও শুনতে পায়, নেলিকে শেষ কখন দেখেছি আমরা?
কাল রাতে, হলিউড বুলভারে, জবাব দিলো রনি। ওকে তুলে নিয়েছিলো বেকার।
সাথে ছিলো মড়ার খুলি, যোগ করলো কিশোর। তারপর আজ সকালে সে আমাকে ফোন করলো কিশোর। হ্যারিস বেকারের গলা নকল করে আমাকে শাসালো, যদি আমি ফাস্ট হই তাহলে নেলি দুর্ঘটনায় পতিত হবে। এ থেকে কি বোঝা যায়?
সে কোথাও আটকে রেখেছে নেলিকে, বললো রকিন। বন্দি করেছে। তবে সেটা নিশ্চয় তার ম্যাগনোলিয়া আর্মসের বাসায় নয়। এখানে অনেক লোকের বাস। চেঁচামেচি করে বা অন্য কোনোভাবে লোকের দৃষ্টি আর্কষণ করে ফেলবে তাহলে নেলি।
ঠিক, কিশোর বললো।
কিন্তু এখন তো কুইজ শো জিতেছে, মুসা বললো, আর জালিয়াত বলে চিহ্নিত হয়ে গেছে মড়ার খুলি, এখন আর নেলির কি বিপদ? ছেড়ে দেবেনা?।
না। কেন বাড়বে না বুঝিয়ে দিলো গোয়েন্দাপ্রধান, ওই অফিসে যা-ই বলে থাকুক, একা কাজ করছে না মড়ার খুলি। কেউ তাকে ধরে এনেছে ওই রোলে অভিনয় করার জন্যে। তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছে। পাগলদের ব্যাপারে সব মুখস্থ করিয়েছে। যেমন, তাকে বলা হয়েছে, অভিনয়ের সম্মানী হিসেবে শুক্রবারে নগদ টাকা দেয়া হতো আমাদেরকে। বাদামী খামে ভরে, লাল সুতোয় বেঁধে। তাকে বলে না দিলে ওরকম তথ্য হাজার চেষ্টা করেও নকল মড়ার খুলির জানার কথা নয়। তার জানার কথা নয় যে, জনাব গণ্ডগোলের গাড়িটা ছিলো একটা পিয়ার্স-অ্যারে কনভার্টিবল, টোয়েন্টি নাইন মডেলের। এসব কথা নিশ্চয় বলে দেয়া হয়েছে তাকে।
তারমানে তার সহযোগী আছে, বুঝতে পারলো রকিন।
আছে। আর সেই সহযোগীই নেলিকে কিডন্যাপ করতে তাকে সাহায্য করেছে। এখন ওকে কিছুতেই ছাড়বে না ওরা। কারণ নেলি জানে সেই সহযোগী লোকটি কে। জালিয়াতির চেয়ে কিডন্যাপিং অনেক বড় অপরাধ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে যাবে।
হ্যারিস বেকার। মড়ার খুলিকে সে-ই হেড়ে দিয়েছে। শুরু থেকে সব শয়তানী সে-ই করে আসছে।
কিশোর, তাই? মুসা জিজ্ঞেস করলো। বেকারের বাড়িতে আটকে রাখেনি তো নেলিকে?
জবাব দিলো না কিশোর। চোখ তার হলুদ গাড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়া লোকটার দিকে। গাড়িতে উঠে বসলো সে। এঞ্জিন স্টার্ট দিলো। তারপর বেরিয়ে যেতে লাগলো পার্ক থেকে।
না, মুসার প্রশ্নের জবাবে বললো কিশোর, হ্যারিস বেকার নয়। সে বিজ্ঞাপনের লোক। কিসে কিসে স্টুডিওর ক্ষতি হবে ভালো করেই জানে। সে স্টুডিও আর নেটওয়ার্ককেই বাঁচাতে চেয়েছে। সে জানতো না যে মড়ার খুলি নকল। এমন এক লোক মড়ার ধূলির ওস্তাদী করেছে, ছব্বি প্রতিটি ইঞ্চি যার জানা। কোথায় কি আছে না আহে মুখস্থ। সেই লোকই নেলিকে কিডন্যাপ করতে সাহায্য করেছে মড়ার খুলিকে। এবং সেই লোকই এখন ওই হলুদ গাড়িটা চালাচ্ছে।
কে? দেখার জন্যে রবিন আর মুসাও সামনে ঝুঁকে পড়লো।
হোফার পিছু নিয়েছে। হলিউড বুলভারের কাছে মোড় নেয়ার সময় ক্ষণিকের জন্যে হলুদ গাড়ির গতি শ্লথ হলো। সেই সুযোগে ওটার একেবাবে কাছে চলে গেল মিজিন।
ধীরে সুস্থে বোমাটা ফাটালো গোয়েন্দাপ্রধান, রাফায়েল সাইনাস।
১৪
মোড় নিয়ে বেভারলি হিলের গিরিখাতগুলোর দিকে এগিয়ে চললো হলুদ গাড়িটা।
ধীরগতি, সাবধানী ড্রাইভার সাইনাস। বৃদ্ধ পরিচালকের সন্দেহ না জাগিয়েও তাঁর পিছে লেগে থাকতে অসুবিধে হলো না হোফারের।
এঁকেবেঁকে চলে গেছে পথ, ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে, তারপর একসময় ঢুকে গেল পাহাড়ের মধ্যে। বাড়িঘর এখন অনেক দূরে দূরে। আকারেও বড় এখন ওগুলো। বিরাট বিরাট এলাকা নিয়ে একেকটা বাড়ি, প্রাসাদের মতো, পাথরের দেয়ালে ঘেরা। ওগুলো সিনেমার লোকদের বাড়িঘর। তবে এখনকার নয়, আগের, যখন সিমেনা কোম্পানিগুলো হঠাৎ করে অনেক টাকা কামাতে শুরু করেছিলো। এই পথে যাতায়াতের জন্যে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা আছে। বাস বোঝাই হয়ে আসে টুরিস্টরা। ওসব বাড়ির সামনে কিছুক্ষণের জন্যে থামে। আর বলে দেয় ড্রাইভাররা কোনটা কার বাড়ি, কোন পাথরের দেয়ালের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকতো সিনেমা-দর্শকদের অতি-পরিচিত কোন প্রিয় মুখটি।
কিশোর জানে, এখন বেশির ভাগ বাড়িই আসল মালিকের হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন এগুলোর মালিক ব্যাংক, তেল কোম্পানি, আর আরব শেখের। সিনেমার লোকেরা সরে চলে গেছে বেভারলি হিলের ভেতরের চ্যাপ্টা অঞ্চল নামে পরিচিত এলাকায়।