মনে মনে তার সাথে একমত না হয়ে পারলো না গোয়েন্দাপ্রধান। আসল মড়ার খুলির চেয়ে এ অনেক ভালো অভিনেতা।
দল পাকানো চেকটা চেপেচুপে সোজা করে পকেটে ভরে রাখলো বেকার। জিজ্ঞেস করলো, কে তোমাকে একাজ করতে বলেছে?
কেউ না। আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে আবার নকল মড়ার খুলির গলায়। আমাকে কেউ একাজ করতে বলেনি। টেলিভিশনে পাগল সংঘের ছবিগুলো দেখেছি। কাগজে পাগলদের সম্পর্কে পড়েছি। ইস্কুলে কিছুদিন আসল মড়ার খুলির সঙ্গে পড়েছিলাম। একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে গেল সে, বোধহয় সহপাঠীদের টিটকারির জ্বালায়ই অনেক বছর হলো তার আর কোন খবর নেই। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, মারা গেছে সে। একেবারে বোকা ছিলো তো। গরুর গাড়ির চাকার নিচে পড়ে মরলেও অবাক হবো না।
ওর চেহারার সঙ্গে কিছু কিছু মিল আছে আমার। কান বাদে। ছবি দেখতে দেখতে একটা মতলব এলো মাথায়। নিজেকে মড়ার খুলি বলে চালিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে বাবা আদায় করবো। প্রথমে ভেবেছিলাম পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবো। তৈরিও করে ফেলেছিলাম, এই সময় খবর শুনলাম নেটওয়ার্ক একটা কুইজ শোর বন্দোবস্ত করেছে। লুফে নিলাম সুযোগটা। কেন নেবো না? বিশ হাজার ডলার কম কথা?
সবাই নীরব। বেকার হাসছে, তবে প্রাণ নেই হাসিটায়, কেমন যেন দ্বিধায় ভরা।
এখন আমাকে নিয়ে কি করতে চান? জিজ্ঞেস করলো নকল মড়ার খুলি।
পুলিশের হাতে তুলে দেবো, সিকিউরিটি কললো। জালিয়াতির অভিযোগে…
হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলো বেকার। ওই কাজও করতে যেও না। নেটওয়ার্ক কিংবা মুভি স্টুডিও, কারোই সুনাম হবে না এতে। কল্পনা করতে পারো, খবরের কাগজওয়ালারা শুনতে পেলে কি তুমুল কাণ্ড শুরু করে দেবে? সিকিউরিটিকে একটা উজ্জ্বল হাসি উপহার দিলো সে। আসলে আমাদের এখনও কোনো ক্ষতি তো হয়নি। বিশ হাজার ডলারের চেকটা স্যান ফ্রান্সিকোয় নেলির কাছে পাঠিয়ে দেবো। খুশি হবে। আর একে…।
নকল মড়ার খুলির দিকে তাকিয়ে হাসলো সে। পুরো ব্যাপারটাকেই একটা রসিকতা মনে করি না কেন আমরা? সাইনাসের দিকে তাকালো বেকার। রাফায়েল, তুমি কি বলো?
ক্লান্ত চোখ নামিয়ে নিলেন বৃদ্ধ পরিচালক। সাদা, পাতলা চুলে আঙুল চালালেন। তা তো হতেই পারে। আমার আপত্তি নেই।
উঠে দাঁড়ালো কিশোর। তার ইশারায় রবিন আর মুসাও উঠলো।
আমরা কাগজওয়ালাদের কিছু বলবো না, কথা দিলো কিশোর। মীটিং শেষ হয়ে আসছে বঝেই যেন তাড়াতাডি, সবার আগে বেরিয়ে যেতে চায়, বাইরের কার পার্কে যেখানে লিমুজিন নিয়ে অপেক্ষা করছে হোফার। তাহলে, যদি অনুমতি দেন, মিস্টার বেকার, আমরা এখন যাই।
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, উঠে দাঁড়ালো বিজ্ঞাপন ম্যানেজার। তোমাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম, কিশোর পাশা। হাসিটা ঠিকই রয়েছে মুখে, তবে কণ্ঠস্বরে কৃতজ্ঞতার ছিটেফোঁটাও নেই। বুদ্ধিমান ছেলে তুমি, দারুণ গোয়েন্দা। তোমার সাহায্য না পেলে একটা সাংঘাতিক ভুল হয়ে যেতো। ঠকানো হতো নেলিকে।
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে দুই সহাকারীকে নিয়ে বেরিয়ে এলো কিশোর। পেছনে দরজাটা বন্ধ করে দেয়ার আগে চট করে ফিরে তাকালো একবার। চেয়ারে হেলান দিয়ে স্তস্তির হাসি হাসছে বেকার, হাসি ছড়িয়ে পড়েছে মড়ার খুলির মুখেও। চোখ নামিয়ে রেখেছেন সাইনাস, কোটে লেগে থাকা ময়লা নখ দিয়ে খুঁটে পরিষ্কারের চেষ্টা করছেন। ভুরু কুঁচকে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সিকিউরিটি ম্যান।
লিফট লোকে বোঝাই। নীরবে নেমে এলো তিন গোয়েন্দা। লবি থেকে বেরোনোর আগে কথা বলার সুযোগ পেলো না রবিন আর মুসা।
ওদেরকে এভাবে ছেড়ে দিলে? রাগ করে বললো মুসা। সে বিশ্বাস করতে পারছে। কোনো কেসে কিশোর কোনো অপরাধীকে ছেড়ে দেয়নি। অথচ আজ তা-ই করে এলো! মুসার ধারণা, হ্যারিস বেকার প্রথম থেকেই জানতো যে মড়ার খুলি নকল। সে জন্যেই লোকটা ধরা পড়ার পরও তাকে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
হ্যাঁ, মুসার সঙ্গে সুর মেলালো রবিন, সে-ও রেগেছে, কেন ছাড়লে? আর নেলির ব্যাপারটাই বা কি? তুমিই আমাদেরকে কললে, সে স্যান ফ্রান্সিসকোয় যায়নি। কললে, ও বিপদের মধ্যে রয়েছে।
হ্যাঁ,রবিনের কথার পিঠে বললো মুসা। রেগেছে তো বটেই, অবাকও মনে হচ্ছে এখন তাকে। কি ভাবছো তুমি, কিশোর?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে কাটতে ফিরে তাকালো গোয়েন্দাপ্রধান। আমি ভাবছি নেলির কথা। আজ সকালে আমাকে হুমকি দিয়ে ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই ভাবছি। ফোন পাওয়ার কথা আগেই দুই সহকারীকে বলেছে সে। ওর জন্যেই সমস্ত প্রশ্নের ভুল জবাব দিয়েছি আমি। যাতে নেলি জিততে পারে। এখনও ডাবছি তার কথাই। রবিনের দিকে তাকালো সে। ও বিপদেই রয়েছে। তাকে বাঁচাতে হবে আমাদের। এসো।
আর একটিও কথা না বলে তাড়াতাড়ি চত্বর পেরিয়ে এলো কিশোর। সঙ্গে সঙ্গে এলো রবিন আর মুসা।
গাড়িতে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো হোফার। কিশোর পেছনের দরজায় হাত দিতেই ফিরে তাকালো। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যেতে হবে?
কোথাও না। গাড়ির পেছনের সীটে উঠে বসলো কিশোর। রবিন আর মুসাও উঠলো। জানালা দিয়ে হ্যারিস বেকারের হলুদ সিত্রো গাড়িটার দিকে তাকালো সে। আরেকটু বোধহয় পিছানো দরকার। তাহলে ওদের চোখে না পড়েও গাড়িটার ওপর চোখ রাখতে পারবো।