তার বাঁ কানটা স্পষ্ট।
লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান, বেকার বলছে হাসি হাসি কণ্ঠে, এখন আমি পাগলদের সবাইকে একটা করে পুরস্কার দিতে চাই।
দর্শকদের গুঞ্জন স্তব্ধ হয়ে গেল। ছবিটা আবার খামে ভরে ক্যামেরার চোখের দিকে তাকাতে তৈরি হলো কিশোর।
অ্যানি, ডাকলো বেকার, পুরস্কারগুলো নিয়ে এসো।
আলোচনার দিন যে মেয়েটা কাপের বাক্স নিয়ে এসেছিলো, সে-ই এলো আরেকটা সোনালি কাগজে মোড়ানো বাক্স হাতে। একটা ভুরু উঠে গেল কিশোরের। এবার আর একা আসেনি মেয়েটা, সঙ্গে রয়েছে ইউনিফর্ম রা একজন গার্ড।
বাক্সটা খুললো বেকার। নাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে। সব শেষে বললো, …পাগলদেরকে একটা করে রূপার কাপ উপহার দেবো আমরা।
নানারকম কথা বলে আর শব্দ করে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলো দর্শকরা, পাগলরা যখন পুরস্কার নিতে এগোলো।
নেলির কাপটা ডাকযোগে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে, বেকার বললো। নেলি, তুমি যদি এ-অনুষ্ঠান দেখে থাকো, আবার ধন্যবাদ তোমাকে। উপস্থিত পাগলবৃন্দ, দর্শকমণ্ডলী, আর যারা আমাদের এই অনুষ্ঠান দেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি আমাদের অনুষ্ঠান। গুড বাই।
ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো বেকার। পৃর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলমল করছে তার হাসি। জোরে জোরে হাততালি দিচ্ছে দর্শকরা। শো শেষ।
থেমে গেল ক্যামেরার নড়াচড়া। নড়তে শুরু করেছে পাগলেরা। স্টেজের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মড়ার খুলি। বেকার, শিকারী কুকুর, ভারিপদ, ক্যামেরাম্যান আর দর্শকদের কেউ কেউ তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
পেছনে দুই সহকারীকে নিয়ে ওই ভিড় ঠেলে ভেতর ঢুকলো কিশোর। চামড়ার অ্যাকেট পরা সোনালি-চুলোর মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। ছবিটা বের করে দেখিয়ে বললো, এই ছবিটা কি তোমার?
কেন? ছবির দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি ফুটলো মড়ার খুলির চোখে। কিন্তু অস্বীকার করতে পারলো না যে ছবিটা তার নয়। আশপাশের সকলে ঝুঁকে এলো ছবিটা দেখার জন্যে। হ্যাঁ, এটা আমারই হবি। কেন?
কারণ এখানে তোমার কান ঢাকা নেই, কিশোর বললো। পাশে দাঁড়ানো বেকারের দিকে তাকালো সে। বয়েস বাড়লে মানুষের চেহারা অনেক বদলে যায়, সন্দেহ নেই। শিকারী কুকুর, ভারিপদ, আমি, আমাদের সবার চেহারাই বদলেছে। পরিচয় না দিলে ছেলেবেলার সেসব ছবি দেখে লোকে এখন আমাদের চিনতে পারবে না। ঠিক?
ঠিক, শিকারী কুকুর বললো।
মাথা ঝাঁকালো বেকার।
কিন্তু কিছু কিছু জিনিস কখনও বদলায় না, বড় হলে আকারে বাড়ে এই যা, বললো কিশোর। তার মধ্যে একটা অঙ্গ হলো মানুষের কান। মড়ার খুলির কান ছিলো অস্বাভাবিক বড়, কানের লতি এতো ঝোলা, মনে হতো জেলি লেগে আছে, ঝাড় লাগলেই খসে পড়বে। কিন্তু ছবিতে যার কান দেখছেন, এইমাত্র যে বিশ হাজার ডলার পুরস্কার জিতলো, এর কান সম্পূর্ণ অন্যরকম। বয়েস বাড়লে কি কানের এরকম পরিবর্তন হয়?
থাবা দিয়ে কিশোরের হাত থেকে ছবিটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলো চামড়ার জ্যাকেট পরা তরুণ। খপ করে তার চেপে ধরে ঠেলে পিছনে সরিয়ে দিলো মুসা।
কি-ক্কি বলতে চাও তুমি? কিশোরের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালো মড়ার খুলি।
বলতে চাই, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর, তুমি কোনোদিনই পাগল সংঘে অভিনয় করোনি। এই কুইজ শোতে অংশ নেয়ার কোনো অধিকার তোমার ছিলো না। আর মিস্টার বেকার নিশ্চয় আমার সঙ্গে একমত হবেন, এই পুরস্কার তোমার প্রাপ্য হতে পারে না, কারণ…
ছবিটা তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে নাচালো কিশোর। কারণ, তুমি আর যেই হও, পাগল সংঘের মড়ার খুলি হতেই পারো না।
১৩
টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিল্ডিঙের একটা বড় অফিসে জমায়েত হয়েছে অনেকে। নকল মড়ার খুলি, হ্যারিস বেকার, রাফায়েল সাইনাস, তিন গোয়েন্দা, শিকারী কুকুর, ভারিপদ, আর টেলিভিশন কোম্পানির একজন সিকিউরিটি গার্ড।
ডেস্কের ওপাশে বসেছে বেকার। তার সামনে রাখা কিশোরের তোলা ছবিটা। মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসেছে নকল মড়ার খুলি। আরও কতগুলো চেয়ার নিয়ে তার পেছনে গোল হয়ে ঘিরে বসেছে অন্যান্যরা।
ও-কে, পরাজিত ভঙ্গিতে অবশেষে বললো মড়ার খুলি, স্বীকার করছি, আমি আসল মড়ার খুলি নই। আরও স্বীকার করছি আমি একটা গাধা। গর্দভ না হলে মোটুরামকে আমার ছবি তোলার সুযোগ দিই? কিশোরের দিকে তাকালো সে। তোমাকে আগেই বলেছি, তুমি যে বেশি নও সেটা আমি বুঝেছি, যতোই বোকার অভিনয় করো না কেন। তবে যতোটা চাক মনে করে, তার চেয়ে যে অনেক বেশি, এটা বুঝতে পারিনি। চওড়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিরাশার ভঙ্গি করলো সে। হাত ওল্টালো। চেষ্টা করে দেখলাম, পারিনি। বিশ হাজার ডলার, কম কথা নয়। তবে প্রায় সেরে ফেলেছিলাম।
পকেট থেকে চেকটা বের করে দেখলো মড়ার খুলি। জ্বলে উঠলো একবার চোখের তারা। তারপর দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে মারলো বেকারের দিকে।
কাপটাও ফেরত দাও, হাত বাড়ালেন সাইনাস। কণ্ঠস্বরে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে আবার।
পকেট থেকে কাপটা বের করে আহাড় দিয়ে রাখলো টেবিলে।
এখন বলো তুমি কে? মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করলো সিকিউরিটি গার্ড। তোমার আসল নাম কি?
সেটা জেনে কি লাভ? আবার কাঁধ ঝাঁকালো মড়ার খুলি। আমার নাম দিয়ে কার কি এসে যায়? এ-শহরে আরও হাজারটা অভিনেতার মতোই আমিও একজন, অভিনয় জেনেও যারা সুযোগ পায় না। যদিও অভিনয় ভালোই জানি আমি।