গুঞ্জন উঠলো দর্শকদের মাঝে। বিরক্ত নয়, সহানুভূতি, বটিসুন্দরীর মর্যাতনা উপলব্ধি করতে পারছে ওরা।
নেলি, বেকার বললো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে, আমাদের এই অনুষ্ঠান যদি এই মুহূর্তে দেখে থাকো তুমি, তাহলে বলছি তোমার এই সিদ্ধান্তের জন্যে আমরা খুব কষ্ট পেলাম। তোমাকে পেয়ে সত্যিই খুশি হয়েছিলাম আমরা। তোমাকে মিস করছি এ মুহূর্তে।
দর্শকরাও বেকারের সঙ্গে সায় দিয়ে গুঞ্জন করে উঠলো। নানারকম কথা বলতে লাগলো ওরা। হাত তুলে ওদেরকে শান্ত হতে অনুরোধ করলো বেকার, দয়া করে চুপ করুন আপনার। আমাদের শো শুরু হতে যাচ্ছে। পাগলদের দ্বিতীয় এবং ফাইন্যাল কুইজ শো।
নিভে গেল আলো। পর্দার দিকে তাকালো কিশোর। দুই মিনিটের টুকরো ছবি দেখানো আর হলো। ওতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারছে না সে, মাথায় ঘুরছে নানারকম চিন্তা। তবে যেটুকু পারলো, তাতেই পুরো দুটি রেকর্ড হয়ে গেল তার অসাধরণ স্মৃতিতে।
জনাব গণ্ডগোলের জন্যে একটা কুকুর চুরি করছে শজারুকাঁটা। ডোরাকাটা একটা স্ট্রর সাহায্যে স্ট্রবেরি মিল্ক শেক খাচ্ছে বটিসুন্দরী। ভুট্টা পোড়া দেয়ার জন্যে বনের ভেতর আগুন জ্বেলেছে মড়ার খুলি আর শিকারী কুকুর। একটা জলাশয়ে ডাইভ দিয়ে পড়ছে ভারিপদ। দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে বনে, তার মধ্যে আটকা পড়েছে মোটুরাম। চেককাটা একটা টেবিলক্লথ দিয়ে ভারিদ্র মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছে শিকারী কুকুর। আগুনের ভেতর থেকে মোটুরামকে উদ্ধার করে আনছে নেলি।
ছবি দেখছে আর ভাবছে কিশোর, নিশ্চয় ওই চিঠি নেলি লেখেনি। কারণ, কিছুতেই বটিসুন্দরী লিখে সই করবে না সে। কিশোর যেমন মোটুরামকে ঘৃণা করে, তেমনি নেলি ঘৃণা করে বটিসুন্দরীকে। তাছাড়া, সে বাড়িও যায়নি। হোটেলের ঘর হাড়েনি। অথচ সারা সকাল তাকে হোটেলে দেখা যায়নি, ছিলো না।
নিশ্চয় বিপদে পড়েছে নেলি। তাকে আটকে রাখা হয়েছে কোথাও। তারপর তার নাম সই করে দিয়ে একটা জাল চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে এসব করেছে, সেই একই লোক হুমকি দিয়ে ফোন করেছে কিশোরকে।
দুই মিনিট পর ছবি শেষ হয়ে গেল। জ্বলে উঠলো আলো।
ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালো কিশোর। পঁয়তাল্লিশ নম্বর পেয়েছে সে। মড়ার খুলি চল্লিশ। নেলি পঁয়তিরিশ। ভারিপদ আর শিকারী কুকুর আরও অনেক কম।
সুইভেল চেয়ার ঘুরিয়ে প্রতিযোগীদের মুখোমুখি হলো বেকার।
নেলি না থাকায় প্রথম জবাব দেয়ার পালা এলো মড়ার খুলির।
বলতো, বটিসন্দরী, যে স্ট দিয়ে মিল্ক শেক খাচ্ছিলো, ওটার বিশেষত্ব কি?
ডোরাকাটা, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো মড়ার খুলি। লাল, সাদা আর নীল।
হাততালি পড়লো। কিশোরের সমান নম্বর হয়ে গেল তার।
শিকারী কুকুরের পালা। কি ধরনের মিল্ক শেক খাচ্ছিলো?
দ্বিধা করলো শিকারী। মড়ার খুলির আগের মুহূর্তে কিশোরের হাত উঠে গেল।
চকলেট? জবাব নয়, যেন বেকারকে প্রশ্ন করলো শিকারী কুকুর।
না না না, চেঁচিয়ে উঠলো দর্শকরা। হলো না।
হলো না, যেন খুবই দুঃখিত হয়েছে এমন ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে কিশোরের দিকে ফিরলে বেকার। বলো?
দ্বিধা করার ভান করলো কিশোর। তার ভালো করেই জানা আছে জবাবটা কি। কিন্তু বললো, আমারও মনে হয় ওটা চকলেট।
আশা করেছিলো দর্শকরা, কিশোর পারবেই, কিন্তু তাদেরকে নিরাশ হতে হলো। খুব আফসোস করলো তারা। পাঁচ নম্বর হারালো সে। এরপর থেকে হারাতেই থাকলো। তার নিজের প্রশ্ন যখন এলো, জিজ্ঞেস করা হলো কি দিয়ে শিকারী কুকুরের মাথায় ব্যান্ডেজ বাধছিলো ভারিপদ, আবরও দ্বিধায় অভিনয় শুরু করলো সে।
টিসু পেপার? বলে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বেকারের দিকে তাকালো।
জোর গুঞ্জন উঠলো দর্শকদের মাঝে। ওরা বিশ্বাসই করতে পারছে না যেন কিশোর ভুল করবে।
পঞ্চম এবং শেষ রাউণ্ডে দেখা গেল পঁয়ষট্টি নম্বর পেয়ে এগিয়ে রয়েছে মড়ার খুলি। শেষ জবাবটাও ঠিক ঠিক দিলো সে। শিকারী কুকুর আর ভারিপদ ভুল করলো। কিশোরের পালা এলো।
তোমাকে এবার খুব সহজ একটা প্রশ্ন করি, বেকার বললো। জনাব গণ্ডগোলের জন্যে কি চুরি করেছে শজারুকাঁটা?
জবাব দেয়ার আগে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালো কিশোর।
মাথা চুলকালো। নেরি চেয়ে ইতিমধ্যেই পাঁচ নম্বর কম পেয়েছে। আবারও ভুল জবাব দিলো, ইয়ে, একটা বেড়াল।
গুঙিয়ে উঠলো দর্শকরা। প্রশ্ন-পর্ব শেষ হলো।
অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিযোগীরা কে কতো নম্বর পেয়েছে, পড়তে লাগলো বেকার। মড়ার খুলি পেয়েছে সত্তর। নেলি পঁয়তিরিশে রয়েছে। তার চেয়েও পাঁচ নম্বর কম পেয়েছে কিশোর, অর্থাৎ তিরিশ। কাজেই নেলি দ্বিতীয় শোতে যোগ না দিয়েও দ্বিতীয় হয়ে আছে।
তিনটে ক্যামেরার চোখেই মড়ার খুলির দিকে ঘুরে গেল, যখন সে হাসিমুখে বিশ হাজার ডলারের চেকটা নেয়ার জন্যে হাত বাড়ালো। সেদিকে তাকানোরও প্রয়োজন বোধ করলো না কিশোর। সে উৎকণ্ঠিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে দর্শকদের মাথার ওপর দিয়ে পেছনে, রবিনকে দেখার আশ্রয়।
অবশেষে ঘোরানো গলি দিয়ে রবিনকে ছুটে আস দেখা গেল। দর্শকদের সারির মাঝ দিয়ে প্রায় দৌড়ে এলো স্টেজের দিকে। তার পেছনে এলো মুসা। হাতের বড় ম্যানিলা খামটা কিশোরের হাতে তুলে দিলো রবিন। ফিসফিসিয়ে বললো, খুব পরিষ্কার উঠেছে।
রবিন আর মুসা ফিরে গেল সীটে। খামটা খুললো কিশোর। যা আশা করেছিলো, তার চেয়ে ভালো উঠেছে ছবিটা। মড়ার খুলির একটা চমৎকার হবি, বাতাসে চুল উড়ছে পেছনে।