দশ মিটার দুরে একটা গলি এসে পড়েছে লা পাম স্ট্রীটে।
ওই মোড়টায় নিয়ে রাখতে পারবে? হোফারকে অনুরোধ করলো কিশোর। পামার দিকে মুখ করে? তাহলে বেরিয়ে যেদিকেই যাক সে, তার পিছু নিতে পারবো আমরা সহজে।
আঁ, ঠিকই বলেছে।
গাড়িটাকে এগিয়ে নিয়ে গেল হোফার, তারপর পিছিয়ে এনে মোড়ের কাছে ঘাপটি মেরে মেরে বসে রইল লা পামার দিকে মুখ করে।
ক্যামেরাটা ঠিকঠাক আছে কিনা, দেখলো আরেকবার কিশোর।
একটা বাজলে পরে দেখা গেল মড়ার খুলি বেরোচ্ছে। বেরিয়ে কার পার্কের দিকে এগোলো। স্টার্ট দিলে হোফার। মড়ার খুলি লাল গাড়িটা লা পামায় বেরিয়ে ডানে মোড় নিয়ে হলিউড বুলভারের দিকে এগোনোর আগেই চলতে কালো লিমুজিন।
বুলভারে পড়ে আবার ডানে ঘুরলো স্পোর্টসকার। তারমানে টিভি স্টেশনেই চলেছে মর খুলি।
পেছনে চলে যাও, কিশোর বললো হোফারকে। তারপর যেই আমি বলবো যাও, অমনি জোরে ছুটে চলে আসবে তার পাশে। ওর যতো কাছাকাছি সম্ভব নিয়ে যাবে আমাকে।
পেছনের সীটে ডানপাশে বসেছে কিশোর। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে জানালার ভেতর দিয়ে, স্পোর্টসকার চালাচ্ছে মড়ার খুলি। লম্বা সোনালি চুল উড়ছে বাতাসে। সামনে ঝুঁকলো কিশোর। মাত্র একবার সুযোগ পাবে ক্যামেরা ব্যবহারের, আর একবারেই ছবিতে তুলে নিতে হবে। মিস করা চলবে না।
এবার আর লাল আলো বাধা দিলো না লিমুজিনকে। সবুজ আলো দেখে বেরিয়ে এলো দুটো গাড়িই। গতি বাড়াচ্ছে মড়ার খুলি। বাতাসে পেছনে প্রায় কাড়া হয়ে গেছে এফ তার চুল, ঝুলে ঝুলে গিয়ে বাড়ি মারছে কাধে। গাল, গলা, মাথার পেছনটা দেখা যায় এখন।
দেখতে দেখতে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠলো কিশোর। কললো, যাও!
লাফ দিয়ে গতি বেড়ে গেল লিমুজিনের। চোখের পলকে চলে এলো স্পোর্টসকারের পাশাপাশি। সীটের পাশে হেলে পড়ে ফিরে তাকালো কিশোর। জানালার কাঁচে চেপে ধরলো জ্যাকেটের ভাঁজে লুকানো ক্যামেরার চোখ।
এখন ফিরে গাড়িটার দিকে মড়ার খুলি তাকালেই কিশোরের আশা শেষ। নষ্ট হয়ে যাবে ওর পরিকল্পনা।
এখনও সামনে তাকিয়ে রয়েছে মড়ার খুলি। ক্যামেরার বোতাম টিপে দিলো কিশোর। এই সময় লিমুজিনের দিকে ফিরলো মড়ার খুলি। ফিরুক। আর অসুবিধে নেই। কাজ যা করার করে ফেলেছে গোক্যা। মড়ার খুলি বুঝতে পারেনি যে তার ছবি তোলা হয়েছে।
হয়েছে, এবার পিছাতে পারো, হোফারকে কললো কিশোর।
লিমুজিনটা যখন পিছাচ্ছে, জ্যাকেটের ভাজ থেকে ক্যামেরাটা বের করে রবিনের হাতে দিলো সে। আমাকে টিভি স্টেশনে নামিয়ে দিয়েই হেডকোয়ার্টারে চলে যাবে তোমরা। ছবিটা ডেভলপ করে বড় করবে। কুইজ শো দেখতে পারবে না তোমরা। কিন্তু রেকর্ডিং শেষ হতে হতে বড় একটা ছবি চাই আমার। ছবিটা নিয়ে স্টেজে চলে আসবে, শো শেষ হওয়ার পর পরই যেন ঢুকতে পারো।
আচ্ছা, ক্যামেরাটা পকেটে ভরে রাখলো রবিন। কিন্তু ব্যাপারটা কি, কিশোর? মড়ায় খুলির ছবি নিলে কেন?
হেসে বললো কিশোর, ঝড়ো দিনে খোলা গাড়িতে তার একটা প্রোফাইল নিলাম। নিশ্চয় কারণটা বুঝতে পেরেছে?
না, স্বীকার করলো রনি, পারিনি।
আমি কিছুই বুঝিনি, মুসা ফললো।
একপাশ থেকে ছবি তুললাম, তার কারণ তার লম্বা সোনালি চুলগুলো দেখতে চাই, বুঝিয়ে দিলো কিশোর। একটা ব্যাপার নিশ্চয় লক্ষ্য করেছে, সব সময় আঁচড়ে ওগুলো সমান করে নামিয়ে রাখে সে। তবে আজকের ঝড়ো বাতাসকে ধন্যবাদ, ওর লুকিয়ে রাখা একটা অঙ্গের ছবি তুলতে পারলাম। এবার নিশ্চয় বুঝেছো?
না, জবাব দিলো রবিন।
কোন্ অঙ্গের কথা বলছো তুমি? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
ওর কান, বলে দিলে কিশোর। ওর বিখ্যাত কান, যে দুটো নড়াতে পারে।
১২
দুটো বাজতে আর এক মিনিট বাকি। কিশোর দেখলো, উদ্বিগ্ন হয়ে ঘড়ি দেখহে হারিস বেকার। এই নিয়ে তিনবার এরকম করলো সে।
আর মিনিটখানেক বাদেই শুরু হবে পাগলদের দ্বিতীয় কুইজ শো, অথচ হাজির রয়েছে মাত্র তিনজন। মড়ার খুলি, শিকারী কুকুর আর কিশোর। নেলি আর ভারিপদ আসেনি।
দর্শকমণ্ডলীর দিকে তাকালে কিশোর। শেষের সারিতে বসেছে আজ মুসা। সে-ও বেকারের মতোই উদ্বিগ্ন। কিশোরকে তার দিকে তাকাতে দেখে অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে শ্রাগ করলো। জবাবে কিশোরও শ্রাগ করলো। ভারিপদর জন্যে ভাবছে না সে, নেলির জন্যে চিন্তিত।
আরও পেছনে দৃষ্টি দিলো কিশোর। কন্ট্রোল বুদে জায়গামতোই রয়েছেন সাইনাস। পরনে সেই দোমড়ানো ধূসর স্যুট, এলোমেলো সাদা চুল, চোখের নিচে গাঢ় ছায়। অতি ক্লান্ত বিধ্বস্ত একজন মানুষ।
ঘোরানো গলিতে একটা নড়াচড়া চোখে পড়লো কিশোরের। স্টেজের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে ভারিপদ। নিজের সীটে এসে বসলো।
ঠিক দুটো বাজে, কিন্তু নেলি এখনও অনুপস্থিত।
ভারিপদর দিকে ঝুঁকে নিচু গলায় বললো কিশোর, দেরি করে ফেলেছো।
হ্যাঁ, হাসলো ভারিপদ। পথে খারাপ হয়ে গেল মোটর সাইকেল। টাইয়ের সঙ্গে মাইক বাঁধলো সে। তবে না আসতে পারলেও কিছু হতো না। জেতার সম্ভাবনা একটুও নেই আমার। টাকাও পাবে না।
আবার বেকারের দিকে নজর দিলো কিশোর। ভারিপদ এসে বসার পর কিছুটা উজ্জ্বল হলো তার হাসি। কন্ট্রোল রুমকে তৈরি হওয়ার ইশারা করে দর্শকদের দিকে ফিরলো।
প্রিয় দর্শকমণ্ডলী, বলতে শুরু করলো সে, পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলো, আপনাদের জন্যে একটা দুঃসংবাদ আছে। আমাদের প্রতিযোগী নেলির কাছ থেকে একটু আগে একটা চিঠি পেয়েছি। চিঠিটা এসেছে আমার অফিসের ঠিকানায়। আপনাদেরকে পড়েই শোনাচ্ছি। হাতের কাগজটার দিকে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে একটা সেকেণ্ড রিতি দিয়ে, তারপর জোরে জোরে পড়তে লাগলো, ডিয়ার মিস্টার বেকার। আপনাদেরকে এভাবে বেকায়দায় ফেলার জন্যে আন্তরিক দুঃখিত। কিন্তু আমার ছবি পত্রিকায় ছাপা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই বিপদ, বহুবছর আগে যে যন্ত্রণায় পড়েছিলাম, রাস্তায় বোরোলেই আবার রিক্ত করছে লোকে। কুইজ শো জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই আর আমারবুঝতে পেরেই ভাবলাম আর ক্যামেরার সামনে যাবে না। সান ফ্রান্সিসকোয় আমার বাড়িতে চলে যাচ্ছি। ওখানে অন্তত শান্তিতে থাকতে পারবো, লোকে বিরক্ত করবে না আমাকে। আপনি, এবং পাগলদের বার প্রতি রইলো আমার শুভেচ্ছা। আবার নাটকীয় ভঙ্গিতে বিরতি দিয়ে বেকার বললো, নিচে সই করেছে, বটিসুন্দরী।