হলিউড বুলভারের ঘটনাটা একটা স্পাই হরি কথা মনে করিয়ে দিলো কিশোরের। ঠিক এরকম ঘটনাই ঘটেছিলো ছবিটাতে। দুজন সন্দেহভাজনকে অনুসরণ করে চলেছিলো দুজন শাই, তারপর হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে সামনের দুজনকে তুলে নিয়ে গেল, যেন ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই ক্যামেরাটা বানিয়ে ফেললো কিশোর। পকেট চিরুনির চেয়ে বেশি মোটা হবে না জিনিসটা। জ্যাকেটের ভাঁজের মধ্যেই জায়গা হয়ে গেল। লোকের চোখে পড়ার মতো ফুলেও থাকলো না। সামান্য একটু ঠেলে চোখটা বোতামের ফুটোর কাছে নিয়ে এলো সে। ঠিক এই সময় জ্বলে উঠলো মাথার ওপরের লাল আলো।
তিরিশ সেকেন্দ্রে মধ্যেই ট্রেলারে ঢুকে রিসিভার তুলে নিলো সে। কিশোর পাশা বলছি।
হালো! যাক, বাড়িতেই আছো, টেলিফোনেও গলার খুশি খুশি ভাবটা বোঝা যায়।
মিস্টার বেকার?
ধরে নাও আমি একজন বন্ধু, কললো হাসি হাসি কণ্ঠ। নেলির বন্ধু। সে কোনো দুর্ঘটনায় পড়ুক, এটা চাই না। তুমি চাও?
নিশ্চয়ই না। কিন্তু নেলি দুর্ঘটনায় পড়বে কেন? কোথায় আছে?
সেটা জানার দরকার নেই তোমার, মোটুরাম, হাসি বাড়লো কণ্ঠটার। আপাতত নিরাপদেই আছে। তবে বেশিক্ষণ থাকবে না, সেকথাই বলতে চাইছি তোমাকে। এক মুহূর্ত নীরবতা। যদি তুমি আজ ফাস্ট হও, মোটুরাম, নেলি মারা যাবে। মরবে হাসপাতালে গিয়ে, অনেক কষ্ট পেয়ে।
শুনুন…, কথা শেষ করতে পারলো না কিশোর। লাইন কেটে গেল ওপাশ থেকে।
রিসিভার নামিয়ে রেখে ডেস্কের পাশে এসে বসলো কিশোর। গতদিন পাগলদের বাসার যে লিস্টটা তাকে দিয়েছিলো হোফার, সেটা এখনও পকেটেই রয়েছে। বের করলো। রিসিভার তুলে নিয়ে সাম্ভা মনিকায় নেলির হোটেলের নম্বরে ফোন করলে।
সাড়া দিয়ে নেলির ঘরে লাইন দিলো ক্লার্ক। মিনিটখানেক পরে জানালো, ঘরে নেই।
হোটেল ছেড়ে চলে যায়নি তো?
না, খাতায়-কলমে চলে যায়নি। কিশোর বলার পর সম্রাটা ঢুকলো ক্লার্কের মাথায়। সারা সকাল ধরে নেলিকে দেখেনি। বাক্সেই রয়েছে তার ঘরের চাবি।
লোকটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার রেখে দিলো কিশোর। কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে বসে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো সে। তারপর আনমনে মাথা নাড়লো কয়েকবার। মৃদুস্বরে নিজেকেই বোঝালো, হারিস বেকার ফোন করেনি।
একটা ব্যাপারে সে নিশ্চিত, বেকার তাকে মোটুরাম বলে ডাকবে না। ওই লোকটা এ-পর্যন্ত এনামে তাকে একবারও ডাকেনি। শুধু কিশোর বলে। তাহলে বেকার যদি না-ই হয়ে থাকে, তাহলে এমন কেউ, যে খুব ভালো অভিনেতা, কণ্ঠস্বর নকলে ওস্তাদ।
কে? মড়ার খুলি? কিন্তু মড়ার খুলি তো পাগলদের মধ্যে সব চেয়ে বাজে অভিনেতা ছিলো। কান নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই পারতো না। অনেক সময় সংলাপ ভূলে বসে থাকতো। কথার সঙ্গে মুখ-হাত নাড়ানোরও মিল থাকতো না।
জঞ্জালের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ছে ঝড়ো হাওয়া, তীক্ষ্ণ শিস কাটতে কাটতে যেন মাথা কুটে মরছে ট্রেলারের ভেতরে ঢোকার জন্যে।
মড়ার খুলির একটা স্পোর্টসকার আছে, কথাটা মনে পড়তেই একটা বুদ্ধি এলো কিশোরের মাথায়। আবার রিসিভার তুলে হোফারকে ফোন করলো। মুসা আর রবিনকে
ওদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যতো তাড়াতাড়ি পারে ইয়ার্ডে চলে আসতে বললো।
রিসিভার রেখে দিয়ে আরও কয়েক মিনিট ডেস্কের কাছে বসে রইলো সে। প্ল্যান করছে মনে মনে। গোয়েন্দা ক্যামেরাটা এতো তাড়াতাড়িই কাজে লেগে যাবে ভাবেনি।
ট্রেলারের ভেতরেই একটা ছোট ডার্করুম আছে। সেখানে এসে ঢুকলো কিশোর। সাধারণ ক্যামেরার গোল ফিল্ম ভরা যাবে না তার ক্যামেরাটাতে। কারণ জিনিসটা চ্যাপ্টা। কাজেই ফিল্ম থেকে কেটে মাত্র একটা ছবি তোলা যায় এরকম একটা টুকরো ভরা যাবে। একবার তোলার পর আবার তুলতে হলে আবার ফি কেটে অতে হবে।
তবে তার অনুমান যদি ঠিক হয়, আর টাইমিং ঠিক থাকে, তাহলে একবারই যথেষ্ট।
ফিল্ম ভরে ক্যামেরাটা আবার জ্যাকেটের ভঁজে ভরলো কিশোর। বোতামের ফুটো দিয়ে বের করে দিলো ক্যারোর চোখ। ভালো করে না তাকালে চোখে পড়ে না। আর তাকালেও ছোট গোল লেসটাকে দেখে আরেকটা বোতাম বলেই ভুল হবে। শুধু জ্যাকেটের অন্যান্য বোতামের সঙ্গে এটার রঙ মেলে না, এই যা।
গেটে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তাকে। পৌঁছে গেছে রবিন আর মুসা।
ব্যাপার কি? সে লিমুজিনের পেছনের সীটে উঠে বসার সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো রবিন। কিন্তু পেলে?
হ্যাঁ। আর কিছু বললো না, শুধু হোফারকে লা পামা স্ট্রীটে যেতে বললো।
ম্যাগনোলিয়া আর্মরে কাছে এনে গাড়ি রাখলো হোফার।
তুমি যাও, মুসা, কিশোর কললো।
আবার। তা কোথায় যেতে হবে?
হাসলো কিশোর। মরতে নয় অবশ্যই। চট করে কার পার্কে গিয়ে শুধু দেখে এসো মড়ার খুরি স্পোর্টসকারটা আছে কিনা।
তিন মিনিটেই ফিরে এলো মুসা। জানালো, হ্যাঁ, আছে, লাল রঙের। ছোট।
সীটে বসেই একপাশে কাত হলো কিশোর। হাত তোলা, না নামানো?
নামানো। ক্যানভাসের হাত।
শুড, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। দোয়া করি যেন নামানোই থাকে।
ঘড়ি দেখলো সে। সাড়ে বারোটা বাজেনি এখনও। কতোক্ষণ বসে থাকতে হয় কে জানে। কখন বেরোবে মড়ার খুলি, টেলিভিশন স্টেশনের দিকে রওনা হবে, ঠিক নেই। একেবারে অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার পথের কাছে প্রায় গেট আগলে রয়েছে লিমুজিন। বেরোতে গেলে কালো গাড়িটা মড়ার খুলির চোখে পড়বেই।