মাথা তুলতেই সাহস করছে না মুসা। ঘাসের ওপর মুখ চেপে অনড় পড়ে রয়েছে। তার মাথার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া পাগুলোও দেখতে পেলো না। তবে তার মনে হলো, বুঝি মাথা মাড়িয়েই এগিয়ে গেল।
আলো নেভানোর আগে দুজনের চেহারাই দেখতে পেয়েছে কিশোর। চিনতে পেরেছে মড়ার খুলির সঙ্গীকে।
বটিসুন্দরী, নেলি।
অন্ধকারে আবছা হতে হতে মিলিয়ে গেল মূর্তিদুটো। রাস্তার দিকে চলে গেছে দুজনে।
ঝড়ের কাছে আগের জায়গায় ফিরে এলো মুসা। দম নিতে নিতে কললো সে। আরেকটু হলেই মাথা থেতলে দিয়েছিলো! গটগট করে হেঁটে চলে গেল মাথার কাছ দিয়ে!
মুসার কথা শোনার সময় নেই কিশোরের। উঠে পড়েছে ইতিমধ্যেই। রওনা হয়ে গেল। তার পেছনে চললো রবিন আর মুসা।
কিছুদূর এগোতেই মড়ার খুলি আর নেলিকে দেখা গেল আবার। বিশ মিটার মতো দূরে। দ্রুতপায়ে চলেছে হলিউড বুলভারের দিকে। হোফারের লিমুজিনের নাক ওরা যেদিকে যাচ্ছে তার উল্টোদিকে মুখ করে আছে। ওদেরকে ধরতে হলে গাড়ি ঘোরাতে হবে তাকে, সরু রাস্তায় তাতে অনেক সময় লেগে যাবে। ততোক্ষণে হয়তো হারিয়ে যাবে দুজনে।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো কিশোর। মুসাকে বললো, তুমি হোফারকে গিয়ে বলো, গাড়ি ঘুরিয়ে রাখতে। রবিন, জলদি চলো, ওদের চোখের আড়াল করা চলবে না।
গাড়ির দিকে দৌড় দিলো মুসা। কিশোর আর রবিন চললো বুলভারের দিকে।
লা পামায় এই সময়টায় রাস্তায় লোকজন প্রায় নেই। ফিরে তাকালেই দুই কিশোর যে ওদেরকে অনুসরণ করতে দেখে ফেলবে মড়ার খুলি। কাজেই দূরে দূরে রইলো কিশোর।
মিনিটখানেক পরেই পেছনে লিমুজিনের শব্দ শোনা গেল। হলিউড বুলভার আর পনেরো মিটার দূরে। সামনের ট্র্যাফিক লাইটের কাছে গিয়ে থামলো মড়ার খুলি আর নেলি। কিশোররাও থেমে গেল। গাড়ি আসার অপেক্ষা করছে।
পাশে এসে দাঁড়ালো গাড়ি। ওঠার জন্যে পেছনের দরজা খুললো কিশোর।
এই সময় দ্রুত, প্রায় একই সঙ্গে ঘটে গেল কয়েকটা ঘটনার।
হলিউড বুলভার পেরোতে লাগলো মড়ার খুলি আর নেলি।
লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো রবিন আর কিশোর।
বুলভারের মোড়ের কাছে উদয় হলো একটা হলুদ গাড়ি।
ঝাঁকি দিয়ে আগে বাড়লো লিমুজিন।
জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিলো কিশোর, যাতে নজরে রাখতে পারে মড়ার খুলি আর নেলিকে।
কিন্তু রাখবে কি? দেখাই গেল না ওদের।
ছুটতে শুরু করলো হলুদ গাড়িটা।
পিছু নাও ওটার, হোফারকে কললো কিশোর।
পিছে ছুটতে গেল লিমুজিন। কিন্তু ওই মুহূর্তে ট্রাফিক লাইটের সবুজ আলো পাগল সংঘ নিভে লাল আলো জ্বলে উঠলো। সময়মতো ব্রেক কষলো হোফার। বাঁয়ে মোড় নিয়ে চলে যাচ্ছে হলুদ পাড়িটা। পলকের জন্যে কিশোরের চোখে পড়লো দুটো মুখ, মড়ার খুলি আর নেলি।
মাথা থেকে ক্যাপ খুলে নিয়ে নিরাশ ভঙ্গিতে সীটে হেলান দিলে হোফার। সবুজ আলো জ্বলার অপেক্ষা করছে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে কললো, বোধহয় হারালাম!
সেটা তোমাদের দোষে নয়, সান্ত্বনা দিলো তাকে কিশোর। ব্যাপারটা বুঝতে পারছে। লা পামা আর হলিউড বুলভারের এই মিলনস্থলে হলুদ গাড়িটাকে আসতে বলে দিয়েছিলো নিশ্চয় মড়ার খুলি। গাড়ি এলো। সবুজ আলো নেভার ঠিক আগের ক্ষণে লাফ দিয়ে তাতে উঠে বসেছে দুজনে।
তবে একেবারে বিফল হইনি, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর।
নেলির কথা লহে? রকিন জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। তবে তার চেয়েও জরুরী ব্যাপার হলো হলুদ গাড়িটা। ওটাকে আগেও দেখেছি। কার গাড়ি, জানি।
জানি? মুসার গলায় সন্দেহ।
কার? রবিনের প্রশ্ন
মুভি স্টুডিওর বিজ্ঞাপন ম্যানেজার, শান্তকঠে কালো গোয়েন্দাপ্রধান, হ্যারিস বেকার।
১১
পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো কিশোর। রান্নাঘরে এসে নিজেই ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে নিয়ে নাস্তা সেরে চলে এলো তার ওয়ার্কশপে।
দিনটা মেঘলা। জোরে জোরে বাতাস বইছে। কাজ করার আগে একটা তারপুলিন দিয়ে ঘিরে নিতে হলো ওয়ার্কবেঞ্চের চারপাশ। নতুন জিনিসটা দিয়ে আপাতত কোনো কাজ হবে কিনা জানে না, তবু শুরু যখন করেছে শেষ করে ফেলা দরকার, এই ইচ্ছেতেই বসেছে। ক্যামেরাটার নাম দেবে সে গোয়েন্দা ক্যামেরা। সংক্ষেপে গা্যো। কাজ প্রাতে বসলো আরও একটা কারণে, এরকম কাজের সময় তার মাথা খোলে ভালো, চিন্তাশক্তি বাড়ে।
হাত জোড়া দিচ্ছে একের পর এক খুদে যন্ত্রপাতি, আর মগজ জোড়া দিচ্ছে রূপালি-কাপ-চুরি রহস্যের ছেঁড়া সূত্রগুলো।
বেশ কিছু সূত্র জোড়া দেয়া যাচ্ছে না। ভারিপদর কথাই ধরা যাক। টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিল্ডিঙে ঢুকেই কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলো? নির্দিষ্ট সময়ের দুই ঘন্টা আগে এলো। লিফট করে উঠে গেল, কিন্তু সতেরো তলায় নয়। পাঁচ মিনিট পর নেমে এলে আবার লবিতে।
ওই পাঁচ মিনিট কিকরেছে সে? কারও অফিসে দেখা করেছে?
কার সঙ্গে?
আর হ্যারিস বেকারের ব্যাপারটাই বা কি? রাতের বেলা হলিউড বুলভারের মোড় থেকে নেলি আর মড়ার খুলিকে তুলে নেয়ার তার কি দরকার পড়লো?
দুজনকে হোটেলে ডিনার খাওয়াতে নিয়ে গেল? মনে হয় না। মড়ার খুলির সঙ্গে হ্যারিসের যা সম্পর্ক দেখা গেছে, তাতে খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা নয়। আর নিলোই যদি, সরাসরি ম্যাগনোলিয়া আর্মস থেকে ওদেরকে তুলে নিলো না কেন ব্যারিস?